অনেক সংগ্রাম করে জীবনে বেঁচে থাকতে হয়। এই জীবন সংগ্রামে মানুষ নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন। যারা জীবনে সম্মুখ যুদ্ধে  টিকে যান। তারা এক সময়ে সুখ উপভোগ করে। তাদের দুঃখ যন্ত্রণা হৃদ পিন্ডে একসূত্রে গাঁথা থাকে। সেই যন্ত্রণা সারা জীবনে চলার পথে মনে তাড়া করে। এমন বেড়া জালে আবদ্ধ মানুষটি নানামুখী যন্ত্রণায় ভোগে। একসময় গতিপথ হারায়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।
সৌরভ বেশ কষ্টে নিজের লেখা পড়া করে। গ্রামের একর মুর্খ পরিবারে যেন গোবরে পদ্ম ফুল। নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে। বয়সে ছোট হলেও তার মার্জিত ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ। তাই সমাজের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিদের সংগে চলা ফেরা করে। সাদা-সিধে মনা এক দূরন্ত কিশোর।  নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যাশা। যা সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মনে নাড়া দেয়। সে এলাকার যুব সমাজের মাঝে এক বিরল দৃষ্টান্ত। তার নানামুখী সামাজিক কাজ সবার কাছে প্রশংসনীয়। সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। নিজের সাধ্যমত গরীব-দুখী, নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সাধ্যমত অসহায় মানুষের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এসব গুণাবলী জন্য প্রায় দিনে মানুষ তার কাছে ছুটে আসে। সে নিজের বুদ্ধি বিবেক খাটিয়ে মানুষকে সঠিক পরামর্শ দেন। একারণে সমাজে সব পেশার মানুষের ভালবাসায় সিক্ত। নিজে শত অভাব অনটনের মাঝেও ভাল মানুষের দলে চলাফেরা করে। কখনো তার কষ্টের জীবন যাপন বুঝতে দিত না। অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল ছিল না। কিন্তু তার মনটা অনেক বড় মাপের ছিল। শৈশবে কষ্ট হলেও যুবক বয়সে কিছুটা সুখের পরশ পেয়েছিল।
এখন হাসি-খুশি ভরা প্রাণ চাঞ্চল্য উদ্যমী এক যুবক। তার পর হিতকর গুণাবলী বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। যখন তার বয়স ত্রিশ বছরে পৌছাল। অর্থাৎ জীবন গড়ার মুখ্য সময়। তখন জীবনানন্দ এক পেত আত্মা সব লন্ডভন্ড করে দিল। সুখের জীবনে শুরু হল তীব্র যন্ত্রণা। এখানে যেন জীবন স্বপ্ন হোঁচট খেল।
সৌরভ এখন জীবন যুদ্ধের সম্মুখীন। এই যুদ্ধে কিভাবে জয়ী হবে? কিভাবে পাবে এর সমাধান। যা সমুদ্রে তীরে আছড়ে পড়া ঢেউ। যখন প্রাণে আঘাত হানে তখন খুব নিশ্চুপ হয়ে পড়ে। জীবনের সব আশা আকাঙ্ক্ষার কথা ভুলে যায়। ভবিষ্যৎ জীবন গড়ার ময়দানে হামাগুঁড়ি খাচ্ছে। কিভাবে সোঁজা হয়ে দাঁড়াবে..? সেই সুখের  জীবন আর কী ফিরে পাবে?
এবার সে অভিভাবক মহলের প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল। আমি এখন কী করব? সবার সান্ত¦নার বাণী তোমার একটি বাড়ি আছে, ব্যবসা আছে, গাড়ী আছে, সমাজে বেশ সুনাম আছে। এমন কী নাই তোমার.? সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তা তোমাকে সুস্থ রেখেছে। কী কারণে তুমি নিজেকে এতটা খাটো করে দেখ। তোমার মাথাটা নষ্ট করে দিয়েছে। তুমি মনে রাখ; তুমি ছোট ঘরে বন্ধু করকে। তবে আজীবন সম্মান পাবে। এক প্রতারকের ফাঁদে পড়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনছ!
সৌরভ রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ল। হাতে টাকা-পয়সার অভাব। তার মনের অবস্থাও ভাল নাই। দিন দিন ব্যবসায় অবনতি হল। একদিন মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। এখন কী করব; চাকরী না ব্যবসা? আমি কী এই জীবন যুদ্ধে হেরে যাব। এসব চিন্তুায় বিছানার এপাশ-ওপাশ করে রাত পোহাল। সকালে নিজেকে সামলে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হল। সুন্দর হাস্য উজ্জ্বল মুখটি যেন মনঃকষ্ট মনিল। এভাবে পথ চলতে দেখে অনেকে রোগাটে মন করল। তার সুখের লগনে-দুখের অনল জ্বলে উঠল। #