বসন্ত রাত, নির্জন চর, চাঁদের আলোর মায়া,
নদীর জলেতে পড়ছে যে এসে ধূসর গাছের ছায়া।
ভাঙা তরী তুই আর বুড়ো আমি পড়ে আছি নদী চরে,
রাতের আঁধার গভীরতা পায় উদাস নদীর স্বরে।
যত বার আসি, নদী চরে বসি, মনে পড়ে স্মৃতি কত,
এই জলে মোরা দিতে গিয়ে পাড়ি দেখেছি দৃশ্য শত!
গড়তে দেখেছি নদী চর কত, দেখেছি ভেঙ্গে যেতে,
রাতের বাতাস খেলতে দেখেছি সরল কাশের ক্ষেতে।
ক্লান্ত তারাকে দেখেছি হারাতে ভোরের আলোর দেশে,
ঘাসের মাথায় দুলতে দেখেছি আলোকে শিশির বেশে।
করুণ আকাশ হারিয়েছে কত মেঘলা বাদল দিনে।
পাহাড়ের দেহ ভেঙেছে দেখেছি নদীর প্রেমের ঋণে।
কত বসন্ত কাটিয়ে দিয়েছি, এ নদীতে ভেসে হায়,
মিষ্টি প্রেমের গান বুনতাম জোছনার নীলিমায়।
শরতের কোণে ঘুরেছি যে কত দেখে মালতীর ফুল,
গোধূলির সাথে মিশতে দেখেছি জীবনের ঠিক ভুল।
আর কে এখন বলবে বলতো আমাদের রূপ দেখে,
এত পথ মোরা দিয়েছি যে পাড়ি সময়ের ঘাম মেখে!
ভেঙে গেছু তুই, ক্ষয়ে গেছি আমি খেয়ে বয়সের মার,
পুরাতন তরী আর বুড়ো মাঝি কে-বা মনে রাখে আর!
যা কিছু আমার ভেবেছি নিজের, চেয়েছি রাখতে ধরে,
পথের বাঁকেতে গেছে যে হারিয়ে সব এক এক করে।
এই পৃথিবীর সবাই তো মাঝি, তবু যেন সে না জানে,
সময় নদীতে আয়ু নৌকায় জীবনের দাঁড় টানে।
পথে হয় দেখা, কিছু সাথে চলা, কিছু কথা যায় বলে;
অজানা ঠিকানা, যায় না যে থামা, তরী শুধু ভেসে চলে।