দেহটা প্রতিদিন রৌদ্রে পুড়ে পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে কখনো ভাবিনি
দালালের মাধূর্যময় ও মনোগ্রাহী কথার খপ্পরে পড়েছিলাম।
বিশাল বড়ো অফিস, লিফটে উঠানামা --
শতাধিক এসি লাগানো,গরম কখনো স্পর্শ করবে না
বেতনও হবে সত্তর থেকে আশি হাজার
জীবন কেটে যাবে হালে রাজার।
দালাল স্বপ্ন দ্যাখানোর পর থেকে --
আমিও প্রতিরাতে ঘুমের ঘোরে রিয়াল গুনতাম
শুনতাম সুখ পাখির গান,বাড়ি বানাতাম ইত্যাদি ইত্যাদি।
বেঁচে বাবার বসতবাড়ী, দিয়েছিলাম পাড়ি --
কোথায় দালানকোঠা, কোথায় ঘরবাড়ি
যতদূর চোখ যায় বালি আর বালি।
মরুর বুকে কন্টেইনার পেতে দিয়ে মুদীর বলে
এটাই হলো তোমার রাজপ্রাসাদ --
এখানেই খানাদানা, ঘুম, প্রস্রাব-পায়খানা
মরুর বুকে ঘুরে বেড়ানো উট আর বকরী গুলো দ্যাখছো
এইগুলোকে মায়ের আদরে লালনপালন করা তোমার কাজ।
বাবার বসতবাড়ী বিক্রি করে এসে,বিস্তৃত মরুভূমিতে আমি এখন কাঁদি
দালালের চৌদ্দ গোষ্ঠী নিয়ে গালি দিতে ইচ্ছে করে
প্রখর রোদের তাপে চামড়া পোড়ে যায় --
তৃষ্ণায় ফেটে যায় কলিজা।
লাখ-লাখ টাকা খরচ করে আমি রাখালি কিনেছি
আন্তর্জাতিক রাখাল হয়েছি,
এই মরুভূমিতে কথা বলার মতো কেউ নেই
বোবা উট গুলোর সাথে রাতদিন বিড়বিড় করি
ওদের ভালোমন্দের খোঁজ রাখি।
আমার মুদির চাল-ডাল, শাকসবজি,পানি এবং গ্যাসের সিলিন্ডার এনে দিয়ে যান
নিজেই রাধুনি হয়ে রান্নাবান্না করি --
কখনো হলুদ কিংবা মরিচ বেশী, লবন কম
এইভাবে রেঁধে আধপেটা হয়ে পড়ে থাকি।
দেশেও যেতে পারিনা --
এখানে তো ঘুমানোর মতো একটি কন্টেইনার পেয়েছি
দেশে তো ভিটাবাড়িও আর নেই, ঘুমাবো কোথায়।
আমার মতো হাজার প্রবাসী দালালের খপ্পরে পড়ে ভাসছেন দরিয়ায়
এয়ারপোর্ট,অফিস, কফিশপে দিবে কাজ --
বিদেশের মাটিতে করবে রাজ --
দালালের মুখে শুনে এমন কথা, লাখলাখ টাকা তুলে দিয়ে
কেউ হয়েছে রাখাল, কেউ ইমারত শ্রমিক
আবার কেউ মাজরার কাজ নিয়েছে খোঁজে
ঋণের দায়ে কাজ করছে দুচোখ বুঁজে।