মিতা; আজও ভালবাসি তোমায়
----------------
মিতা, আজও আমি সেই রামগড় পর্বত ছেড়ে
বারবার ছুটে আসি তোমার কেনা চেরাপুঞ্জিতে
শুধু আর একটিবার তোমায় দেখবো বলে ;
শিলংয়ের মেঘে ঢাকা আঁকাবাকা পথ বেয়ে
তুমি ঠিক আসবেই, কুয়াশার চাদর সরিয়ে
কলকাতার শহুরের আহ্লাদী জীবন ভুলে ।।


তোমার মোটরগাড়ি হর্ণবাজিয়ে যখন ছুটবে এপথে
সেই শব্দ কান ভেদে পৌছাবে প্রাণের আঙিনায়
দুর থেকেই দেখে নেবো তোমার সাহেবী রূপ ;
তারপর নিঃশব্দ পায়ে এগিয়ে যাবো সেই উঠোনে
পারবে তো চিনতে আমায়, মনে পড়বে সেই নাম
জানবে কি তোমার নামে পুড়িয়েছি কত ধূপ !!


একদিন এই অচেনা পথই দুজনকে দু জায়গা থেকে
পথের শেষে একজয়গায় এনে দাঁড় করিয়েছিল
নিঃসংকোচে বেঁধেদিল প্রাণ গভীর প্রণয় বন্ধনে ;
কি করে ভুলি সেইদিন, হাতে হাত রেখে পথচলা
রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে, আঁকাবাকা পথ পেরিয়ে
কখনো ডানা মেলে উড়েছি দুজনে সুদূর আসমানে ।।


পাঠ্যপুস্তকের গন্ডি ছেড়ে, বেড়িয়েছি পাহাড়ি পথে
কত কথা খুঁজেছি দুজন দুজনার চোখের তারায়
প্রেমের সাহিত্য গড়েছি জ্ঞান পিপাসু দৃষ্টির ভাজে;
সাঁতার কেটেছি কত স্বপ্নের মহা সমুদ্রের স্রোতে
গোলাপের লাবণ্যময়ী পাপড়ি ছিটিয়েছি দোয়ারে
ঘর বাঁধার স্বপ্নে বিভোর হয়েছি, মরেছি কত লাজে ।।


মনে পড়ে? গঙ্গার দুইধারে দুজনার ছোট্ট সেই বাড়ি-
আমি রোজ রাতে আমার ঘরে জানালা খুলে রাখবো
ঘরের রঙিন আলো ছুঁয়ে যাবে সেই নদীর জল;
ইচ্ছে ছিল এই মন রোজ সাঁতার কাটবে ভরা স্রোতে
দুজনার হাজারও স্বপ্নের কথা ভাসবে তীর ছুঁয়ে
সেদিনের কথা ভেবে আজও মনটা হয় উচ্ছল ।।


আজও তোমার ঠিকানা পাইনি, জানিনা আছো কেমন
রোজ একটি করে চিঠি লিখতে বসি সেখবর জানতে
কিন্তু সেই চিঠির ভাষা হারিয়ে যায় বিনা অক্ষরে;
কলকাতার ঐ শহর কতটা বদলে দিয়েছে তোমায়
নাকি মেঘে আচ্ছন্ন করেছে তোমার ছন্নছাড়া জীবন
আজ এতকাল পরেও তোমায় খুব জানতে ইচ্ছে করে ।।


শোভনলালের সাথে আমার ছোট্ট সংসারটি হয়েছে বেশ
রামগড় পর্বত বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণার নির্মল জলে
আমরা সাঁতার কাটি রোজ, ভেসে যাই দূর বহুদূরে;
মনের এককোণে আজও আমি খুঁজে বেড়াই তোমায়
হারিয়ে যাই আনমনে তোমার সাথে কাটানো সেই দিনে
আমার মন পড়ে থাকে গঙ্গার তীরে, সেই ছোট্ট ঘরে ।।


মিতা, আমি আজও ভালবাসি তোমায়
আজও খুঁজে বেড়াই শিলং পাহাড়ে ;
হবে কি সময়? একটি বার ফিরে দেখার
নাকি ভুলেই গেছো একেবারে !!


লেখাটি কবিগুরু বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস '' শেষের কবিতা'' অনুপ্রানিত হয়ে ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতায়....



৮ এপ্রিল, ২০১৭।
ঢাকা, বাংলাদেশ।