যখন কবিতা লিখিতে লিখিতে
ক্লান্ত হইয়া চোখ দুইটি বন্ধ করিয়া
বিছানায় অচেতন হইয়া পরো-
হাত হইতে কলখানি মাটিতে পড়িয়া যায়-
আমি নীরবে, নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করিয়া
তোমার পা দুইটি স্পর্শ করি।
সেই স্পর্শ তোমার মস্তিস্কে পৌঁছায় কিনা জানি না।
তবে তাহা তোমার অবচেতন মনকে ছুঁইয়ে যায়
তাহা বেশ বুঝিতে পারি।


এই যে প্রতিদিন নতুন নতুন শব্দের গাঁথুনীতে
এক একটি কবিতার জন্ম হয়,
সেও বুঝি এই স্পর্শের কারণেই ঘটে।
তার সত্যতা কিঞ্চিত হইতে পারে,
তবুও আমি মনে মনে
তাহাই পূর্ণ সত্য ভাবিয়া পুলকিত হই
আর সারাদিন ঐ কবিতাখানি বুকে জড়াইয়া
অতি গোপনে ঘুরিয়া বেড়াই
আমার আপন ভুবনে।


সেই  শব্দের মালা আমায়  জড়াইয়া রাখে-
সেই শব্দের অমৃত আমায় উপোস নিবারণ করে-
আমায় নির্মল করে-
আমার পূজার নৈবেদ্যের ডালিতে
ফুল হইয়া  উপচে পড়ে
সেই কবিতা অতি প্রাচুর্যের মত
আমার বুকে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে ।


কেবলেই মনে হইতে থাকে
তোমার গহীনে জাগিয়া থাকা
এক একটি স্তবক লিপিবদ্ধ হয়
আমার উড়িয়া  বেড়ানো ললিত পাখনায়।
তোমার পঙক্তিমালায় ঢেউ জাগে
আমি গা ভাসাই তোমার স্রোতে-
যেভাবে শূন্য কলসি জলে ভাসে;
ভাসিতে ভাসিতে শরীর জুড়িয়া ঢেউ লাগে
আবার সৃষ্টি হয় তোমার নতুন শব্দ গাঁথা।
বুকের ভিতরে উদ্দীপনা বাড়িতে থাকে
চিত্ত জুড়িয়া শুরু হয় অবিরাম চাঞ্চল্য-
শুরু হয় জলের উপর ঝমাঝম বৃষ্টি -
জলে ভিজিতে ভিজিতে
তোমার হৃদয়ে গান বাজিয়া ওঠে
শত সহস্র শব্দ আন্দোলিত হয় স্রোতের উপর
গভীর মনোযোগ বীণ বাজাইতে বাজাইতে
যখন তোমায় আচ্ছন্ন করে ঘুমের আবেশ
আমি তখনও জলের উপর শূন্য কলসির মত
তোমায় ছুঁইয়ে থাকি- আর তখনই
বিশাল সমুদ্রের বুকে গড়ে ওঠে
বিস্তীর্ণ পাণ্ডুলিপি।।


এভাবেই স্বর্গসুখে হৃদয় পূর্ণ করিতে
আমি বারবার ছুটিয়া যাই, অতি গোপনে
তোমার ঘরের পানে-তখনও তুমি ক্লান্ত;
তোমার অচেতন  মনকে সঞ্চালিত করি
আবারও তোমার পা দুইটি স্পর্শ করি-
অমৃত শব্দের আশায়।


রচনাকাল: ২০১৮