বহুদিন পর দেখা রহিম দাদার সাথে,
হাঁটতে হাঁটতে কথা হলো দু’জনে পথে।
              দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, দাদা ভাই!
কি আর বলব! এখন তো আর আগের দিন নাই।
সময় বড়ই দুঃসময়! আজ বয়সের ভারে বড় ক্লান্ত,
এতো বড় সংসারের ঘানি টানতে আমি উদভ্রান্ত।
দুধ আর মাছ ছাড়া খাইনি কোন দিন ভাত,
আর আজ! অনহারে, কষ্টে কাটে প্রায়ই রাত।
বললাম দাদা, আজ এ বয়সে আক্ষেপ কেন এতো?
যখন যে কাজ, সে কাজ করি নাই। অভিযোগ শত।
শুনেছি তোমার গল্প অনেক, আজ রূপকথা লাগে!
কালের স্বাক্ষী উদাহরণ যে তার আমি। বড় ব্যথা লাগে!
শুনেছি দুধ ভাত খেতে হাতের কব্জি ডুবিয়ে ডুবিয়ে,
ক্ষেতের তরকারি খেতে, পুকুরের সতেজ মাছ দিয়ে।
ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াতে সারা গ্রাম জুড়ে,
বীরদর্পে এগিয়ে যেতে, সবাই বসত নড়েচড়ে।
কি আর বলব দাদাভাই! সবই কপালের ফের!!
না দাদা। নিয়তির দোষ কেন দিবে, দোষ কর্মের।
তখন ভাবতে, বাপ-দাদার সম্পদ কে হিসাব কষে!
শুয়ে বসে কয়েক পুরুষ খেলেও শেষ হবে না শেষে।
জমিদারের ছেলে তাই ছিল দম্ভ হামবড়া ভাব,
ছোটবেলা থেকে পেয়েছিলাম জমিদারের স্বভাব।
দাদা গেলো, বাবা গেলো; সবই চল ছিল ভালো,
                   তারপর কোথায় যেন কি হলো!
অসখে বিসুখে আর প্রজাবিদ্রোহে ক’দিনেই সব গেলো।
অবশেষে আজ আমার এ অসহায় করুণ অবস্থা হলো,
ছোটবেলা থেকে দেখতাম দিবাস্বপ্ন। আমি জমিদার,
আমার কথায় উঠবে বসবে। না বলার সাধ্য কার।
দাদাভাই! পারিনে আজ এ বয়সে করতে কোন কাজ ,
তবু করতে হয় কাজ। দাদাভাই কর্মে কখনো করো না লাজ।
টরমল চোখে বলল, দাদাভাই চড়তাম ঘোড়ায়। আর আজ!
এই দেখো দাদাভাই টানছি ভ্যান। বড়ই কঠিন এ কাজ!
কোমর থেকে গামছা খুলে  মুছে নিলো চোখের জল,
বলল, দাদভাই! আর কত কাল বইব পাপের ফল!
                                                          


  (২৮জুন২০০৯)