আমি একটি না-ঘুমনো রাতের ভিতর জন্মাই।
পিছনের অন্ধ গলিপথে হেঁটে আসা ছায়া বলে,
“তুমি কি ঘরকে ভুলে গেছো, না ঘরই তোমাকে ভুলেছে?”
অথচ আমি তখন সুরে মোড়া এক জলপ্রবাহ,
বর্ণহীন, অথচ ঘ্রাণশালী—
তপ্ত চুম্বনের মতো অপ্রত্যাশিত।
স্বপ্নের অবচেতনে, গন্ধক-সন্ধ্যায়—
দিগন্ত এক থেমে যাওয়া ঘড়ির কাঁটার মতো জড়িয়ে থাকে।
আমার ভিতরে একটি পুরাতন শহর বসবাস করে,
যেখানে
জুতা খুলে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে শেকড়হীন সিগন্যালপোস্ট।
এবং
চাঁদের থালা ভর্তি খিচুড়ির পাত্রে
ভাসে অতীতের অলীক স্মৃতি।
এই শহর নয়, এই স্মৃতি নয়,
আমি এক জোড়া ওড়না-হাওয়ায় বাঁধা বাতাস,
শীতল, অথচ জ্বালাময়ী—
যেন ফুলকো কাগজে লিখিত এক অসমাপ্ত প্রেমচিঠি,
যা খুললে জ্বলতে থাকে দীর্ঘশ্বাসের শিরোনাম।
তুমি বুঝবে না,
আমার এক একটি শিরা দিয়ে বয়ে যায়
রঙচটা গ্রাম, ভাঙা স্কুলবেঞ্চ,
অথচ প্রতিটি শব্দ চুইয়ে পড়ে গহ্বরবিহীন মুখে।
কে বলেছে, শেকড় শুধু মাটিতেই জন্মায়?
আমার শেকড় তো এক হারানো কৌতূহলের মূলে,
যেখানে কবিতারা শব্দের আগেই মারা যায়।
ঘরের কোণে কোণে জমে থাকা আলোদের গায়ে
যখন ছুঁয়ে যায় আগুনরঙা ভোর,
তখন পিতার মৃত চোখে ফুটে ওঠে দুধসাদা শালুক,
মায়ের কপালের ভাঁজে বাজে পুরনো লোরির সুর—
এই শহর আমাকে ভালোবাসে না,
তবুও আমি এই শহরের প্রতিটি রিকশা, প্রতিটি পায়ে চলা ভ্যান—
একেকটি চরিত্র, একেকটি আত্মজৈবনিক উপমা।
তুমি যদি কখনও আমাকে আবার পড়ো,
দেখবে আমি আর আমি নেই,
আমি রয়ে গেছি এক দ্বিধাগ্রস্ত ছায়ার নিচে—
যেখানে প্রতিটি মুখ মুখোশ নয়, মুখোশ প্রতিটি মুখ।
জন্ম ও প্রস্থানের মাঝখানে ছিঁড়ে ফেলা এক ল্যান্ডস্কেপ।