সত্তর সালে বন্যায় ভেসে গিয়েছে জাহের ভাই,
প্রকৃতির এই নির্মম খুনে লাশ টাও দেখে নাই।
মা ছিলো খেজুর, গাছের উপর ছিলেন ঝড়ের রাতে,
হাতের উপর দশ মাসের যে, সন্তান ছিল হাতে।


তাই জাহের কে অন্যের ধারে দিয়েছেন হাতে তুলে,
হয়তো তিনি যে নিজ বাঁচাতেই পরকে গিয়েছে ভুলে।
সারাটা রাত্রি গাছের মাথায় ঝড়ের দমার পাশে,
যুদ্ধ করেই বেঁচে ছিল মায়ে ভোলার জলোচ্ছ্বাসে।


কখন উঠবে ভোরের সূর্য কখন থামবে এই ঝড়,
মুখে ছিল খোদা গগনবিদারী কান্না অশ্রু থরথর।
সকালে হয়েছে ঝড় থেমে গেল দেখেন লাশের সাড়ি,
হয়তো মা জান বাঁচলেন তবে পড়নে ছিল না শাড়ি।


কে বেঁচে আছেন? কে বাঁইচা নেই শূন্য বসত ঘিরে,
দিনের দশটা কেউ কেউ ফিরে দেখছেন বাড়ি ফিরে।
অনেক জনেই ফিরে আসছেন জাহের ফিরে না আ-রে,
যারাই আসছে জাহের খুঁজতে ডোবার লাশকে ধরে।


আর ফিরে নাই হয়তো কোথাও হারিয়ে গিয়েছি দূরে
এত মৃত্যুর মিছিলের কাছে কবর হয়েছে ঘুরে।
নির্মম সেই ঝড়ের রাত্রি কবলে ভোলার জীবন,
জীবন যুদ্ধে লড়াই করেই বেঁচে আছে এই জীবন।


ঝড়ের রাত্রি দশ মাসেরই দ্বিতীয় পুত্র  নাম ছিল আব্বাস,
বেঁচে ছিল তিনি দুই হাজার- (আট) সাল- প্রাণে বসবাস।
তিন সন্তান হয়েছিল তার, হয়েছে বিরোধী দলে,
রাতের বেলায় খুন করে তারে, দিয়েছে মাটির তলে।


সেই দৃশ্য মা, অবলা নারীর চোখ জুড়ে হলো বারে,
সত্তর সালে খেজুর গাছেতে হাত ছাড়ে নাই যারে।


তারপরে মার, তৃতীয় ছেলের নাম হলো সোলাইমান,
আব্বাস খুনে সন্দেহ যোগ সুত্রের আছে,্ গান।
জানি আল্লাহ সঠিক বেঠিক দেখছে খোদয় বলে,
তৃতীয় ছেলেটা বাড়ি ছাড়া হয় মামলা আসামি -হলে।


তারপর মা,র চতুর্থ ছেলে নাম যে ইউসুফ ভাই,
পুকুরে তলায় ডুবে মারা যায় বেদনায় বুনো ঠাঁই।
দেখতে দেখতে করুণ কাহিনী এগিয়ে যাচ্ছি বটে,
দুঃখের সেই বেদনায় নদী ভাবেনি এমন ঘটে।


পঞ্চম ছেলে ইউনূস সেই নদীতে ডুবেছে মরে,
জানেনা সাঁতার কেড়ে নেয় প্রাণ আসলো না আর ঘরে।
গরু রাশি পেকে নদীতে ডুবেই বিদায় নিলেন ভাই,
এই ভুবনের হয়ে গেল যেন চির বিদায়ের ঠাঁই।


তারপর মার,ষষ্ঠ ছেলেটি হারুন রয়েছে বেঁচে,
বিদেশ গিয়েছে আসেনি বারোটা বছর গিয়েছে শেষে।
অপেক্ষা করে আসবেই কবে দেখবে ছেলের মুখ,
করতে করতে হারিয়ে গেলেন ছেড়ে পৃথিবীর বুক।


তারপর মার, সপ্তম মেয়ে দিয়েছে তারেই বিয়ে,
ওয়ারিশ জমি, লুটপাটে খেলো, হারুন একাই নিয়ে।
দেয়নি জমির ভাগ বাটোয়ারা মেয়ে ভুলেছেন! মাকে,
মরার পরেই খাট ধরে মার, দেখেছি অবাক বাকে।


তারপরে মার অষ্টম ছেলে নামটা মুসার তাই,
লিখতে বসেছি অশ্রুসিক্ত ভাষা হারিয়েছি ঠাঁই।
আদর স্নেহর অভাব আমার তুচ্ছ বাড়ির কাছে,
মায়ের মমতা বড় অভাবেই হৃদয় ভাঙছে ধসে।
জীবনের পথে, কত কিছু হয়-কতটা দীর্ঘশ্বাস,
সুখ দুখ মিলে এইতো জীবন আমাদের ইতিহাস।