রাজবাড়ী
             -মিন হাসান নূর সম্রাট


যাক বাবা। ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে আমার মন এখন এই চরণে বলছে। এই গরমে যেন মনে হচ্ছে মরুর বুকে গলা শুকানো হারানো পথিকের মতো। যেন একজন মরুর বুকে পানির ফোয়ারা নিয়ে আমায় আপ্যায়ন করার উদ্দেশ্যে আমায় খুঁজছেন। তখন তার হাতে এক গামলা পানির সন্ধান দেখে সে অবস্থায় মনে তো হবে, সাত রাজার ধন সম্পদ তুচ্ছ সেই পানির কাছে। এই সব সেখানে গিয়ে ঠেকেছে যেখানে ঘুরতে যাওয়ার সংবাদ এসেছে। এই গরমে যদি নিজেকে এই মায়ার জগতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। তাইলে তো এই ঘন বনালয়ে একখানা দালান চাই। তার প্রতিটি স্থানে থাকতে হবে জানালা নামে হাজারো বাতাস প্রবেশের রাস্তা। যে রাস্তায় বাঁধা দিবে না কোনো অট্টলিকা বা রাক্ষুসে দালান। নিমেষেই সে বাতাস নামক দুর্লভ পথিক রাস্তা ভুলে যাবে না। কারণ তার প্রবেশ পথে থাকবে হাজারো বন্ধু নামে গাছপালা। তাকে প্রতি জনে কোলে করে জানালার ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো পরিবেশ। সে বাতাস কে পরিশুদ্ধ রুপ দেওয়ার জন্য অবশ্যই একটি বড় রাজ পুকুর তো থাকবে জমিদার বাড়ি বলে কথা। অন্যের পুকুরের ঘাট ব্যবহার করার তো লোক বাবু তারা তো থাকবেই না। তাই নিজের চিন্তা থেকে বলা হলো পুকুর তো রয়েছে।


সে দিনটি চলে এলো বলে। কালকে রওয়ানা হবো বন্ধুদের সাথে নিজের মনের মতো জায়গায়। এই বলে ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ হাত সাত ছাড়িয়ে উঠে পড়লাম। ঘড়ির দিকে নজর দিতে দেখি হাতে সময় রয়েছে ঠিক এক ঘন্টা পাঁচ মিনিট। যা দেখে দুশ্চিন্তা পড়ে যেতেই নিজেকে আবার স্থির করে নিয়ে স্নান করে সব কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লাম। গাড়ি একখানা নিয়ে বাস স্টেশনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।


