কবি, তুমি কবিতার হাতে তুলে দাও—
কার্বাইড, কয়েককোটি সাবমেরিন,
লাল নীল ডিনামাইট আর
কার্তুজ ভরতি রাইফেল, কবিতার হাতে ধনুর্বেদ
তুলে দিয়ে চলুন স্বনির্মিত সুচারু নির্বাসনে।


এখানে নেই গোলাপের ঝোপঝাড়ে নিসর্গের সজীবতা
নেই খয়েরি ডানার সীগাল অথবা
শালিকের মুক্ত আকাশে ওড়াউড়ির নিপট স্বাধীনতা।
নেই কবি নজরুলের কবিতার বারুদমাখা প্রতিবাদ—
কেবল নিরোর বাহারি বাঁশিতে বেজে ওঠে
বাংলাদেশের মানচিত্র; কোটি জনমানুষের আর্তনাদ।


কবি, তুমি কবিতার হাতে তুলে দাও—
মিসাইল, লাখেলাখে মারণাস্ত্র
পাশাপাশি আধুনিক হাইপারসনিক বোমারু বিমান।
গাড়ি ভরতি বেয়োনেট, কবিতার হাতে শানিত ছুরিকা
তুলে দিয়ে চলুন স্বনির্মিত সুচারু নির্বাসনে।


এখানে স্বর্গোদ্যানের ভেতর জ্বলে ওঠে সীতাকুণ্ড
বঙ্গবাজারের নারকীয় অগ্ন্যুৎসব, প্রাচীন পুষ্পোদ্যানে
দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে হিরোশিমা-নাগাসাকির
লেলিহান দাবালনের মতো ভয়ানক থোপেথোপ—
ধ্বংসস্তূপ।
এখানে করাপশনের যাঁতাকলে দিনেদিনে
উইডিবিতে রূপান্তরিত হয়
শহীদ তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা,
হুড়মুড়ে ভেঙেপড়ে রানাপ্লাজা,
নবনির্মিত সেতু, ইমারত ও কালভার্ট।


আমি উনসত্তরের কারাগার থেকে কবি বলছি:
এখানে আধুনিক সিরাজুদ্দৌলারাও নিরাপদ নয়
শিবিরে শিবিরে মীরজাফরের চলতি বিনির্ণয়।
এখানে নিরাপদ নয়— কবি কবিতাও রাষ্ট্র
এখানে পিওর নীতিনৈতিকতারাও আড়ষ্ট।
চারিদিকে বিভীষিকাময় বিধ্বংসের উৎপাত
এখানে নিরাপদ নয়;
কবি নজরুল-জীবনানন্দ-সুকান্ত ও রবীন্দ্রনাথ।


কবি, তুমি কবিতার হাতে তুলে দাও—
ফিস টর্পেডো, টার্কিশ রিভলভার
গ্রেনেড, কয়েকশো এয়ারগান আর
লিওপার্ড ট্যাংক, গাড়ি ভরতি বেয়োনেট।


কার্বাইনের উদ্যত নলের মতো অনড় দাঁড়িয়ে থেকে
কবি, তুমি কবিতার হাতে মহানন্দে ধনুর্বেদ
তুলে দিয়ে চলুন উনসত্তরের প্রাচীন কারাগার অথবা
স্বনির্মিত সুচারু নির্বাসনে— নির্বাসনে। নির্বাসনে।
০৮.০৪.২০২৩