রাত্রির স্তব্ধতায় আমি এক নাম উচ্চারণ করি,
পৃথিবী।
তার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে,
কোয়াটলিকুয়ে,
অ্যাজটেক বনভূমির অতল থেকে।
সে বলে,
“আমি মা, আমি প্রেমিকা, আমি মৃত্যু।”
আমি ধীরে বলি,
তুমি কি তবে আমার জন্মের আলো ও অন্তিম ছায়া?
এরপর আসে ফ্রেয়া,
নর্স কুয়াশার অন্তরালে
তার নেকলেসে দীপ্ত যুদ্ধজ্যোতি।
সে ফিসফিস করে
“প্রেম মানে মৃত্যু,
আর মৃত্যু মানে বিজয়ের ফুল।”
আমি জিজ্ঞাসি
তুমি কি তবে আমার ঘুমহীন সকাল?
গ্রিক দ্বীপভূমি থেকে উদিত হয় হেলেন,
সমুদ্রের ঢেউয়ে ভাঙে পুরাকালের নীরবতা।
সে বলে,
“প্রেম নয়, পুরুষের দম্ভেই জ্বলে ট্রয়।”
আমি চোখে চোখ রাখি
তুমি কি তবে আমার অহংকারের প্রতিমা?
মিসরের সোনালি বালুতে ফিরে আসে ক্লিওপেট্রা,
চোখে বিষাক্ত কাজল, ঠোঁটে পেতলের প্রতিশ্রুতি।
সে বলে,
“প্রেমিক যদি রোমান হয়,
তবু তাকে বিষ পানে বিদায় দিতে হয়।”
আমি কাঁপা কণ্ঠে বলি,
তুমি কি তবে আমার শেষ চুম্বন?
ভারতের গগনে দ্রৌপদী দাঁড়িয়ে,
পাঁচ জন পুরুষ, অথচ একক তার সংসার।
সে বলে,
“আমার লজ্জা ছিল একটি বস্ত্রে,
জন্মেছিলাম আগুন থেকে,
তৃষ্ণা ছিল ন্যায়ের।”
আমি বলি,
তুমি কি তবে আমার চিরন্তন চিতার গোপন ভাষ্য?
রামায়ণের অরণ্যে উচ্চারণ করে সীতা,
“অগ্নি আমাকে বারবার পরীক্ষা নেয়,
তবু আমি প্রেমিকা,
যদিও তোমার জঙ্গলে নিঃসঙ্গ হাঁটি।”
আমি প্রতিধ্বনি করি
তুমি কি তবে আমার অনন্ত প্রতীক্ষা?
সবশেষে, জাপানের শিন্তো দেবী আমেতারাসু,
আলোর পর্দা সরিয়ে জানিয়ে দেন
“প্রেম মানে প্রকাশ,
আর লজ্জা মানে চিরকালীন অন্ধকার।”
আমি চোখ বন্ধ করে বলি
তুমি কি তবে আমার উন্মোচিত দিবালোক?
এভাবেই আমার প্রেমিকারা
প্রাচীন সভ্যতা থেকে আধুনিক মিথ পর্যন্ত
এক একেকটি মহাদেশ,
এক একেকটি আলোকচিত্র,
ইতিহাসের নিঃশব্দ প্রতিচ্ছবি।
তারা ফিরে আসে,
তাদের প্রতিটি নীরবতা
আমি জ্যোৎস্না বলি।
আমি প্রেমিক,
যার হৃদয়ে একত্রে বাস করে
কোয়াটলিকুয়ে, ফ্রেয়া, হেলেন, ক্লিওপেট্রা, দ্রৌপদী, সীতা, আমেতারাসু
ও আরও অনেকে।
তারা কেউই কেবল একজন নয়
তারা সম্মিলিত এক বিশ্ব, এক সত্তা।
তারা সকলে মিলেই
আমার একমাত্র প্রেমিকা
যার নাম, পৃথিবী।