অল্প সময়ের ব্যবধানে বাস স্টেশনে সামনে আসতে সকল কে দেখতে পেলাম। যেন আমি দেরি করে ফেলেছি মনে হয়। এই চিন্তা করে তাদের সামনে যেতে সবাই এক মুখ হাঁসি দিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরলো। তখন শরিফ বলে উঠে। তারাতাড়ি বাসে করে সেই রাজবাড়ী তে পৌঁছাতে হবে। এই বলে বাসের টিকিট কেটে নিয়ে সবাই মিলে বসে পড়লাম গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। কথা বলতে বলতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে এলো কেউ আন্দাজ করে নি। আর কেন বা মনে পড়বে না পুরান বন্ধুদের সাথে কথা বলার মজা আলাদা। এই বলে আরো কিছু সময় পার হয়ে গেলো রাত তখন আনুমানিক আটটা বেজে কি নয়টা হয়েছে। বাস একটি বিশাল মস্ত রাস্তার পাশে বাস স্টেশনে থেমেছে। এটি বাস স্টেশনে শেষ গন্তব্য। এর পরে বাস সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে অন্য গন্তব্যে রওয়ানা দিবে। তখন আমরা দেখতে পাই আশেপাশে এমন কোনো পাকা রাস্তা বলতে ছিটেফোঁটা ও নাই। কিন্তু একটি রাস্তা রয়েছে যে দিক দিয়ে মোখারা গ্রামের বাজার রয়েছে। আমরা সেই বাজারের দিকে যাওয়ার
সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম।কারণ বাজার পার হয়ে রাজবাড়ী। এই বলে হাঁটা দিতে শুরু করলাম সবাই মিলে।সবাই সবার মতো কথা বলে বলে পথ পাড়ি দিচ্ছি। অল্প কিছুক্ষণ হাঁটা দেওয়ার পর বাজারে দোকানে ঝুলে থাকা লাল বাতির আলোয় চোখে ভেসে এলো। যখন বাজারে প্রবেশ করলাম তখন চোখে পড়ে বেশির ভাগ দোকান পাট বন্ধ করে দোকানদার রওয়ানা দিয়েছে। শুধু দু একটা খোলা রয়েছে। আর গ্রামের বাজার রাতের আঁধার নামলে বাতি নিভিয়ে দোকান বন্ধ করে ফেলে। তখন সেই দু একটা দোকান থেকে একটি দোকান চায়ের দোকান দেখতে পাই। সেখানে গিয়ে সবাই মিলে বসি। দোকানের বাঁশে যা কিছু ঝুলে রয়েছে তার থেকে বেশির ভাগ কিছু না কিছু সবাই মিলে বসে খাই আর সঙ্গে কিছু নিয়ে ও নিলাম। যাগ আমরা আসায় দোকান দারের মস্ত লাভ হয়েছে। দোকানদার ভাই তাইলে চলি যা টাকা পেয়েছেন তা দিয়ে কাল একটি বউয়ের জন্য মস্ত বড় ইলিশ নিয়ে যাইয়েন। এই বলে হাসতে হাসতে যখন চলে যেতে লাগি তখন পিছন থেকে ডাক দিয়ে দোকান মশাই বলে উঠে। আপনারা কোথায় যাইবেন এতো রাতে। ওই দিকে কোথায় যান। আমি তখন বলে উঠি চাচা বেড়াতে এসেছি। ওই যে এই খানে একটা বিশাল বড় রাজবাড়ী রয়েছে সেখানে যাই চাচা। এই কথা শুনা মাত্র দোকানদার আর্তনাদের মতো চেহারা বানিয়ে বলে উঠে ওখানে কেন যাবে। ওখানে যেও না তোমরা। আমি তখন বলে উঠি আরে আজব তো মশাই। ওখানে কেন যাবো না। আবার আপনি বইল্লা উঠেন না যে ওখানে ভূত রয়েছে। আমরা তখন সবাই অজোরে হাসি দিয়ে উঠি। তখন দোকানদার মশাই বলে উঠে। এটি রাজবাড়ী নয় এটা মৃত্যুপুরী। চলে যা তোরা চলে যা। তখন শরিফ বলে উঠে। ধূর সব বানোয়াট কথা তাইলে চাচা তোমরা কেনো এই এলাকায় থেকে জীবিতপুরী হয়ে আছো। এই বলে আমরা রওয়ানা দিলাম রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে। আবার বান্ধবীরা বলে উঠে শরিফ এই সম্রাট ওখানে যাওয়া কি আমাদের ঠিক হচ্ছে। দোকানদার ভাই এমন কেন বলল।চল না ফিরে যাই। এই কথা শুনে আমরা বলে উঠি এই তো মেয়েদের সমস্যা কেউ কিছু একটা বললে হলো নিজের পুত কেও ভূত ভেবে বসবে। চল এখন হাঁটা দে কোনো ভেন গাড়ি পাই নাকি দেখি। এই বলতে একটি ভেন গাড়ি দেখা পেলাম। যখন আমরা ডাক দি, ও চাচা যাবেন। এই বলতে সে ভেন চালক চাদর মুড়ানো কালো অন্ধকার মুখ মন্ডল নাড়িয়ে সাড়া দেয়। আমরা যখন বলতে যাবো,চাচা আমরা রা,,,,
রাজবাড়ী এটি বলার আগে ভেন চালক বলে উঠে বলার কোনো দরকার নেই প্রতি বছর সবাইকে নিয়ে যায় রাজবাড়ী।


(পর্ব ৩ আসবে....)