আমারে নিয়ে চলো সেই দেশ পানে,
যেখানে রাত্রি-অন্ধকার- ঘুমের স্বপ্ন শেষ হলে পরে-
মন ও মানবের উদ্যমের শুশ্রূষায় মাতৃ-মমতায় ফিরে চায় বিশ্বধরিত্রী তার সূর্যরূপ পূর্বদিগন্তী চোখ তুলে-
শুভ্র-অপলক চকিত দৃষ্টে- রৌদ্রকরোজ্জ্বল-কায়ে ঝিকমিকিয়ে উঠে যার, চির-সবুজের সনাতন-রূপ- শস্যশ্যামল মুক্ত-সংসার;
মেছো ইঁদুরেরা যেথা গড়িয়াছে স্বতন্ত্র জীবন,
মানুষের সাথে যাদের নেইকো পরিচয়
অথবা সকল সৃষ্টির একটাই আদিরূপ- পূর্বপুরুষ চিনে ল'য়ে, যেভাবে পৃথিবীর বিচ্ছিন্নবাসী মানবভ্রাতাবোন
তাদের বয়োবৃদ্ধ পিতামাতা-আত্মীয়-পরিজনকে রেখে অন্যত্রে চলে যায়, ঘর বাধে ফের- অন্যকোনো মানষিক  তাড়নায়,- স্থান থেকে স্থানান্তরিত হয়ে ফিরে;
তারচেয়েও ঢেড় অলঙ্ঘ্য দূরত্বে-
জীবনের সহায়ক ঐ নীলিমাকে অবিভাবকের মতো জেনে, তাহার ছায়ার পাশে শুভংকর নির্জনতায় তাহারাও বাঁচে, আমাদের দূর-দূরস্থ সহোদরের মতো;-নিজস্ব আশ্রয়ে।
যেখানে বসুধার অনুপম সৃষ্টি- নিসর্গ শব্দ
করে করে ফিরে, পাখিরা কথা কয় মানুষের সাথে।

আমারে নিয়ে চলো সেই দেশ পানে,
যেখানে কুয়াশার মাঠ- নির্জন ঘাসের উপর শুয়ে রয় পাড়াগাঁর রূপসী মেয়েরা;- শালিকের মতো ব্যাকুলতা ল’য়ে, আকাঙ্ক্ষার নামরূপ একটি চলমান নক্ষত্রকে ধরে রেখে, এক-আকাশ শান্তি স্বপ্ন আলোকে- জনমানবিক সান্ত্বনায়,
দারুণ সুখে উল্লাসে উৎসাহে কেটে যায় যাদের জীবন! ওইসব ব্যপ্ত অনুভব চেতনার উদ্রেক- প্রেমের প্রেরণা থেকে মানুষের প্রমোদিত মন,
মরণের থেকে পায় যদি দুদণ্ড অবসর বেশি-
সঞ্চারিত করে আরও একতিল বাচিঁবার আশা,
তবে প্রাণ যার পেটের সন্তান-
সেই মহতীর দেহ হতে ধবল দুধের স্বাদ অথবা তাহার-বিচিত্র-নীলাভ-সবুজের চিরজীবী সুধা পিয়ে সময়ের পথে- জীবন আমাদের হবে চির অফুরান।

হে সংকল্প- হে আমার মরমি মনোরথ-
পাষাণের বন্ধনী খুলে- এই জনাকীর্ণতার হট্টগোলে- বদ্ধকালা নিঃসহায় নগরী'র সদর দুয়ার টুটে,
আমারে নিয়ে চলো সেই দেশ পানে-
যেখানে নতুন সূর্যের অনুভবে- সারারাত নরম-নদী গান গায় নক্ষত্রের তলে- জলপোকা, মাছ ও শামুকের জীবন পায় বাঁচার মতো নির্জনতা;-
আমারে নিয়ে চলো সেই দেশ পানে।