মনে হচ্ছে এক কোটি বছর ধরে দ্যাখিনি তোমার মুখখানা
চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তোমার স্মৃতি।
কালবৈশাখীর ঝড়-ঝাপটা থেকে বেঁচে থাকতে
যে ঘরটায় আশ্রয় নিয়ে দিব্যি আরামে ঘুমাই --
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে,নোনতা জলে পুড়িয়ে দেহ
খুব যত্ন করে নিজহাতে তুলে ছিলে ---
চারপাশে পলেস্তার দিয়েছিলে লাল মাটির।
মাটির ঘরটির মাটির প্রতিটি ভাঁজে তোমার স্মৃতি
সারা উঠোন জুড়ে তোমার স্মৃতি --
উঠোনের কোনের লিচু গাছটার প্রতিটি সবুজ পাতার ভাঁজে তোমার স্মৃতি --
যেদিকে তাকাই সেদিকে-ই তোমার স্মৃতি।
মনে হচ্ছে এক কোটি বছর ধরে দ্যাখিনি তোমার মুখখানা
এক কোটি বছর ধরে খাইনি তোমার হাতের সুস্বাদু রান্না
কেউ দ্যাখেনা তোমার তরে আমার এ নীরব কান্না।
এ-তো যত্নে তৈরি ঘর ছেড়ে ঘুমাচ্ছো তুমি অন্ধকার ঘরে
কবে ভাঙবে তোমার ঘুম?
কবে জেগে উঠবে তুমি?
তোমাকে ছাড়া ভালো নেই আমি
খাই-দাই, ফুর্তি করি ঠিকই কিন্তু ভিতর থেকে ভালো নেই
তুমি ছাড়া মৃত্যুপুরী, নরক এই ভূমি।
বুকের উপরে রাখা মাটির দলা --
ফেলে দাও মা তুমি দিয়ে নড়াচড়া
তোমাকে ছাড়া এই জগতে জিন্দা মরা।
কতো ধকল গিয়েছে দিয়ে উপর --
এদিক ওদিক ঘুরেছি হৃদয়ে পরে ব্যথার নুপুর
কতোবার হোঁচট খেয়ে পড়েছি হ'য়ে উপুড়
কষ্টের বৃষ্টি ঝরেছে উপর টাপুর-টুপুর
একলা একা কতো ঘুরেছি রাতদুপুর।
মনে হচ্ছে এক কোটি বছর ধরে তোমার কোলে মাথা রাখিনি
মা ব'লে তোমাকে ডাকতে পারিনি
তোমাকে মা ডাকতে না পারার তৃষ্ণা --
একশো কোটি বছর ডাকলেও মিটবে না
বড়োই তৃষ্ণার্ত, পিপাসিত এ হৃদয়।
বাবা-র শরীরটাও আজকাল ভালো যাচ্ছে না
তোমার শোকে,ছেলে হারা শোকে পাথর হ'য়ে গিয়েছে
মরুভূমির মতো হ'য়ে গিয়েছে বাবা-র হৃদয়।
চশমা লাগিয়েও আগের মতো স্পষ্ট দ্যাখতে পারেনা
সবকিছুই ঝাপসা দ্যাখে --
চোখের জলও শুকিয়ে নাকি সাহারা মরুভূমি হ'য়ে গিয়েছে
এখন নাকি জল না বেরিয়ে তাজা রক্ত বেরোয়।
এখন তো আর চাকুরী নেই
অবসর নিয়েছে কয়েক বছর হলো --
হোমিওপ্যাথিক দোকানটাতে গিয়েও আর আগের মতো বসতে পারেনা
ফজর নামাজ শেষে ঝাপসা চোখে কোরআন তিলাওয়াত করে ---
দু'হাত উঠিয়ে দোয়া মাঙ্গে তোমাদের জন্য।
প্রবাসে যখন মাঝেমধ্যে উপবাস থাকি --
তখন খুউপ মনে পড়ে তোমাকে --
মনে হয় তোমাকে এক কোটি বছর ধরে দ্যাখিনা।


১৮/০৯/২০২২ইং, সৌদি আরব