রুদ্রের ছবিটা যখন দ্যাখি খুব মায়া লাগে
ভিতরটা মুচড়িয়ে চোখে জল চলে আসে!
বুকের ভিতর সৃষ্টি হয়েছিল অবহেলার এক অন্ধকার কারাগার
আমৃত্যু ভোগ করে গিয়েছে নিষ্ঠুর ভালোবাসার নির্মম প্রহার।
মানুষ কষ্ট পেলে একেবারে দুমড়ে যায়
রুদ্র বীরপুরুষের মতো অবিচল থেকে
সীমাহীন কষ্ট বুকের মরুভূমিতে দাফন করে বলেছিলেন
"ভাল আছি, ভালো থেকো -
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো"।
জীবনের মূল্য একদমই ছিলোনা তার কাছে
নিজেকে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে লোকান্তরিত হয়েছেন।
রুদ্রের সাথে কোথায় যেনো আমার একটা মিল খুঁজে পাই
গভীর একটা সম্পর্ক অনুভব করি!
যখন তার কবিতাগুলো পড়ি খুব মায়া লাগে
নিজের অজান্তেই কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে পান্ডুলিপির উপর।
জীবনের বাকি পথ যার কাঁধে ভর দিয়ে চলবেন বলে শপথ নিয়েছিলেন
অবহেলার চাবুকে আঘাত করেছে
হৃদয়ে ঝরিয়েছে রক্তের মুশলধারা বৃষ্টি।
দমকা হাওয়ায় যখন স্মৃতির কপাট খোলে যেতো
বুকে পাথর বেঁধে, শরাব পিকে পিকে নির্ঘুমতায় কাটিয়ে দিতো হাজার রাত্রি!
ব্যথিত হৃদয়ে রুদ্র,রৌদ্রের মতো ছড়িয়েছে যে দীপ্তি
প্রজন্ম গ্রহণ করে পেয়েছে তৃপ্তি।
রুদ্রকে যতই পড়ি,ততই মায়া লাগে
তসলিমার সাথে বিচ্ছেদের পর
শুরু হয় রুদ্রের অনিয়ন্ত্রিত বাউণ্ডুলে জীবন
শরীরের উপর নির্মম, নিষ্ঠুর নির্যাতন।
মদের গেলাস কখনো খালি হয়ে মাছি উড়েনি
খাবারে অনিয়ম, তুখোড় ধুমপান
এক সময় আলসার বসতি গড়ে পাকস্থলীতে
পায়ের আঙুলে বার্জার্স ডিজিজ!
তোয়াক্কা করেননি কখনোই
তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন
"ভাল আছি, ভালো থেকো -
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো"।
খুব মায়া লাগে রুদ্রের জন্য
একদিকে যমদূত অন্যদিকে কবিতাকে ভালোবেসে
কবিতা পাঠে লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটে চলা
বিভিন্ন শহরের অলিতে-গলিতে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে!
মান্নাদের কফি হাউজের আড্ডাটির মতো
কবি মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, সাহিত্যিক আহমদ ছফা, চিত্রকর সমর মজুমদার, সঙ্গীতশিল্পী কিরণচন্দ্র রায়, কবি কাজলেন্দু দে প্রমুখের আলাপচারিতায়
বিকেলে জমে উঠতো কবি অসীম সাহার প্রেসের আড্ডাটি।
একদিন রুদ্রকে দেখতে না পেয়ে সবার মুখ মলিন
কবি অসীম সাহার কাছে জানতে পারলেন
মেঘে ঢেকে ফেলেছে দীপ্তি ছড়ানো রুদ্রকে!
পেপটিক আলসার বাঁধিয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ২৩১ নাম্বার কেবিনে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন!
আহমদ ছফা রুদ্রের একটি হাত তার হাতের উপর রেখে বলেছিলেন ;
"তুমি তো ভালো হয়ে গিয়েছো রুদ্র
ধৈর্য্য একদম হারাবে না -
আবারো জমে উঠবে আমাদের আড্ডা "।
এই যে রুদ্র ঢাকা পড়লো মেঘের আড়ালে
মেঘ সরিয়ে আর উঠতে পারেনি বাংলার সাহিত্যাকাশে।
রুদ্রের ছবিটা যখন দেখি খুব মায়া লাগে
অজান্তেই চলে আসে জল!