রোজ রাতে বক্ষের জানালা দিয়ে
নক্ষত্রের ঝকঝকে আলো ঢুকে পড়ে
কল্পনার অবারিত ঘরের অন্তরে।
হাজার হাজার নক্ষত্রকে নিয়ে
আমার সারাটা রাত কাটে।
আমার শর্বরী রচনা করেছে
নক্ষত্রের রাত,নক্ষত্রের খেলা।
নক্ষত্র-পরীরা এখন গভীর ঘুমে মগ্ন
অন্ধ আকাশের বিরাট পালঙ্কে।
দূরের অতীত হাতছানি দিয়ে
এমনের তরে কেমনের ঘোরে
ভরিয়ে রেখেছে গুঞ্জরিত করে
আমার ভেতরে আমিটাকে।
গভীর আবেশে যখন তোমাকে
প্রেম দিয়েছিল মনোহরপুরী
তাবৎ পৃথিবী ভুলে,
কখনো দশটি কখনো সাতটি
কখনো বা হাজার হাজার
নক্ষত্রের দেবী এসে
ভরিয়ে রাখতো আমাদের গৃহ
পরমানন্দের চিরাবেগে।
সময় গিয়েছে রেখে
বেদনার মস্তবড় মহাশূন্য।
মহাশূন্যে বসে ভাবি
দুঃখশূন্য জীবনের গল্প।
চড়ুই পাখির মত বাসা বাঁধতাম
আনন্দ ও বেদনার গোপন ভূবনে।
প্রতি পূর্ণিমানিশিতে
স্নিগ্ধ দীঘির জলের মতো
খেলিতাম খেলা রূপালি আলোতে।
প্রাণের আধার তুমি যে আমার
হারানোর ধন নহে,
তোমাকে হারালে সত্যি সত্যি
মরে যাবো,প্রিয়ে, কেঁদে কেঁদে।
বঙ্কিম চাঁদের মতো হেসে হেসে
রাবারের মতো মুছে দিতো
অবুঝের মতো লিখিত কাঁদন।
কত রাগ ছিল অন্দরমহলে
কথা কাটাকাটি হতো কথাচ্ছলে।
তার প্রাণভরা হাসি শুনে
শীতের মাটির মতো সেই ক্ষণে
ফেটে যেতো রাগের মৃত্তিকা।
গান গেয়েছিল প্রিয়তমা
ভালোবেসে আর ভালোবেসে।
শুনেছি তখন সুদূর পল্লীতে
বেজেছিল গান ঘুমনিয়া কানে।
জোনাকির দ্বীপে, ঝিঝিদের দ্বীপে
দুকোটি বছর বেঁচে ছিলাম আমরা।
প্রতি ভোরবেলা
আমার নরম অন্তঃপুরে রাতভর বসে
ফোটাতো মুরগী প্রভাতের ছানা
মোরগের সনে স্নেহের পরশে।
সুপ্রভাতের সে ছানাগুলো নিয়ে
কেটে যেতো বাকি দিনমান
রুশনিপুরের নন্দনকাননে।
হাটতে হাটতে চলেছিলাম আমরা
অনেক দূরের রূপালি জগতে,
যেখানে দুজনে রাজহাঁস হয়ে
ভেসেছিলাম মায়ায় ঘেরা ছায়াতলে
গোলগাল পুকুরের স্বচ্ছ জলে।
দুই ভূবনের দুটি হাঁস
ফিরে আসতাম যার যার নীড়ে
বিকেল গড়িয়ে সাঝের মায়াবী ক্ষণে।
সময়গুলো অতিযতনে জমা থাক
আমাদের গড়া চিরসবুজের দেশে।
কাটুক সময় তোমার হেমন্তভরা দেশে,
মসলিন কাপড়ের দেশে
রোমান্টিক যুগে কবিতার সাথে।
তুমি এখন শুধুই ইতিহাস
আমার পৃথিবীজুড়ে,
মাঝে মাঝে বহির পাতার মতো
উল্টাবো রঙিন ইতিহাস,
দেখবো নয়নভরে
আমাদের স্বর্ণালী সুখের বিশুদ্ধ চিত্র।
গভীর মনোযোগের সাথে
পড়বো মধুর ইতিহাস,
চোখের পানিতে হয়তো সেদিন
ভিজবে প্রতিটি পাতা।