ভাবুক
পেটে বেঁধে আছি আরবের তাবুক
জ্বলছে না আগুন চুলায়
বসন্তের এই বেলায় বারান্দায় বসে আনমনে কলমের নিব কামড়াচ্ছো
নিজে নিজেই হেঁসে যাচ্ছো, হঠাৎ মুচ্ছো জল
কাব্য সাধনায় পেয়েছো কি কোনো ফল।
অনেকে তোমাকে কবি বলে ডাকে
তোমার এই কবিতা আমার ক্ষুধা মিটাবে না
আগুন জ্বালবে না চুলায়, কিসে ক্ষুধা ভুলাই
তোমার কাব্য ঢেকে দেবেনা আমার নগ্ন দেহ
ঔষধ যোগায়ো দেবেনা অসুস্থ সন্তানের।
দ্যাখতে পাওনি ভাবুক --
ধপাস ধপাস চিবিয়ে যাচ্ছো চিবুক -
শাড়ীর আঁচলটা ছিঁড়ে গিয়েছে কয়েক মাস আগে
বিভিন্ন জায়গায় ছেঁড়া বেলাউজ এবং সায়া --
তোমার হৃদয়ে কি জন্মায় না একটুও মায়া।
আমাকে যখন এনেছিলে বাপের বাড়ি থেকে
কি নাদুসনুদুস দেহ ছিলো আমার --
তোমার ঘরে এসে পাটের আঁটি হয়ে গিয়েছি
উপোস থেকেছি কতো হাজার রাত্রি।
তুমি আগে তোমার বউ-বাচ্চার মুখে খাবার দাও
এই জঞ্জালের পিছে সময় নষ্ট করিওনা ফাও
তারপর তুমি মানবতার গান গাও
তা নাহলে সব পান্ডুলিপি চুলায় দাও।
আকাশের দিকে তাকিয়ে আছো ক্যান?
এবার ভাঙো তোমার ধ্যান
বাপের বাড়ি চলে যাবো চুকিয়ে সব লেনদেন।
অনেক হজম করেছি তোমার নির্মম অবহেলা
খাওয়াতে পরাতে না পারলে বিয়ে করেছিলে ক্যান
তোমার সংসারে থেকেছি খেয়ে ফ্যান।
আমার জায়গায় যদি হতো অন্য নারী
তোমার কপালে ঝাঁটা মেরে কবেই দিতো পাড়ি
আজকের আগে কখনো দ্যাখাইনি তোমায় ছেঁড়া শাড়ী।
দুটি সন্তানের মা হয়েছি তাতে হয়েছে কি
হাজারো পুরুষ নিয়ে যাবে মাথায় মাখিয়ে ঘি
পাড়াপড়শি দিবে তোমার উপর ছি-ছি।
নিজের স্ত্রী সন্তানদের রেখে উপোস
কাব্য লিখো নিয়ে অনাহারীর পক্ষ
সাজতে চাও তুমি আধুনিক কালের যক্ষ
আমাদের নিদারুণ দিনাতিপাত বিদীর্ণ করেনা তোমার বক্ষ।
রাজহাঁস গুলো ঠুকরিয়ে ঠুকরিয়ে খাচ্ছে দূর্বাঘাস
এমনভাবে তাকিয়ে আছো যেনো হয়েছে সর্বনাশ
এবার ছাড়ো দম আঁটকে রাখা নিঃশ্বাস --
এমন কিছু করো কবি যেনো তোমার প্রতি জেগে উঠে আমার হারানো বিশ্বাস।
খাতা-কলম নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অলস বসে না থেকে
এবার সংসারে হালটা একটু ধরো --
একটু শেখো দায়িত্ববোধ কাকে বলে
ভাসিয়ে দিও না এই সংসারটা অথৈজলে।
ছাইপাঁশ লিখে তোমাকে কবি হতে হবেনা
রবি হয়ে উজ্জ্বল আলো দাও এই সংসারে
তিনবেলা তিন মুঠো খাবার তুলে দাও মুখে
লজ্জা ঢাকার বস্ত্র দাও বুকে।
আমি হতে চাইনা বাউণ্ডুলে,ছন্নছাড়া কবির সোনা বউ
হতে চাই দিনমজুর, শ্রমিকের সাহসী অর্ধাঙ্গী
পুরুষের মতো পুরুষ হয়ে ধরো পূর্বপুরুষের লাঙ্গল
হুহু করে ভেসে আসবে সংসারে মঙ্গল।