দেখো রাত কত ঘন হয়েছে
ঝিঁঝিঁ ডাকছে অবিশ্রান্ত।
আকাশে একটি চাঁদ,পূর্ণ চাঁদ
যানবাহন আর সড়কের বিবাদ
কেউ আর আওয়াজ করছেনা।
দেখো রাত কত ঘন হয়েছে
পাখিরা সবাই প্রগাঢ় নিদ্রায়।
আমাদের বাড়িটির বারান্দায়
চাঁদের আলো এসে পরে টবের ওপর
একটি ঘৃত কাঞ্চন বৃক্ষ দেখা যায়
একটি ছোট এলাচির গাছ
পাশে জোনাকিদের আলোক নাঁচ।
আমাদের ঘরে আলো নেই-
বিদ্যুৎ আমি সড়িয়ে ফেলেছি।
প্রাচীনের স্বাদ আমার ভালো লাগে।
থাকবেনা বৈদ্যুতিক বাতি,পাখা কোনোকিছু।
আমি প্রতিদিন আমাদের বাড়ির সমূখের বিশাল জঙ্গলটিতে-
খড়ি কুড়োতে যাই।
তুমি উনুনের তাপে,প্রতিদিন দু প্রকারের খাবার করো।
শুধু দুজনার ভাত, ডাল-আলুর ভর্তা।
আমি যখন ঐ গ্রামে গিয়ে,গাভীটির দুধ বিক্রয় করে আসি-
সাথে করে নিয়ে আসি,তোমার জন্য একটি গোলাপ ফুল।
তাতেই আমি আজীবণ দেখেছি তুমি আমোদে বিষম মশগুল।
আমি সেই জোনাকিদের আলো সঙ্গ করে বারান্দায়-
বাঁশের বাতার বেড়া সঙ্গ করে দাঁড়িয়ে আছি।
তুমি এসে দাড়ালে,আমার আড়ালে।
কানে বললে- “কাল একটা শাড়ি এনে দেবে?”
আমি বললাম- “কেন এ নতুন সাজ?”
তুমি বললে- “এত বছর খড়ি কুড়োনোর পর,যখন বাসায় ফিরেছো,
এ গ্রাম,ও গ্রামে তোমার গাভীর যখন বেজায় নামডাক।
খুশি হয়ে তুমি এসেছো যখন বাড়ির সমূখ-
সর্বদা শুধু দেখেছো এসে বধুর মলিন মূখ।
তুমি বললে- “কাল একটা শাড়ি এনে দেবে?”
আমি হেঁসে বললাম- “এনে দেবো।”
আমার পাশে গো মূখে হাঁসির রেখা এঁকে
তুমি এসে দাড়ালে আমার আড়াল থেকে।
তুমি বললে- “ঝিঁ ঝিঁ ডাকে কেন?”
আমি হেঁসে বললাম- “ঝিঁ ঝিঁ ডাকে না,এ তো তার ডানার আওয়াজ।”
তুমি চিন্তিত হয়ে বললে- “রাতে ঝিঁ ঝিঁ আওয়াজ করে কেন?”
আমি বললাম- “সঙ্গীকে কাছে পেতে চায় বলে।”
তুমি তামাশা মনে করলে,বললে- “তা কী কখনও হয়?
পতঙ্গ তো আর মানুষ নয়!”
আমি যখন আওয়াজ করে হেঁসে উঠলাম তোমার কথা শুনে-
তুমি অপমানিত হয়ে আমার মূখ চেপে ধরলে।
আমি বললাম- “ আওয়াজ করে,
তোমার হাতের পরশ পাবার আমার যে অভিপ্রায়-
ঝিঁঝিঁ ও আওয়াজ করে সঙ্গীরে কাছে চায়।”
আমাদের পতঙ্গ গবেষণার পর,
সিদ্ধান্ত আসলো আজ রাত্রি ভর-
শুধু আলাপ হবে,শুধুই আলাপ।
কিছুদিন চরম বৃষ্টি হয়েছে,আজ আকাশ পরিষ্কার।
খানিক পর রাত্রের হীম বায়ূ ভেসে আমাদের শিহরণ দিয়ে গেল।
তুমি ঘর থেকে দুইটি শাল আনার মত ভুল করলে।
আমি একটি শাল রেখে দিয়ে,দুজনে জড়িয়ে গেলাম একটি শালে।
দেখো রাত কত ঘন হয়েছে-
চারিধার নিশ্চুপ,আছে শুধু তোমার প্রশ্ন।
চাঁদের আলো এসে পরেছে বারান্দায়,
এলাচি আর ঘৃতকাঞ্চন বৃক্ষের পর
আলো এসে দেখায় মোরে তোমার চক্ষু-অধর।
তখন প্রচন্ড রাত-
আমার হাতে জড়িয়ে রেখেছি তোমার দক্ষিণ হাত
একটি শালের ভিতর।
পাশ থেকে ডেকে ডেকে ওঠে পোষা কবুতর।
তুমি বললে- “দেখো,ওরা আমাদের মত ঘুমাইনি!”
“কারা? কবুতর?”
ওদের ঘুম বুঝি ভেঙে দেয় এসে চঁন্দ্রকর।
আমি আনাড়ির মত করে বললাম- “তোমায় আমি ভালোবাসি।
এর চেয়ে ভালো করে বলার উপায় জানা নেই বলে-
তুমি তবু ভালোবাসা নিয়ে নিলে।
বিনিময়ে দিলে শুধু আঁখির রস-
লেহ্য ভেবে,আমার আখি দ্বারা তা লভে নিলাম।
আমি অনুতপ্ত সুরে বললাম তোমায়- “আমাদের জীবণ কী খুব কষ্টের?”
যেখানে নেই কোনো আহামরি উপাদান,নেই চাওয়া পাওয়া?
তুমি বললে- “আমার হাঁসি কী মিথ্যা মনে হয়?”
আমি বললাম- “মিথ্যাকে লুকিয়ে রাখার প্রতিভা যদি তোমার থাকে?”
তুমি বললে- “প্রতিভা কে বা লুকিয়ে রাখে? আমি রাখিনা।
সত্যের পর আমার বাস,বিশ্বাস না হলে গাঁয়ে হাত তুলে দেখো।
প্রতিবাদ করি কী না!”
সেদিন চাঁদ আমাদের থেকে খানিক আলো সরিয়ে নিলো-
ভরে গেল আলোতে আমার গৃহ অঙ্গন-
আমি তোমার গাঁয়ে হাত তুলেছিলাম
করে এক দীর্ঘ আলিঙ্গন।
দেখো রাত প্রায় হালকা হয়ে আসছে-
তোমার চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে।
ঘুমোতে যাও।
তুমি বললে- “হায়,শেষ হয়ে গেল?
এই না মাত্র এলো?”
আমি বললাম- “দিনের দীর্ঘ কাজ,রাতকে করেছে ভাজ।
তাই পথ হয়েছে অল্প।”
তুমি বললে- “চলো না,আজ এখানেই ঘুমিয়ে যাই?”
অতঃপর,ঘুমিয়ে গেলাম দুজনা,রাতে আমাদের অনেক আলাপের ক্লান্তি।
এক স্নিগ্ধ ক্লান্তি,যা বাকি ছিলো বলা। সব সেই স্বপ্নের মাঝে চলে এলো।
আজান আসলো ভেসে,আমাদের হয়েছে দু ঘন্টার ঘুম।
পরে গেল সারা আকাশে পাখিদের ধুম।
তুমি উঠে গিয়ে,ডাকলে আমায়।
আমি উঠে দেখলাম,আমাদের রাত ফুরিয়ে গিয়েছে।