রাস্তার ঐ ছেলেটা
-তুতুন, সারাটা দিন ঘুরেছে
রাস্তার ধারে ডাস্টবিন গুলোকে পাগলের
মতো হাতড়ে বেড়িয়েছে ।
কিছু মেলেনি ।
তেরো বছরের এই ছেলেটা
হাফপ্যান্ট পরা অর্ধনগ্ন প্রায়,
ছাল স্খলিত হওয়া
কালো তনুর ও'পর
কাদামাটির ছোপ গুলো
যেন অতিভূত!
যেন কোন অচেতন পদার্থ !
বর্ষায় ধুয়ে দেয়
তার মলিন কলেবর;
আবার ,রোদ,হাওয়া আর
ধুলোয় হয় পুরনো!!
বাধ্য হয়ে সে আজ
আপিসের বড়বাবুর কাছে
দু-পয়সা চেয়ে বসে-
বড়বাবু অচ্ছিল্যের সাথে
শুনিয়ে দেয় দু-চার কথা
'বাপ মা কে খেলো।
এবার আমায় খাবে! '
সে ফিরে এলো ক্লান্ত হয়ে,
গলির কোনে নির্জন ছায়ায়।
কালি ছুটে এলো।
জিমখানা বার করে হাঁপাতে থাকল।
কালি তুতুনের বন্ধু ।
তবে কালি কোন মানুষ নয়।
একটা বিলাতি কুকুর।
তাই ডাস্টবিনে খাবার খোঁজার
অভ্যাস তার নেই।
আজ যদি তুতুন তার
পাশে না দাড়াত তবে
হয়তো অনাহারেই মরতে
হত কালিকে।
থানার বড়বাবু মদন সিংহ
বড় সখ করে কালিকে
এনেছিল। বড় সুখের জীবন
ছিল কালির।
একবার ভুল করে
সাহেবের আস্ত চিকেন রোস্টটায় সে
মুখ বসাল । তার পর থেকে
সে এখানে।
তুতুন খুব ভালবাসে কালিকে ।
কালি যেন তার জীবনের সবকিছু।
জীবনের শীতলতম দিনে
নগ্নপ্রায় তুতুন
লোমশ কালির দেহতাপে
আবদ্ধ হয়ে বেঁচে থেকেছে।
রোদের তেজে যখন
তার গায়ের চামড়াটা ঝলসে
গেছে তখন
কালি জিভ দিয়ে চেটে তার
শরীরের জ্বালা মিটিয়েছে।
এলাকার নেড়ি কুকুরগুলো
যখন আধিপত্য জাহির করতে
চেয়েছে; কালি জ্বলন্ত যৌবনের
তেজে গর্জে সিনেমার নায়কের
মতো তুতুন কে বাঁচিয়েছে।
ভাগ্যবিধাতার এ সব যেন
সইল না।
একদিন একটা মস্ত বড় ভ্যান
তাদের গলির কোনে এসে দাড়াল ।
তুতুন অবাক-বোধ হয় কারো
দয়া হয়েছে।
আসলে এটা ছিল একটা
"ডগ্ ক্যাচার ভ্যান্ "
নিমেষের মধ্যে কালিকে ধরে
নেওয়া হলো ভ্যানের পিছনে
খাঁচায় । তুতুন চিৎকার করল,
কাঁদল,কালি গোঙাল ।
দয়া হলো না।
ভ্যানটি চলে গেল ।
কয়েকদিন পর
আবার তুতুন কালিকে দেখল
তার মন
আনন্দে আপ্লুত হয়ে উঠলো,
নেচে উঠলো ।
সে উচ্চস্বরে ডাক দিল :
'কালি কালি ' ।
সেদিন কালি আর ফিরে তাকাল না।
গলায় কলার কালি
মেমসাহেবের গা ঘেঁষাঘেঁষি
করে হারিয়ে গেল রাস্তার মোড়ে ।
চোখে জল ভরে উঠলো তুতুনের।
অকস্মাত্ একদিন আরো
একটা ভ্যান এলো।
এর গায়ে বড় বড়
করে লেখাছিল-"হিউম্যান ক্যাচার ভ্যান " ।
অর্থাৎ মানুষ ধরার গাড়ি।
তুতুনের আনন্দের শেষ হয় না।
সে ভাবে- তারও গলায় কলার;
মেমসাহেব মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ।
সে স্বপ্ন দেখে ।
তারপর হঠাৎ
একটা আওয়াজে তার ঘুম ভাঙে
দেখে সামনে নেড়ি কুকুরের দল-
এসে হাজির ।
আশে পাশে হাতড়ে বেড়ায় সে ।
আজ আর কালি নেই,
সে একা ।।