হে আমার স্মৃতি, অবসরে বেদনা জাগানো বঁধু!
যার সনে জীবন গড়েছে নিবিড়-নিভৃত বাসর;
হৃদি-শয্যাপাশে তুমি হে অতন্দ্র মৌন, দিনরাত্রি শুধু
যাতনার পানপাত্র চুমিয়ে যুবা হৃদয় বিষাতে হলে উদ্যত।
হে আমার স্মৃতি, অবসরে বেদনা জাগানো বঁধু!
জীবন আর যৌবন কি চিরকাল থাকে বাকি?
কামুকী স্রোতস্বিনীর মতো তবু কি ক্ষিপ্ত-হিল্লোলে উত্তাল হয়ে ছোটো, হৃদয়-সমুদ্র ভেঙে ঈপ্সিত সেই বেদনারে আনো ডাকি!


হে আমার স্মৃতি, বিনিদ্র রাতের গোপন প্রিয়ার এস্ত-চঞ্চল আঁখি;
উদ্যতে যে নড়েচড়ে- চিতের গহন-দ্বারে
ক্ষমাহীন দৃষ্টিতে ফিরে চায় বারে বারে,-
থেঁতলানো আকুতিটা নোনাজলে ঢাকি।
হে আমার স্মৃতি, আজব্দি সঞ্চিত যতো অনুভব-অনুভূতি,
যাদের স্বতন্ত্র দেহ হতে ঝরতে দেখেছি উষ্ণ রক্ত,- ক্ষতের আরতি,
সয়ে গেছে সব; সুখদুঃখ-বোধের ব্যঞ্জনাবহ এইসব মূর্ত-শরীর, তবু অন্তহীন উৎসাহে জেগে রয়, কথা কয় পরস্পর তারা নিবিড় সঙ্গিনীর মতো!


হে আমার স্মৃতি, আমার মৃত পিতার মুখোমুখি বসিবার ক্ষণ
অথবা তার মূক-নিশ্চুপ ব্যাথাতুর মুখের মতন,
ক্লান্ত মায়াবী- দৃশ্যে উজ্জ্বল জোছনা-বধির রাত;-
মুহূর্তের ফুরসতে মরণের স্পর্শজাত যন্ত্রণা- চাপা কান্নার মতো জাগায় যে স্ফুরণ, তার তরে- তাহার তরে নিমজ্জন অনিবার্য জেনেও
তবু ব্যাথার সম্মোহনে করে-নাকো কর্ণপাত!
হে আমার স্মৃতি, সময়-অসময়-রাতবিরেতের বেদনা জাগানিয়া স্মৃতি- এবার নিবৃত্ত হও, ক্ষান্ত হও, উদ্ধতে আর করোনা দৃষ্টিপাত।।