আমি জন্মাইনি, আমাকে কেঁটে দেওয়া হয়েছে—
স্ক্যাল্পের এক সিঁড়ি থেকে
অস্ফুট চিৎকারে
ঝুলে ছিল একপ্রকার “বেঁচে থাকার লোভ”।
আমি ছিলাম না—
তবুও প্রতিটি আঁচড়ে আমায় ডাকা হতো।
চুলের চিরুনিপথে যে রক্তবর্ণ নৌকা চলে—
তার মাঝি আমি নই, আমি নই
আমি তো প্রহরী,
এক চুলকানিবন্ধু জেগে থাকা মশালের মতো
জন্মাই, গুটাই, গুটিয়ে আবার প্রসারিত হই—
একটা ডিমের অভ্যন্তরে ইতিহাসের গর্ভে।
ডিম?
না, সেগুলো “চুলের চক্রবর্তীর প্রোটোকল”—
চুল-ভবনের গোড়ায়
আমি রেখে আসি ছোটো ছোটো মহাকাব্য,
তাদের ফুটে উঠা মানেই
নতুন এক উপনিবেশের জন্ম!
তারা হয় নিম্ফ,
নিম্ফ হয় “নিম্নতর রাজনীতির প্রজন্ম”,
যাদের মুখে মা-বাবার অভিশাপ,
আদরে বিষাক্ততা!
তুমি ভাবো—
আমরা কেবল কামড়াই?
না, আমাদের কামড়ে জন্ম নেয় যন্ত্রণার দর্শন,
যা কিনা মাথার ভেতরের “আদিম আত্মজৈবনিকতা” জাগায়!
আমরা কামড়াই না,
আমরা স্মরণ করিয়ে দিই—
তোমার ভেতরে এখনো কতগুলো
অসমাপ্ত সভ্যতা ঘুমিয়ে আছে!
আমার যৌবন আসে
তিনবার খোলস পাল্টিয়ে,
প্রতিবার আমি বদলাই
আমার সংকেত, গন্ধ, নৃত্য।
আমি যে চুলে জন্মাইনি,
চুল আমাকে বেছে নিয়েছে তার চিরন্তন ছায়া হিসেবে।
আমার প্রেমিকা তার ডিমগুলো রেখে গেছে
মাথার এমন এক কোণে
যেখানে শব্দেরা আর পৌঁছায় না—
শুধু নিঃশব্দ গর্জন শুনি,
যেমন কেউ “স্মৃতিহীন ভালোবাসা”তে পড়ে চুপ হয়ে যায়।
আকাশ থেকে নামে এক সাদা স্নান—
গন্ধে ওঝার মতো ধারালো,
শ্যাম্পুর নামে এক ঘনঘোর বিপ্লব।
চুলের এক একটি লতিকা
কেঁপে ওঠে সন্ত্রস্ত পাতার মতো।
আমরা মরতে মরতে ভাবি,
“এই কি আমাদের শেষ ‘চুলমিলিটারি’ অভিযান?”
না, শেষ হয় না।
কিছু কিছু উঁকুন ঘুমিয়ে পড়ে
চুলের গহীন গুহায়—
তারা গড়ে তোলে নতুন এক রাজনৈতিক দর্শন:
"চুলে আছি, থাকবো, থাকতেই হবে!"
এবং এইভাবেই—
তোমার শ্যাম্পুতে ঢুকে পড়ে ‘সময়ে প্রতিরোধ’-এর ইশতেহার।
আমরা উঁকুন—
আমরা কবিতাও, বিপ্লবও,
আমরা তোমার মাথার অজানা ব্যথার প্রতীক,
তোমার অবচেতনের গোপন প্রশ্নচিহ্ন।
আমাদের জীবন তুচ্ছ, তবু তুমুল।
আমাদের প্রেম একধরনের
অভ্যন্তরীণ সংক্রমণের সঙ্গীত।
তুমি যদি ভালো করে শোনো—
তোমার মাথার চুলের ভেতরেও
একটি কবিতা ঘুমায়,
একটি রাজনীতি নিঃশব্দে বেড়ে ওঠে,
একটি প্রেম প্রতিদিন কামড়ে ওঠে
তোমার অতীত, ভবিষ্যৎ, এবং এখন—
তাই চুলকানির মাঝে কখনো কখনো
তোমার নিজস্ব উঁকুনকেই চিনে নিও—
সে হয়তো তোমার
অপরিচিত আত্মা।