আমরা জানি বাংলা-কবিতা ডট কম ওয়েব সাইটটি বর্তমানে বাংলা কবিতার সবচাইতে বড় ও জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। বলতে গেলে এই ওয়েবসাইটটি নতুন কবি তৈরি একটি কারখানাও বটে। কারণ এখানে কবিতা পোস্ট করতে গিয়ে প্রতিদিন একটি করে কবিতা লেখার তাগিদ ভেতর থেকে অনুভূত হয়। এছাড়া সাথী কবিদের কবিতায় মন্তব্য লেখতে গিয়ে প্রতিদিন ২০/৩০টি করে কবিতাও পড়তে হয়। এই লেখা এবং পড়া কবিকে নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করে তোলে। এজন্য বাংলা কবিতার মুল এডমিন এবং ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা জনাব আশফাকুর রহমান পল্লবকে জানাই আন্তরিক অভিবাদন। বাংলাদেশের এডমিন জনাব কবীর হুমায়ূন এবং ভারতের এডমিন বিভূতি দাস বাবু সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে  জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা।


প্রতিবছর বাংলাদেশে একবার এবং ভারতে একবার করে বাংলা-কবিতা ডট কম-এর ব্যানারে কবি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গত আগস্ট ১৩,  ২০২৩ ভারতের ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় অনুষ্ঠিত হলো কবি সম্মেলন। সস্ত্রীক এ অনুষ্ঠানে আমার অংশগ্রহণের সুযোগ হয়। অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক আয়োজন অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে। অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক  জনাব পরিতোষ ভৌমিক ও তার সকল সহযোগী ও সহকর্মীকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। বিশেষ করে জনাব পরিতোষ ভৌমিক যিনি নিজেকে অমায়িক কবি হিসেবে প্রচার করেন, তিনি সত্যিই একজন দক্ষ সংগঠক এবং একজন  অমায়িক চরিত্রের মানুষ। শুধু একটা ধন্যবাদ দিয়ে তার পুরা কাজের স্বীকৃতি দেয়া সম্ভব নয় বিধায় তাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না।


অনুষ্ঠানের ভেন্যু: ত্রিপুরা প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে  অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ভেন্যুটি অত্যন্ত সুন্দর। বসার আয়োজন, সাউন্ড সিস্টেম সবই সুন্দর ছিল।
আতিথিয়তা: আতিথিয়তা এক কথায় ছিল অসাধারণ। জনাব ভৌমিক অনুষ্ঠানের মূল সংগঠক। বলতে গেলে তিনি একক ভাবে সকল কাজের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তারপরও বাংলাদেশ থেকে আগত ও অন্যান্য কবিদের তিনি বাস স্ট্যান্ড  ও রেলস্টেশনে নিজে গিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়ে নিয়ে এসেছেন এবং হোটেলে পৌঁছে দিয়েছেন। রাতের খাবার দিয়েছেন। পরদিন রাতেও হোটেলে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন, আমি এতটা আশা করিনি।  


অনুষ্ঠানে সকল কবিকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়। সকালের নাস্ত,  চা-কফি, লাঞ্চ সুন্দর ভাবে পরিবেশন করা হয়। উল্লেখ্য মেনু ছিল অসাধারণ। যেহেতু পাঁচটায় অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গিয়েছিল, তাই ডিনারের আয়োজন না করলেও হয়তো চলতো। কিন্তু তিনি সুন্দর  একটা ডিনার পার্টি দিয়েছেন। এক কথায় আতিথেয়তায়  কোন ত্রুটি ছিল না।
আনুষ্ঠানিকতা: অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতায়ও কোন কমতি ছিল না। বাংলাদেশের সহকারি হাইকমিশনার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া স্বনামধন্য কবি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিশেষ অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যা অনুষ্ঠানের শ্রী বৃদ্ধি করেছে। অনুষ্ঠানে সকল কবিকে নিজ নিজ কবিতা পড়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে যা অত্যন্ত প্রাণবন্ত ছিল। প্রত্যেক কবিকে গলবন্ধ, ক্রেস্ট ও মানপত্র দিয়ে সম্মাননা দেয়া হয়েছে যা নিঃসন্দেহে অনুষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে।


