ভেন চালকের এই রকম কথা শুনে কিন্তু আমরা আতঙ্ক মনভাব হিসেবে গ্রহণ করি নি। কেন করবো, আমরা তো এই প্রথম রাজবাড়ী যাচ্ছি না। আমাদের আগে অনেকে তো এই রাজবাড়ী দেখার জন্য এসেছেন। তার পেশা হয় তো বা এটি এই বন জঙ্গলে ভেন চালিয়ে সেখানে পৌঁছে দেওয়া আর ভালো অর্থ খরি উপার্জন করা।


তাহলে চলেন ভেন চালক একটু আসতে আসতে চালাবেন।কারণ এই সুন্দর প্রাকৃতিক হাওয়া বিল কে বিল উপভোগ করার আনন্দই আর দু বার পাবো কিনা সন্দেহ। " ঠিক বলেছেন আর কি পাবেন এই আনন্দ হয়তো এটা আপনাদের জীবনে শেষ আনন্দ! কি বললেন আপনি,শেষ আনন্দ মানে। ভেন চালক ওমনি উওর দেয়। আরে মশাই ভয় পেলে হবে হয়তোবা এই রকম সুন্দর মনোমুগ্ধকর বাতাস কি সব সময় পাওয়া যায়। একেক সময় একেক আনন্দ তার সাথে কি এই আনন্দ আর মিল পাওয়া যাবে। ওহ তা ঠিক। সব শান্তি তো আর এক হবে না। কিছুক্ষণ আশেপাশে অন্ধকার বিল খাল এই সব দিকে তাকানোর সময় হঠাৎ নজর পড়ে এক ঝাঁক জোনাকি পোকার উপর। কি আশ্চর্য অবাক হওয়ার তো কথা এই দৃশ্য তো আর শহুরে এলাকায় বেশ দুর্লভ। অনেকক্ষন সামনে যাওয়ার পর হঠাৎ ভেন গাড়ি থেমে যাই। বলে উঠে আর যাওয়া হবে না সামনে মস্ত বড় গাছ পড়ে রয়েছে। আরে কি বলেন মশাই আমরা এতো জন আছি সামান্য একটি গাছ পড়ে রয়েছে এটি সরাতে পারবো না। এই চলো সবাই ভেন মশাই আপনি আসেন গাছ টি সরাই। ভেন চালক ওমনি মুখের উপর না করে দে।আমি রোগা মানুষ আমার পক্ষে সম্ভব না। আমরা ও আর জোর করলাম না। যখন আমরা গাছটি সরাতে যায় তখন আমরা সবাই মিলে এতো ভাবে চেষ্টা করি। কিন্তু কোনোরূপ গাছটি এক চুলও তার জায়গা থেকে নড়ছে না। আবার মোবাইলের ফ্লাশ লাইট দিতে দেখি এই তো গাছ নয় মহা দানবের মতো মোটা একখানা গাছ। তাই বলি কেন সরে না। এটি কে সরাতে তো ভারি যন্ত্র লাগবে। এই বলে যখন পিছনে তাকিয়ে দেখি ভেন চালক কে ডাকার জন্য। তখনি মাথা আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা সকলের। উধাও সে ভেন চালক। কোথায় গেল সে। এখানে তো ছিলই। অনেকক্ষন এদিক ওদিক খুঁজতে থাকি। কিন্তু তাকে আর পাওয়া যায় নি। এখন এতো রাতে কোথায় যাবো। মেয়ে দুটি তো ভয়ে ভীতু হয়ে রয়েছে। আর বলছে, আমরা বলেছিলাম কেন দোকানদার চাচা মৃত্যুপুরী বললো। যদি এখন আমাদের কিছু হয়ে যায়। আরে রাখ তোদের ভীতু মার্কা কথা বার্তা। এটি একটি দুর্ঘটনা মাত্র এখানে ভয়ের কি আছে শুনি। এই ভাবে বলে তাদের চুপ করিয়ে দিলাম। এখন কি করা যাই এই নিয়ে চিন্তা করতে থাকি। তখন হঠাৎ শরিফ বলে উঠে আমার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হবে। আমি একটু সেরে আসি। আমরা তখন বললাম যা কিন্তু বেশি দূরে না এখানে আশে পাশে কাজ সেরে তারা তারি চলে আসবি। আমাদের আবার সামনে হেঁটে যেতে হবে। এই বলার পর শরিফ হ্যা বলে চলে গেলো। আর আমরা চিন্তা করতে লাগলাম কি করা যায়। ঠিক দুই মিনিট পর বিলের সেখান থেকে একজন বড় লম্বা জামা পড়া তার হাতে কাস্তির মতো দেখতে আমাদের দিকে আসছে। আমরা তখন তাকে দেখে হাত পা আর বুক কাঁপতে লাগলো। তখন চাঁদের আলো তার উপর জল জল করছে। তার চেহারা সম্পূর্ণ ডাকা অবস্থায়। কিছু বুঝা যাচ্ছে না কে সে। তখন আমি বলে উঠি আরে দাঁড়িয়ে কেন আছো তোমরা পাশের বিলের দিকে দৌড়াও। তখন মেয়েদের মধ্যে একজন বলে উঠে শরিফ কে নিবি না। আমি তখন রাগের মাথায় বলি আরে রাখ শরিফ কে। শরিফের কাছে তো এই কাস্তিওলা নেই। কিন্তু কাস্তিওলা দানব আমাদের সামনে সে তো আমাদের মেরে ফেলবে। এই বলে সবাই দৌড় দি পাশের বিলের দিকে। অনেকক্ষন দৌড়ানো সময় বেশ কিছু দূরে একটি কুঁড়ে ঘর দেখা যাচ্ছিলো। আমরা তখন সে দিকে দৌড়ানো শুরু করি। বেশ খানিকটা দৌড়ানোর পর ঘরের সামনে পৌঁছে তাড়াতাড়ি ঘরের দরজায় টোকা দিতে লাগলাম। তখন কিছুক্ষন পর একজন বৃদ্ধা মহিলা দরজা খুললো। বলো বাবারা তোমরা কারা। এতো রাতে। আমরা তখন বলি দাদি পড়ে বলবো। আগে আমাদের আশ্রয় দিন। এটি বলা মাত্র ডুকে পরলাম। আমরা সবাই ক্লান্ত। তখন আবার শরিফের জন্য চিন্তা হচ্ছে। তখন আবার ঘরে দরজা টোকা দিতে লাগলো। আমরা তখন আরো ভয় পেয়ে রয়েছি। বৃদ্ধা মহিলা টি দরজা খুলতে গেলে। আমরা নিষেধ করি। কিন্তু সে শুনে না দরজা খুলে আর দেখি শরিফ। আমরা তখন বলে উঠি তুই এখানে কেমনে আসলি।সে বলে উঠে কেন আমি যখন কাজ সারতে ব্যস্ত তখন দেখি তোমরা সবাই পাশের বিল দিয়ে দৌড়াচ্ছো কোনো কারণ ছাড়াই। তখন আমি তাড়াতাড়ি দেরি না করে তোমাদের পিছনে কিছুদূর দৌড়ানো শুরু করলাম। আমি বলে উঠি ভালো করেছিস। কিন্তু তুই কি ওই কাস্তিওলা দানব কে দেখতে পাও নি। শরিফ বলে কিসের দানব। আর দানব বলতে আবার কিছু আছে নাকি। এই বলে ও জোরে একটা হাঁসি দিলো। আমরা ও আর তাকে কিছু জানাই নি।


(পর্ব ৪ আসবে....)