মেয়েটির চোখে বিষ্ময় অপার!
জেএফকের বিশালত্বের আবীর দেখে,
সুশীল আংকেলের অদ্ভুত ড্রাউভিং আর
রিচমন্ড হিলের ছোট্ট মন্দিরটি দেখে,
সিঁড়ি বেয়ে উঠে শিখা আন্টির মমতার হাসি
সবশেষে একশ সাতাশ স্ট্রীটের অন্ধকারে ঠাসি।


চোখ বড় করে আকাশ দেখে ও
জামাইকার ম্যপলগ্রোভ সিমেট্রির সূর্যোদয়,
সাবওয়ে স্টেশনে দাড়িয়ে উৎসুক একটু
হাসে, এত মানুষের কেন ভোরেই উদয়?
ইয়াংকীদের কসরত ট্রেনের ভিতর
দুই কালো-সাদা মিলে মিউজিকের তালে
অপার্থিব নাচন হাতল আর রড ধরে।


হাঁটতে ভালই লাগে মেয়েটির
ঈষৎ নোংরা রাস্তায় সাথে নাঈম আংকেল
এভিনিউ আর স্ট্রিটের গোলকধাঁধাঁয়,
কুইন্সের রুক্ষ দালান পার করে
ইস্ট রিভারের পূর্ব পারে
কুইনসব্রো পার্কের সবুজে জুতো খুলে
তাকায় ম্যানহাটন স্কাইলাইন মূলে।


মেয়েটির কুঁচকানো কপাল হঠাৎই
কোথায় রকফেলার সেন্টার?
থাকার কথা এখানেই, স্টেশনের বাইরে।
ফিফথ এভিনিউ ধরে মানুষের মিছিলে
কত রঙের কত বর্ণের! বিচিত্র ভঙ্গিতে!
চিলি-ফ্লেক দিয়ে স্লাইস করা পাকা আম
হতবাক মেয়েটি কাঁটা চামচ দেয় ফেলে
হাতের ব্যবহার শিশুকাল ধরে মেলে।


জনতার ভিড়ই ঠেলে এগিয়ে নেয়
যেন মেয়েটির সামনে কত তাড়া
এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ছাদে খাড়া
ভাবে, স্পাইডারম্যান কতই না লাকি
নিউ ইয়র্ক না থাকলে কীভাবে দিত ফাকি?
এফ আর খানকেও আংকেল ডেকে নেয়
কোনদিন দেখেনি তাও গর্বে ভরে বুক
উনি যে বাংলাদেশী!


ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনের বিভিন্ন চত্বর
সাথে পেন স্টেশনের ব্যস্ততা বিস্তর,
মেয়েটি দেখে আগ্রহ ভরে
গ্রান্ড সেন্ট্রালের বিশাল স্থাপত্য মুগ্ধ করে,
ভাল লাগে ইউএন বিল্ডিয়ের ভ্রাতৃত্ব
বাংলাদেশের পতাকাটা দেখার বড় শখ ছিল
সেন্ট্রাল পার্কের বেঞ্চিতে বসে আয়েশ করে
বুলোয় দু’চোখ সবুজে আর রঙিনে।


মেয়েটি সেখানে চুপিচুপি বলে
কানিজ আংকেল ডুবে আছে মায়ার জলে
জ্যাকসন হাইটস বাঙ্গালীতে সাজে
আগ্রহে ডুবে যায় ডালপুরী-মোগলাই মাঝে
চটপটির ঝাল আর টক অতঃপর
রসগোল্লার রসে সিক্ত হয়ে দীর্ঘ চুমুকে দুধ-চা
জটলা বড় হতে থাকে সহসাই
বাংলায় বাহাস করে চোয়াল ব্যথা নিশ্চয়ই।


আবার সেই টয়োটা করোল্লা
সাথে নিয়ে আসা সদ্য-বানানো ঝালমুড়ি
টাইমস স্কোয়ার ঝালে-গন্ধে গড়াগড়ি,
নিয়ন আলোর ঝলকানি ব্রডওয়ে ধরে
এসে থামে ব্রুকলিন ব্রিজের আধারে,
মুক্ত বাতাসে হাফ ছাড়ে
বড় বড় মায়াবী চোখের দৃষ্টি দূরে
হাডসন বে ছাড়িয়ে নিউ জার্সির ’পরে।


মেয়েটি পানি দেখে
সুবিশাল অতলান্তিকের লবনাক্ততা চাখে,
স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের ফেরিতে চঞ্চল
ত্রস্ত দৃষ্টি এদিক-ওদিক-সেদিক প্রাঞ্জল,
দীপা খালামনির ছোট্ট বাসা
তার চেয়েও ছোট্ট দুরন্ত সুন্দর জায়ন
নৈসর্গের সবটুকু সৌন্দর্য ঐ ছোট্ট মুখে
হুটুপুটি-খুনসুটির বাঁধ মানে কে?


স্ট্যাচু অব লিবার্টি ফ্রান্সের উপহার
সবুজ লনে পা দিয়ে মেয়েটি তাই ভাবে
পলক ফেলা হারিয়ে যায় বিশালত্বের আভে,
ব্যাটারী পার্কের সবুজ লনে আলগোছে
দু’পা ছড়িয়ে বসে দু’দন্ড সুখের ভাজে,
টুইন টাওয়ার ধ্বংসের নিষ্ঠুরতায়
কান্না হয়ে ঝরে পড়ে জলের ধারায়
মৃতের নাম আর পড়ন্ত জল
মিশে একাকার ছোট্ট মনের কুঠরে।


মেয়েটি রাগী ষাড়ের মুর্তিটা পেরোয়
অনিচ্ছায় এগোয় ব্রডওয়ে ধরে ধীরে
ওয়াল স্ট্রিটের ফুটপাতে পা ছড়িয়ে,
জাইরো আর চিকেন উইংস মুখে
গ্রোগ্রাসে গিলে আর অলস চোখে
ডাউ জোন্স ইনডেক্স, ট্রাম্প বিল্ডিং দেখে
আমেরিকান অর্থ-যাদুঘর টানে না ওকে
আগ্রহ কোণার কাছের ট্রিনিটি চার্চটি
দূরের দৃষ্টি ছাড়ানো সবুজ লনটি।


মিডটাউন টানেল পার হয়
রাতের অন্ধকার ভেসে যায় আলোর বন্যায়,
সাবওয়ে ধরে দূরে কনি আইল্যান্ডে।
তপ্ত বালুতে শুয়ে থাকা প্রায়-নগ্ন নরনারী
সৈকতের স্নিগ্ধ বাতাস পরশ বুলায়,
মুখে সিগারেট আর বড়শির ছিপ হাতে
ভাললাগার দৃশ্যে স্টিপলিচেজ পিয়ের মাতে
মাছের রূপালী ঝিলিক মুগ্ধ তাতে।


অতঃপর ছাড়িয়ে কংক্রিটের জঙ্গল
হাসফাস মেয়েটি মুক্ত-দিগন্তের পানে ছোটে
নিউ জার্সি পেনসিলভ্যানিয়া মেরিল্যান্ড ধরে
ডেলাওয়ারে যাত্রাবিরতি করে ভার্জিনিয়া,
পণ করেছে আর কোনদিন
মাড়াবে না এপথ ভুলক্রমেও,
না-ঘুমানো ব্যস্ত নগরী
আশি লক্ষ তলাবিশিষ্ট দালানকোঠা আর
নিউ ইয়র্কের বয়ে চলা জনসমূদ্রের
কোন ক্ষুদ্র কোণায়ও।