বেসরকারি হাসপাতালের এক সেবিকা
ব্যাচে লেখা- ইসরাত জাহান রেবেকা।
বয়স লেখা নাই,তবে বাইশের বেশি  না
ছোট ছোট দুইটা চোখ,একটুও হাসে না।


“রোগীর নাম?”
“জ্বি, রোগীর নাম রোজিনা।”
“বয়স কত?”
“চল্লিশের বেশি না”
“সমস্যা কী?”
“জ্বি, রক্ত নিতে হবে।”
“এনেছেন রক্ত?”
“এইতো ব্যাগ ভরে আনলাম সবে।”
“মহিলা ওয়ার্ডে বেড নাই, পুরুষ ওয়ার্ডে দেই?”
“দিন! তবে পর্দা দিয়ে আড়াল করার ব্যবস্থা নেই?”


পর্দার আড়ালে শুয়ে পড়লেন মা,
পাশে ছোট বোন
এমনিতে গরম বেশি,
ফ্যানটা আবার নষ্ট হলো এখন।
আমি গেলাম হাতপাখা কিনতে
আর কিছু ফল,
ফোন বেজে উঠল মাঝপথে;
“হ্যাঁ, কী হয়েছে বল।”
“ভাইয়া, শিরা পাচ্ছে না হাতের;
রক্ত যাচ্ছে পড়ে।”
“আমি আসতেছি” বলে
চারতলায় উঠে গেলাম দৌঁড়ে।


এক বন্ধু ছিল সেই হাসপাতালে,
ফোনে বললাম তারে,
“দেখ তো এসে এই নার্স
কতগুলো ছিদ্র করে!”
মা কাতরাচ্ছে দেখে আমার
আর বোনের মুখে স্বচ্ছ বিরক্তি
বুঝতে পেরে,তার দায় নিতে
সেবিকার ঘোর আপত্তি।
যেচে তাই দিলেন কৈফিয়ত,
“উনার শিরা ভীষণ সরু।”
ডেকে আনলেন আরেক নার্স;
মনে হয় তার গুরু।


একটু পরে বাইরে এসে বললেন আমায়
মেজাজ খারাপ করে,
“এখন সিনিয়র নার্স পারছে না কেন?
ডাকেন আপনার বন্ধুরে।
খুব তো এসে ঝাড়ি দিল,
এরপর আনুক  আর কোনো রোগীকে।”
ফিসিফিসিয়ে আমি-“রেগে যাচ্ছেন কেন?
ভালো দেখাচ্ছে না আপনাকে।”
শুনতে পেলে হয়তো আরও
রেগে যেতেন তিনি, বললেন আবার-
“কী মনে করেছেন আপনারা?
এরকম রোগী আমি সামলাই হাজার।”
“দেখুন, আমার ভুল হয়েছে।
তবে আপনাকে দেখে অভিজ্ঞ বলবে কে?
আপনার কাছে হাজার রোগীর একজন যিনি,
তিনি আমার একমাত্র মা যে!”



গত ১৩/০৬/২০২১ তারিখে মাকে নিয়ে যাই হাসপাতালে। তার শরীরে রক্তের ব্যাপক ঘাটতি পূরণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শে রক্ত দেওয়া হয়। সেখানকারই ঘটনাপ্রবাহ কবিতায় পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করলাম। তবে সত্য নামগুলো আড়াল করা হলো।