মাস শেষ হবার আগেই হিসেব চলে আসে
বাসা ভাড়া, চাল-ডাল ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় ত্রিশ হাজার
তাতে ছেলেমেয়ে এবং প্রিয়তমা স্ত্রীর কিচ্ছু লিখা থাকেনা
পিতা-মাতা, ভাই-বোনও প্রিয়তমার সাথে থাকে না।


সংসারের এতো ঝাই-ঝামেলা পোহাতে পারবেনা
এতো খাটুনি খেটে ভাঙতে পারবেনা কোমর
কোন এক বসন্তে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলেছিল
মা দ্যাখতে পারে না প্রিয়তমাকে,খুঁটা দেয় সর্বদা।


থাকতে শুরু করে অভিজাত শহরের মস্ত বড় এক ফ্লাটে
মাস শেষে গুনতে হয় ভাড়া হাজার পনেরো
মরুর ধূলিকণা গায়ে মেখে উত্তপ্ত রোদে পুড়ে আমি পাই হাজার ত্রিশ
মাস শেষে শূন্য হাত অবশিষ্ট থাকে না কিচ্ছু।


অশ্রুসিক্ত নয়নে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলছিলেন এক প্রবাসী
কোম্পানির খাবার, স্বাদ নেই তরকারিতে, বৃদ্ধাঙ্গুলির মতো মোটা চাল
ভাত করতে পারিনা গলদ করন, পড়ে থাকি আধপেটা হয়ে
হৃদয়ের বিষাদে মরবো যে বিষপানে সেই পয়সাকড়িও মাস শেষে থাকেনা পকেটে।


উনত্রিশ দিন রাতে একই হিসেব করে ঘুমায়
ত্রিশ দিনের সূর্যোদয়ে পাল্টে দেয় উনত্রিশ দিনের হিসেব
শশুর বাড়ির মেহমান মাসে আসে কয়েকবার
আমার মা-বাপ, ভাই-বোনের হাত ভিজেনি বছরে একবার।


শ্যালিকা ফোন দিয়ে মাঙ্গে মোবাইল
মোবাইল ছাড়া না-কি পড়ালেখা চলেনা
এখন না-কি সবকিছু ঐ মোবাইলের ভিতরে
না দিলে প্রিয়তমা স্ত্রী অভিমান ভরা কণ্ঠে বাপের বাড়ি চলে যাবার হুমকি।


স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম মরুর বুকে
প্রতিদিন কাজে যাওয়ার সময় দ্যাখি মৃত্যুটা চোখের সামনে নাকের ডগায় ভাসে
কনকনে শীতে গায়ের জামা ভিজে ঘামে
শুকায় আবার মরুর তপ্ত রোদে।


যখন ভাবি দেশে যাবো
প্রিয়তমা ব'লে তুমি চলে এলে না খেয়ে রবো
মুখে শুনে এ কথা, কবর দেই স্বপ্ন যথাতথা
দেখবো না আর প্রিয়জন, মরুর রোদে পুড়বো আজীবন।


কষ্টে জর্জরিত, রৌদ্রের তাপে ঝলসিত মুখ
এমন নিদারুণ নির্মম কথা শুনে কেঁপে উঠেছিল মোর বুক
নিজের অজান্তেই বেড়িয়ে এলো জল, হারিয়ে ফেলেছিলাম হৃদয়ের বল
সোনালী স্বপ্ন বিসর্জন দেয় প্রবাসীরা, বেহিসেবী উড়ায় দেশিরা।