কবিতা: ধূসর ছবি
মিনু গরেট্টী কোড়াইয়া


উঠুন পরে শূন্য বেঞ্চি আজ
ধুলায় ধূসর রৌদ্রপোড়া কাঠ
কেউ এসে আর বসে না তার পরে
একলা যেনো নীরব শ্মশানঘাট ।।


দেয়াল জুড়ে ছবির পরে ছবি
শোভা বিহীন জং পুরনো ধাঁচে
শুকিয়ে গেছে জড়িয়ে রাখা মালা
ঝাপসা হলো আঁধভাঙ্গা ঐ ছাঁচে ।।


গাছে গাছে মর্মর বাজে পাতা
উঠুন পরে শিউলী সুবাস ঝরে
বেঞ্চিটা আর পায় না ছোঁয়া কারো
কনকনে রাত কাঁপে থরথরে ।।


কেউ কি এখন রাখছে তারে মনে?
তার নামে কি বেঁধেছে কেউ গান?
বেলা শেষে সংসারে এক প্রবীন
জীর্ণ দেহ-সবার চেয়ে পুরান ।।


একদিন তারও ছিলো যুবাকাল
দৃঢ়চেতার সাহসী এক পৌরুষ
মায়ার জালে বাঁধতো আপনজনে
সকল দশায় বইতো কাঁধে ক্রুশ ।।


দেহের ক্লান্তি  করতো প্রতিরোধ
শক্ত হাতে ধরতো মাঠের হাল
ওপার ঘাটে পৌছে যেতো নাও
অকূল পাথার হোক যত উত্তাল ।।


পরমায়ু যখন বেঁধে দিলো ঐ বিধি
মুখের হাসি দিনে দিনে হলো ম্লান
বিষন্ন চোখ ঝাপসা চোখের জ্যোতি
যায় না দেখা দূরের ঐ আসমান।।


হীনবল দু’পা ছড়িয়ে উঠুন পরে
ন্যুব্জ দেহে ভাবতো আপন মনে
ইচ্ছে হতো সকল ক্লান্তি ভুলে
এ গাঁও ছেড়ে ছুটতে গহীন বনে ।।


চারপাশে তার স্বীয় দীর্ঘঃশ্বাস
দোসরবিহীন শূন্য আকাশতলে
ক্ষত হৃদয়ে অলীক স্বপ্ন বৃথা
বেসুরা তান ভরা অশ্রুজলে ।।


পথের পানে থাকতো চেয়ে বসে
আশ্বাসে কেউ জুড়াবে তার প্রাণ
মরণ এসে বললো অবশেষে
বৃথা সংকট সব হবে অবসান ।।


শেষ যাত্রায় ভরা শিউলী তল
ক্ষণিক বছর করে সবাই শোক
বেঞ্চি পরে জমে ধুলির স্তর
সকল স্মৃতি ভোলে সকল লোক ।।


পুরনো কেউ শেষ পথযাত্রী
আবার এসে বসবে কোলে তার
বইবে ব্যথা কঠিন কাষ্ঠ বুকে
ধূসর ছবিতে শুকাবে পুষ্পহার ।।


২ ডিসেম্বর, ২০১৯।
ঢাকা, বাংলাদেশ।