সোনা বউ বাপের বাড়ি নাইওর গেলে
আমি আনতে গিয়েছিলুম তাঁকে --
চাঁদের ফালির মতো ঠোঁটে উষ্ণ চুম্বন দেয়ার ফাঁকে
সোনা বউ রাইতে কাইন্দা কাইন্দা কইছিলো
ওগো শুনছো?
আমার ঘরটা-খালি খালি লাগে
বুকটা হাহাকার করে।
আমার একটা সন্তান লাগবো
এসো দু'জনে হাত তুইলা কাইন্দা কাইন্দা প্রার্থনা করি
উপর ওয়ালা যদি মুখ ফিরা তাকায় ---
তাহলে আমার আন্ধার ঘরটা আলোকিত হইবো।
এই শুনছো?
এই কোল জুড়ে একটি ফুটফুটে শিশু আসবে
সারা বাড়ি দৌড়ে দৌড়ে হাসবে-খেলবে
আমি তাঁকে গোসল দেওয়াবো, খাইয়ে দিবো
স্কুলে নিয়ে যাবো, অ,আ পড়াবো
আমি তাঁকে মানুষের মতো মানুষ বানাবো।
সোনা বউ বায়না ধরেছিলো বাপের বাড়ি থাকার
ফিরে গেলাম আমি একলা একা ঘরে
কিছুদিন পর খবর দিলো
একবার আইসা আমারে শেষ দেখাটা দেইখা যাইও
আমি মা হতে যাচ্ছি আর তুমি বাবা।
ডাক্তার কইছে পেটের ভিতরে বাচ্চা উল্টো হ'য়ে আছে
আমার খুউপ ভয় হচ্ছে
আমি মনে হয় আর বাঁচুম না
শেষ দেখাটা দেইখা যাইও।
হেমন্তের সকালে দেখতে গিয়ে তাঁকে
ডাক্তার দেখানোর কথা ব'লে নিয়ে আসি ঘরে।
যখন আসি আলমপুর, কান্ড ঘটায় হৈ-হুল্লোড়
লাফিয়ে নেমে যায় সি.এন.জি হতে --
যাবেনা বাড়ি হয় যদিও কেল্লাফতে।
সোনা বউ আমার সাথে দিয়েছিলো আড়ি
আর কক্ষনো যাবেনা সে বাড়ি।
জোর খাটিয়ে নিয়ে যা-ই ঘরে
কাটতে থাকে দিন হেঁসে খেলে।
গুঁড়া মাছ আর লেবু ছাড়া খেতে পারতো না ভাত
সোনা বউয়ের লাগি জাল্লাদের সনে জাল টানলে যাবেনা মোর জাত
সন্তান থাকবে হৃষ্টপুষ্ট বউ যদি খেতে পারে ভাত।
জাল্লার সঙ্গে জাল টেনে মাছ আনি ঘরে
সোনা বউ ভাত খায় আচ্ছা মতো করে
দশমাস দশদিনে উঠে যখন ব্যথা
ডেকে আমায় ব'লে শুনে যাও একখানা কথা
হাত খানা চেপে ধরে ব'লে করে দিও ক্ষমা
ছিঁড়ে যাচ্ছে মোর কলিজা, কি দেবো উপমা।
রক্ত রাঙা, অশ্রু ভেজা চোখ
কেঁদে কেঁদে ভাসিয়েছে বুক
মাটি কামড়িয়ে আহারের পর দ্যাখতে পায় ---
প্রিয় সন্তানের প্রিয় মুখ --
ভুলে যায় সকল দুখ।
সন্তানের বয়স ত্রিশ দিন হলে
বাপের বাড়ি নাইওর যায় কলিজার ধন ল’য়ে।
কিছুদিন পর শুরু হয় আনাগোনা
আসবে না বাড়ি যদিও দেই কলিজা ভুনা।
দুই মাস পর কলিজা ছেঁড়া ধন এসেছে ফিরে বাড়ি
সোনা বউ আসেনি ফিরে আর কোনো দিন --
একযুগ কেটে গেলো চোখে আসেনি নিন্দ্
সোনা বউ সোনা পেয়ে গিয়েছে ভুলে কয়লা -
চকচকে সোনা, কয়লার গায়ে যে ময়লা।