মা ও একটি কবিতা
কবিতা-মিনু গরেট্টী কোড়াইয়া
মায়ের শরীর মোটেও ভালো নেই।
ভোর চারটায় উঠে এসে
আবারও বসলাম তার সজ্জা পাশে,
একটি কবিতা লেখার চেষ্টা করলাম।
এসময় কবিতা লেখা মোটেও সমীচিন নয়,
তবুও মায়ের কথা ভেবে লিখতে‌ ইচ্ছে করছে।  
বাবার মত মাও আমার লেখা কবিতা ও গান
অনেক বেশিই ভালোবাসে, উল্লসিত হয়।
তাদের অগাধ স্নেহ আর আশির্বাদ
জুড়ে রয়েছে আমার সৃষ্ট সাহিত্যে।
মায়ের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা।
বয়সের ভার আর কতটাই বা সহ্য করা যায়?
বাড়ির সবাই এক এক করে
তার পাশে  এসে বসেছি।
শরীর ধীরে ধীরে ক্লান্তিতে ভর করে
কেমন যেনো নিথর হয়ে উঠছে।
মা মা বলে ডাকলে চোখের ক্ষীণ দৃষ্টি নিয়ে
সাড়া দিতে দিতে আবার‌ও ঘুমিয়ে পড়ছে।
মনে হচ্ছে -
কতদিনের নির্ঘুম রাতের অন্ধকার শেষে
একটুখানি স্বস্থি ফিরে এসেছে মনে।
যতবার নড়ে উঠছিলো,
বিড়বিড় করে কি যেন বলছে,
ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা।
হয়তো তার প্রতিদিনের প্রার্থনা
"দূতের বন্দনা" জপ করছে।
পর পর দু রাত ঘুমোতে পারিনি,
আজ‌ও তাই,
যতবার ঘুমানোর চেষ্টা করেছি
অস্থিরতা আর দুশ্চিন্তায় ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
ছুটি শেষ;
আজ‌ই সন্ধ্যায় ফিরতে হবে ঢাকায়।
তারপর কি হবে জানিনা।
চারদিকে আলো ফুটতে শুরু করেছে,
পাখিগুলো কিচিরমিচির শব্দে চারদিক ভরিয়ে দিচ্ছে।
মায়ের ক্লান্ত চোখ দুটো যদি
এভাবে আবার ফুটে উঠতো,
যদি আবারও ঘর ভরিয়ে তুলতো
পারতো তার সুরেলা কণ্ঠে!
আর ভাবতে পারছিনা,
বুকের ভিতর চিনচিন করে ব্যথা করছে।
এই ব্যথা নিয়ে আর যাই হোক না কেন
কবিতা লেখা যায় না!!
ভাবতে ভাবতে অনেকটা সকাল হয়ে যায়....
আমার অব্যক্ত শব্দগুলো ভাসে,
গুমড়ে কাঁদে মায়ের রুগ্ন শরীরের পাশে।