চিন্তার রাজ্যে মানুষ ভিসা পাসপোর্ট ছাড়াই ঘুরে বেড়ায় দেশদেশান্তর। মুহূর্তেই পার হয় গিরি বন প্রান্তর। মন যেন এক বিমূর্ত চিল!  পলকেই ছুঁয়ে ফেলে আকাশের নীল। সবুজ জমিন, রূপালি জলের ঢেউ; মানুষের মনোজগত তারচেয়েও যেন বিসৃত কেউ। ভাবনার আকাশে কখনও রোদ্দুর, কখনও কালো মেঘ। কখনও রঙিন ঘোড়ায় সওয়ার হয় দূরন্ত আবেগ। হ্যাঁ। এই আবেগের কারণেই মানুষ কাঁদে, হাসে, ভালোবাসে আবার বিরহের সাগরে ভাসে। মানুষের আবেগ প্রকাশের আশ্রয় হলো ভাষা। ভাষা আবার বিচিত্র ব্যঞ্জনায় ঠাসা। গল্ল, কবিতা, নাটক, সাহিত্য আরও বেয়ারা, আরও বেগানা। মানে না বন্ধন, ক্রন্দন, দেশ, কাল, সময়ের সীমানা। কবিতা সুন্দরী তো আরও বেপরোয়া। আরও বেশি ক্ষুরধার। যখন তখন যার মনে খুশি বাসা বাঁধে, অনায়াসে অতিক্রম করে হৃদয়ের কাঁটাতার।


কবিকে বলা হয় শব্দচাষী, ভাবের সঞ্চালক। কবিরাই তুলে আনে সাহিত্যের সঞ্জীবনী সুধার বিশুদ্ধ আরক। কবির লিখা প্রতিটি কবিতার পেছনে থাকে তার জন্মের ইতিহাস। কিছু আম কিছু খাশ। এমনি কিছু কবিতার জন্মের খাশ গল্প অল্পবিস্তর বলার বাসনা পরিহার করতে পারিনি। ভাষা নেই, তবুও লিখার আশা ছাড়িনি।


আসল কথায় আসি। বাংলার ঋতু বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য বড্ড ভালোবাসি। গাঁয়ের পথঘাট, ফসলের মাঠ, সবুজ অরণ্যানী আমাকে ভীষণ টানে। কেমন যেন অপার্থিব সুখের দোলা দেয় প্রাণে। ৮ জানুয়ারি ২০২১ সাল। মনোরম এক শীতের সকাল। হঠাৎ উদয় কবিতারানী। কোথা থেকে এসে দিলো স্বপ্নের হাতছানি। সর্ষে ফুলের ছবি দেখে মনের মাধুরী মেখে ফেসবুকে পোস্ট দিলাম-


হলুদ জলের ঢেউ


শীত সকালে গিন্নি বলে চায়ের কেটলি হাতে
ফ্রেশ হয়ে নাও, ভোরের আলোয় হাঁটতে যাবে সাথে।
চায়ের সাথে চুমুর কণা মিশিয়ে চুমুক দিই
রূপের কিরণ চোখে মেখে ওমকে শুষে নিই।


ওঠোন জুড়ে নির্জনতা আর জাগেনি কেউ
মাঠের পানে চেয়ে দেখি হলুদ জলের ঢেউ।
দৃষ্টিসীমার শেষ অবধি সর্ষে ফুলের মেলা
মন জুড়ালো বাংলা মায়ের মোহন রূপের খেলা!


শিশির কণা পা ধুইয়ে দেয় পুষ্প পরাগ মাখে
আলোর নাচন পাতায় পাতায় পথের বাঁকে বাঁকে।
প্রজাপতির রঙিন ডানা, ঘুঘুর উদাস ডাকে
বিভোর হয়ে দেখি আমার প্রাণের বাংলা মাকে।
….....................................................


অনেকগুলো সুখকর মন্তব্যের মাঝে দৃষ্টি কাড়েন বন্ধুবর, কবি অজিত কুমার কর। কিছু ফুলের ছবিসহ তিনি লিখেন-


"শীত-বিকেলে টোটোয় চড়ে পাড়ি ক্ষীরাই-তটে
হেঁটে হেঁটে পেরোই নদী স্টেশন সন্নিকটে
পায়ে পায়ে এগোই যত
ফুলের হাসি দেখছি তত
ওদের রঙে আমরা রঙিন আঁকছি মানসপটে।"
.........................................................


