পটলের পটল তোলা
----------------------------------------------


গতকাল মধ্য রাতের দিকেই
পটল বাবু আঁতকে ওঠেন ভারি
সপ্তম সুরে চিৎকার করে তাই
অতর্কিতে কার্ফু করেন জারি ।


গভীরতর অন্ধকারেই নাকি -
বিশালাকার মূর্তি দেখতে পেয়ে
রাম নাম জপতে জপতে শেষে
ঘরের পানে এলেন তিনি ধেয়ে।


অতি সত্বর পাড়ার লোকে এসে
নিত্য নতুন ভূতের গল্প বলে -
ঘড়িতে তখন তিনটে মতো হবে
গেলেন সবাই যে যার মতো চলে।


দারুণ ভয়ে রাত কাটিয়ে তিনি
ভোর হতেই পৌঁছে গেলেন থানা-
রুদ্ধশ্বাসে দারোগা বাবুর কাছে
বিস্তারিত বলেন ব্যাপারখানা ।


ব্যাখ্যা শুনেই অবাক দারোগাবাবু
পটল বাবুর বাসায় আসেন ধেয়ে -
ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে গিয়ে তিনি
আসেন ফিরে কিচ্ছুটি না পেয়ে ।


যাবার সময় বাতলে গেলেন তিনি
তান্ত্রিক এক বাসায় এনো ধরে -
তোমার সকল প্রেতাত্মারই খেলা-
ঘুচিয়ে দেবেন দারুন মন্ত্র পড়ে ।


খোঁজ করতেই সন্ধান পেয়ে সব
হাজির সটান কান্তি বাবার বাড়ি-
এদিক ওদিক তান্ত্রিক সব খুঁজে ;
অগত্যা খোঁজ পেয়েছেন তারি ।


বেজায় প্রবীণ, ঊনসত্তর বুড়োর-
বলতে গেলে তেমন যে নেই লাজ
টাকা পয়সার বিষয়টিতে এলেই;
কান্তি মোদের ব্যাপক ধুরীবাজ।


আদ্য-প্রান্ত ব্যাপার-স্যাপার শুনে
তান্ত্রিক এক বুদ্ধি আঁটেন ভারি -
বেচারা পটল ভয় পেয়ে যায় শুনে
"ছাড়তে হবে তোমার সাধের বাড়ি।"


তার ঠিক পনেরো দিনের পরেই -
অভাগা পটল রওনা হলেন গ্রামে :
ভূতের ভয়ে সখের বাড়িটি তার -
বিক্রি হলো বোধহয় অর্ধদামে ।


এখন পটল সুখেই আছেন বেশ -
গ্রামের কোণায় ছোট্ট একটা বাসা;
তবে আগের বাড়ি দারুণ ছিল খুব
ঐ দখিন কোণের ব্যালকনিটা খাসা।


হঠাৎ সেদিন শহর গেলেন তিনি -
হয়তো কোনো কাজ ছিল তার সেথা
আগের বাড়ির এমন রূপটি দেখে
বুকে তার বেজায় লাগল ব্যথা ।


তার ঢোকার গেটেই বিশাল ব্যানার-
লাল হরফে টুকরো টুকরো লেখা:
"কান্তি বাবার নতুন বাসায় আসুন
শনি -রবি বার চলছে ভাগ্য দেখা"


ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে নাহি পেরে
দশজনকে সুধিয়ে নিলেন তিনি -
মিনসেটা নাকি তান্ত্রিকেরই লোক ;
বাড়িখানা তার কিনতে আসেন যিনি।


বাড়ির এখন কান্তি বাবাই রাজা-
পটল বাবুর এবার ফিরেছে হুঁশ -
বোকামির এই নজির মেলা ভার ;
গ্রামে ফিরতেই পটল হঠাৎ বেহুঁশ ।


ডাক্তারেরা জবাব দিলেন সোজা-
পটল বাবুর চোখ যাবেনা খোলা :
বোকামির এক হৃদরোগেতেই শেষে -
পটল রায়ের অবাক পটল তোলা।


-------------------------------------------------
          শুভদীপ চক্রবর্তী