বেশ্যা আমার পরিচয়,
নিষিদ্ধ পল্লীতে করি বাস,
সমাজের কাছে পতিতা,
সবাই করে আমায় উপহাস।
নতুন নতুন পুরুষের সম্মুখে,
প্রত্যহ নিজেকে করি উন্মুক্ত;
হৃদয়ে জমে আছে, বহু ব্যথা,
কোথাও পারিনা, করিতে ব্যক্ত।
জন্ম হতদরিদ্র পিতার ঘরে,
রূপে ছিলেম অনিন্দ্য সুন্দরী;
সবাই বলেছিল, আমার রূপে
হার মেনেছে আকাশের পরী।
জানতাম না, দরিদ্রের ঘরে
সুন্দরীর জন্মানো, অপরাধ!
আমার উপর নজর সবার,
সবাই নিতে চায়, দেহের স্বাদ।
কেউ দেখায় টাকার লোভ,
কেউবা দিতে চায় গয়না;
কেউ দিতে চায় দামী কাপড়,
বিনিময়ে আমার দেহখানা।
মাতবর পুত্র চালাক ভারী,
ভালবেসে বিয়ে করতে চান;
ষোল বছরের কিশোরী আমি,
পাতানো ফাঁদে বিকালাম মান।
ভবিষ্যত্ সুখ স্বপ্নে বিভোর,
দু'জনে বাঁধিব সুখের ঘর;
রাতের আঁধারে দিলেম পারি,
হাত দু' খানা ধরে তার।
তুলল নিয়ে, হোটেলে আমায়,
বিয়ে হবে, নিশি হলে অবসান;
এই আশ্বাসে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে,
সারারাত আমায়, করে ধর্ষণ।
শুক্র-শনি, নানা অজুহাতে,
সপ্তাহ করে দিল সে পার;
মিঠিয়ে নিল কামনার আগুন;
খেয়ে মধু, ভ্রমর পাগারপার।
আমি হলেম নষ্টা মেয়ে;
আর মাতবর পুত্র, মহাবীর;
নষ্টাকে চলেনা বিয়ে করা,
যোনী ভোগে সবাই অধীর।
খাদ্য-আশ্রয় নেই, নেই মান,
নিষিদ্ধ পল্লীতে হলো স্থান;
রথী-মহারথীর পাই সেলাম,
আমার দেহ মহা মূল্যবান।
সমাজের মধ্যমণি বুড়া শকুন,
সারারাত খুবলে খুবলে খায়;
আমার সুন্দর লগ্ন দেহখানা,
ঘৃণায় মরে যেতে, ইচ্ছে হয়।
পরদিন সভা সেমিনারে গিয়ে,
চোখে তাদের কুমিরাশ্রু ঝরে;
করবে তারা নারীদের উদ্ধার।
ভাবি, খোদা কেমনে সহ্য করে।
সমাজে আমরা তো পতিতা,
নেই মোদের কোন সম্মান;
মরলেও হবে না জানাজা,
জুটবে না কবরের স্থান।
আমরা যদি পতিতা হই,
স্ত্রী রেখে, যারা আসে ভোগে;
তারা কেন হবেনা পতিত?
সদাই এ প্রশ্ন মনে জাগে।
পেটের দায়ে হলাম বেশ্যা,
অথচ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান;
অধিকার, নহে কার দান,
রাষ্ট্র করেনা কেন বিধান?
আমিও মানুষ, ছিল বহু সাধ,
স্বামী সন্তান নিয়ে বাধিব ঘর;
পুরুষ আর সমাজের বঞ্চনা,
কেরে নিল মোর সে অধিকার।
তারিখঃ ০৮-১২-২০২২ ইং;