অনুষ্ঠানে কবিদের বইয়ের মোরক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানের সারক গ্রন্থ "ত্রিপুরা কাঞ্চন"- এ অংশগ্রহণকারী সকল কবিদের কবি পরিচিতি এবং কবিতা মুদ্রিত হয়েছে। সম্পাদনা করেছেন কবি পরিতোষ ভৌমিক এবং কবি সরদার আরিফ উদ্দিন। স্বল্প খরচে সুন্দর একটি স্মারক গ্রন্থের জন্য সম্পাদকদের জানাই অভিনন্দন।


অনুষ্ঠানে সকল কবির অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রাণবন্ত ছিল। এটা নিছক একটা সম্মেলন বললে ভুল হবে; প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল তিন বাংলার কবিদের এক মিলন মেলা। সবার সাথে সবার ব্যক্তিগত পরিচয় শুভেচ্ছা বিনিময় টেলিফোন নাম্বার সংগ্রহ বাংলা কবিতা ডট কম-কে এক পরিবারের আওতায় নিয়ে এসেছে। এটা ছিল সম্মেলনের সব চাইতে বড় পাওয়া।
কবিদের সাথে আগত অতিথিদেরকে সম্মেলনে গলবন্দ দিয়ে অভ্যর্থনা দেয়া হয়। এটা তাদেরকে স্রেফ দর্শক হওয়া থেকে অংশগ্রহণকারী বানিয়েছে। এজন্য আয়োজকদের কে ধন্যবাদ।


অনুষ্ঠানের আয়োজক জনাব পরিতোষ ভৌমিক কে সারাদিন চেয়ারে বসতে দেখিনি। ভদ্রলোক সারাদিন দাঁড়িয়ে পুরো অনুষ্ঠানের তদারকি করেছেন। ছোটখাটো সকল বিষয়ের খোঁজখবর নিয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় হল, তার মাঝে কোন বিরক্তি দেখিনি, তিনি সবাইকে হাসিমুখে এন্টারটেইন করেছেন। সত্যিই তিনি একজন দক্ষ সংগঠক।


সাইট সুইং: নীরমহল ও রাজবাড়ী সহ ত্রিপুরায় অনেকগুলো পর্যটন স্পট আছে যেগুলো আমাদেরকে বিশেষ করে ত্রিপুরার বাইরের কবিদের মুগ্ধ করেছে।


এছাড়া পরদিন ILS হাসপাতাল এবং দুস্থ শিশুদের নিয়ে পরিচালিত আশ্রম "নব প্রান্তিক" পরিদর্শন ছিল একটি সুন্দর অভিজ্ঞতা। জনাব বিশ্বজিৎ বাবুর একক প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা জনকল্যাণমূলক কাজ, পথশিশু ও পথে পড়ে থাকা ভবঘরে পাগলদের ধরে এনে পরিচর্যা ও মানুষের মর্যাদা প্রদান সত্যিই অসাধারণ মানবিক প্রয়াশ। আমি তার কাজ দেখে আবেগ সংবরণ করতে পারিনি। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া দরকার বলে আমার মনে হয়েছে।
সংগীত অনুষ্ঠান: ১৪ই আগস্ট রাতে সংগীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো। অপূর্ব সঙ্গীত অনুষ্ঠান। ক্লাসিকাল গান, গণসংগীত, ঐতিহ্যবাহী নাচ, বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর কালচারকে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন।


অনুষ্ঠানের সবচাইতে ভালো দিক ছিল ব্যান্ড সংগীত বর্জন। তরুণ সমাজ কিছু মনে করবেন না। প্রচন্ড জোরে বাজনা এবং চিৎকার করে গান শুধু শব্দই দূষণ করে না, মনে হয় আমার হৃদয়ে হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি দেয়া হচ্ছে।


