এই সেই বাতাবিলেবুর গাছ আর ঝোপঝাড় ।
এই সেই মাঝি মহল্লার নৌকা জলের বিহার ।
এই সেই মেহেদী গাছের জায়গার রক্তের কিনার ।
এই সেই বাঁশবনের মেলা শক্ত হাতিয়ার ।
এই সেই নবদিগন্তে উঠা সূর্যের সমাহার ।
এই সেই বিজয়ের জয়গান যুদ্ধের আহার ।
এই সেই !
এই হলো আমি-শহীদ মিনার ।


ঐতিহাসিক ঐতিহ্যবাহী এই সেই উঠান আর ঘর ।
সদ্য নব বিবাহিত বোনের বিয়ের এই সেই বাসর ।
কালজয়ী ইতিহাস খ্যাত এই সেই মাঠ আর রক্তে মাখা প্রান্তর ।
স্বাক্ষী কাশফুল কাশবন আর কচুরিপানার সমাহার ।
মেঠোপথ মাটি ঘাসফড়িং আর ঘাসফুলের আবৃত্তির হাহাকার ।
মসজিদের আযান বাউলের গান এখনও করছে নির্বিচারে চিৎকার ।
এই সেই !
এই হলো আমি- শহীদ মিনার।


বৃদ্ধার হাতের এই সেই রণক্ষেত্রের লাঠি ।
পরিকল্পনা-আলোচনার মধ্যমণি এই সেই বিখ্যাত পাটি ।
ডাক হরকড়ার সাহসী শ্লোগানের নিভু নিভু হ্যারিকেন আর বাতি।
রেডিওর আবছা আবছা অগোছালো সতর্কের শব্দের গতি ।
তৃপ্তি মেটানো পানির পিপাসার হাহাকার আর জ্বালাময়ী শক্ত রুটি ।
নৌকার ঘাটের বালুরমাঠে রক্ত মাখা স্মৃতি এই সেই চটি ।
এই সেই !
এই হলো আমি -শহীদ মিনার ।


পূর্ব পাড়ার মানছু ফকিরের রাতবিরেতের হুঁশিয়ারি সংকেত ।
পাগল ছদ্মবেশে থাকা মিকি কাকুর সতর্ক করা ঢোলের শব্দের কুপোকাত ।
পাক-হানাদার বাহিনীর গোপন সংবাদ নিতে ঠ্যাং ভাঙা বেশে বসে থাকা মিকুর পাঁয়তারার সূত্রপাত।
নারায়ণন চন্দ্রের ভিন্ন কৌশল কায়দার প্রশিক্ষণের অস্ত্র হাত ।
১২ বছরের সেতুর জীবন বিপন্ন পাক হানাদারদের নজরদারির খোঁজ খবরের খাত ।
মেজদিদির সাহসী বুকে অন্ধকারে মাঝ রাত্রিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সাক্ষাত ।
এই সেই !
এই হলো আমি-শহীদ মিনার ।


মাতৃত্বের বন্ধনের শেষটুকু সম্পদের সমাপ্তে যুবকের মাতৃহারা ।
চোখের অশ্রুগ্রন্থিগুলি প্রানের প্রবন্ধগুলি হার মানে পিতার পূত্রহারা ।
শিক্ষকের সাহসী বক্তৃতায় দেশ মাতৃকার সকল পরতে পরতে তীব্র পাহাড়া ।
মাতবর ,মুনসীর গোপনে গোছালো গর্তের অস্ত্র গুলি সমহারে বন্টন করা ।
মায়ের অশ্রুবাড়ির রং দিয়ে লেখা চিঠি চিরকুটে মাতৃভাষার আবদার করা ।
ঘন কুয়াশার ছায়াতলে শান্ত পশুর সতর্কিত লাফালাফি করা ।
এই সেই !
এই হলো আমি -শহীদ মিনার ।


আমি শহীদ মিনার ।
গেঁথে আছি সকল ভক্তের মন অলিগলিতে ।
মিশে আছি প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর গুলিতে ।
ডুবে আছি ভাষা শহীদদের স্মৃতির সম্মানেতে ।
বেঁধে আছি সকল শহীদদের মৃত্যুর পরতে পরতে ।
রয়ে আছি মাতৃভাষায় শহীদ হওয়া সকল নিবেদিত প্রানের তরীতে ।
সয়ে আছি সকল যোদ্ধা ভাষার সৈনিকের অকালে মৃত্যুর অপমানেতে ।
এই সেই !
এই হলো আমি -শহীদ মিনার ।


আমি শহীদ মিনার ।
আমার জন্ম সেখানে যেখানে যেকারণে যে অবস্থায় আজ মাতৃভাষা পেয়েছি ।
আমার জন্ম সেখানে যেখানে সালাম ,বরকত,,রফিক ও জব্বারের শহীদ হওয়া গুলির শব্দ শুনেছি।
আমার জন্ম সেখানে যেখানে ধর্ষিত বোনের কান্নার শব্দে অশ্রুশিক্ত হয়েছি ।
আমার জন্ম সেখানে যেখানে শহীদদের রক্ত মাংসের দূগন্ধের স্তূপ দেখেছি ।
আমার জন্ম সেখানে যেখানে উলঙ্গ যুবক যুবতীর মরদেহের উপর হেঁটেছি ।
আমার জন্ম সেখানে কান্নারত মায়ের মৃত্যুর খবর পত্রতে পেয়েছি ।
আমি শহীদ মিনার ।
আজ আমি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছি ।
ছিনিয়ে এনেছি ,অর্জনের গর্বে গর্বিত হয়েছি ।
রক্ত রাঙানো ভাইয়ের গান গাইছি ।
অ আ ক খ এখানে ওখানে দেয়ালে সরকারি ভাবে লিখছি ।
শহীদদের স্মরণে খুব ভোরে সকল শ্রেণীর মানুষ একত্রিত হচ্ছি ।
বিশ্বকে জানান দিচ্ছি ,আমার ভাষা ফিরে পেয়েছি ।
এই সেই !
এই হলো আমি -শহীদ মিনার ।