অনুষ্ঠানের সার্বিক মূল্যায়ন: আগেই বলছি সার্বিক মূল্যায়নে অনুষ্ঠান অসাধারণ হয়েছে। নাম্বার দিতে গেলে বলব ১০০ এর মধ্যে ১১০ পেয়েছে। বলবেন এটা কিভাবে সম্ভব? ছোটবেলার একটা গল্প বলি। আমাদের এক ধর্ম শিক্ষক পরীক্ষার খাতা দেখে নাম্বার দেন। উনি বরাবরই ভালো নাম্বার দেয়ার পক্ষে ছিলেন। তিনি খাতা দেখে নাম্বার দিয়েছেন। আর একটি ছেলেকে যোগ করতে বলেছেন। প্রশ্নপত্রে ছিল ১১ টি প্রশ্নের মধ্যে যেকোনো দশটি উত্তর দিতে হবে। ক্লাসের ফার্স্ট বয় এটা না দেখে ১১ টি প্রশ্নেরই উত্তর দিয়ে দিয়েছেন। স্যার যথারীতি প্রতিটি প্রশ্নের ১০ নম্বর করে প্রদান করেছেন। ফলে তার মোট প্রাপ্ত নাম্বার দাঁড়ায় ১১০। যে ছেলেটিকে যোগ করতে দেয়া হয়েছিল সে যথারীতি খাতার ওপরে ১১০ নম্বর লিখে দিয়েছে। ষান্মাসিক পরীক্ষার খাতা ফেরত দেয়ার নিয়ম। দেখা গেল ক্লাসের ফার্স্ট বয় একশোর মধ্যে ১১০ পেয়েছে।


আমাদের প্রথমে শুধু ১৩ তারিখের অনুষ্ঠান ছিল। এই অনুষ্ঠানে একশোর মধ্যে ১০০ নম্বর আর পরের দিনের গানের অনুষ্ঠান অতিরিক্ত। এর ১০ নম্বর যোগ করলে হয় ১১০। সুতরাং পরিতোষদা পেয়েছেন ১০০ এর মধ্যে ১১০ নম্বর।


প্রস্তাবনা: আমি বাংলা কবিতা ডটকমে নতুন সদস্য। বছরখানেক হলো এখানে আছি। এটা সহ মাত্র দুটি অনুষ্ঠানে যোগদানের আমার সুযোগ হয়েছে। এ অনুষ্ঠানটা যেভাবে অনুষ্ঠিত হলো তাতে আমাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। পরবর্তী অনুষ্ঠানগুলো আরো সুন্দর করার একটা তাগিদ রয়ে গেল। পরবর্তীতে আয়োজকদেরকে এ ব্যাপারে এখন থেকেই আরও সচেতন হতে হবে।


আরেকটি প্রস্তাব এই আসরের তিনজন শ্রেষ্ঠ কবিকে প্রতি অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা যায় কিনা বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করছি। যদিও এই শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বারবারই প্রশ্ন আসবে যে বিচার সঠিক হয়নি। তারপরেও এটা করা ভাল। কারণ আমার মনে হয় প্রতিযোগিতা থাকলে কাজের মান আরো উন্নত হবে।


সবশেষে বলবো আগরতলায় যাওয়া-আসা, অনুষ্ঠান, পরিদর্শন, গান, সবকিছু মিলে একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এক কথায় আমি ব্যক্তিগতভাবে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট।


সকল কবি বন্ধুদের প্রতি রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা। সবাই ভালো থাকবেন এবং বেশি বেশি করে কবিতা লিখবেন।


শুধু বাংলা কবিতা ডট কম নয়, পরিতোষ দা ত্রিপুরার একজন অন্যতম সংগঠক হিসাবে আবির্ভূত হোক এই কামনা করেই শেষ করছি।


শেখ মোঃ খবির উদ্দিন