পড়ে আপ্লুত ও বিমোহিত হলাম। তার মতো করেই জবাব দিলাম-


অনন্য উপহারে মুগ্ধ হলাম সম্মানীয়।
অশেষ ধন্যবাদ ও অবিরাম শুভ কামনা কবিপ্রিয়।


শীত যাপনে পথের টানে ছাড়ছি যখন ঘর
রঙবেরঙের ফুলের পরাগ মাখছি দেহের পর
গারবেরা আর মোরগঝুটি
দোলন চাঁপা জুঁই দোপাটি
ডালিয়ার ক্ষেত এনে দিলেন অজিত কুমার কর।
..............................................................


কিছুক্ষণ পরেই আবার জবাব এলো-


"* পদ্মাপারের বন্ধু কবি সর্বদা তৎপর
আগেভাগেই বানিয়েছে সরষেখেতে
ঘর।
পাশেই আছে মোরগ ঝুঁটি
চলছে এখন শীতের ছুটি
জারবেরা জুঁই হলদে গাঁদার পাচ্ছে সমাদর।"
.........................................................


মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে হলাম। একই কায়দায় জবাব দিলাম-


গঙ্গা পাড়ের বন্ধু কবি অজিত কুমার কর
ফুলে ফুলে দিলেন ভরে উষর পদ্মার চর
গ্ল্যাডিওলাসের মোহন বাহার
হদয়পদ্ম পাপড়ি যে তার
আকুল করে আপন গুণে মৌ পিয়াসী ভ্রমর।
.........................................................


অবাক করে দিয়ে গোবাক তরুর সারির মতো মন্তব্যের ঘর ভরে দিচ্ছেন একের পর এক কবিতায়। আমার কবিতার জের টেনে কাব্যকানুন মেনে তিনি আবারও লিখলেন-


"ফুলকাননে ভ্রমর ওড়ে আর ওড়ে মৌমাছি
প্রজাপতি জানিয়ে দিল 'আমিও সাথে আছি।দুই বাংলার দুজন কবি
পাঠাচ্ছ বেশ ফুলের ছবি
আগামীকাল চলে এসো খেলব কানামাছি।"
........................................................


হৃদয়ের কতটা কাছাকাছি হলে কানামাছি খেলার আহ্বান করতে পারে! তাও আবার কবিতায়। জবাব দিলাম অপার মুগ্ধতায়-


প্রজাপতির রঙিন পাখায় বেঁধে তোমার মন
বাংলাদেশে এসো বন্ধু পেরিয়ে পাহাড় বন
থাকবো আমি পথ চেয়ে
শিশির জলে শুদ্ধ হয়ে
বুকে ধরে করবো দৃঢ় সম্প্রীতির বন্ধন।
....................................................


মন্তব্যের গন্তব্য যেন কাব্য লড়াইয়ের মাঠ। চোখের সামনে মেলে ধরেছে কবিতা সুন্দরীর শরীরের চেনা পথঘাট। আবারও জবাব-


"সাধ্য কী যে আটকে রাখি, আমার বাউল মন
সর্বদা তো ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ মানে না বন্ধন।
এ মন ঢাকা পৌঁছে গেছে
দুয়ার খোলো, কে এসেছে
কতবার যে আসে যায় ও' দুরন্ত এমন!"
....................................................


চোখের পাতায় নিদ্রাদেবী সুড়সুড়ি দিচ্ছে। জাগিয়ে রাখাই যেন কবিতা সুন্দরীর ইচ্ছে। জবাব দিলাম-


চেনা স্বরের ডাক শুনে যেই দৌড়ে খুলি দোর
মন বারান্দা শূন্য দেখে কাটে স্বপ্ন ঘোর
ছুটে সময় ভেলা
দারুণ অবহেলা
ব্যথার বরফ গলে ভাসে চোখের সমুদ্দুর!
.........................................................


অবাক করে দিয়ে তিনিও লিখলেন-


"ব্যথার বরফ সাগর থেকে নিলেম আমি তুলে
হৃদ্ মাঝারে রেখে দিলেম কষ্ট যেয়ো ভুলে।
         নিত্য আমি তোমারে পাই
         সারাজীবন তা পেতে চাই
তোমার হাসি বিরাজ করে প্রস্ফুটিত ফুলে।"
...........................................................


প্রশংসাকীর্তনে ভালোবাসার হৃদয় খোলা রাজ্যপাট যেন আমার দখলে! আমিও আবেগে আত্মহারা। ভালোবাসার আবেদনে দুর্বার ছুটে ভালোবাসা বিগলিত ধারা। আমি আবার লিখি-


নিত্য দেখি ফুলের হাসি, তোমায় দেখি না যে
ফুড়ুৎফাড়ুৎ চড়ুই পাখি মন বসে না কাজে
সুখের প্রচ্ছদ আঁকা
ভালোবাসায় ঢাকা
তোমার জন্য ঘর বেঁধেছি আমার হৃদয় মাঝে।
..............................................................


এবারে আরও একধাপ বাড়িয়ে প্রশস্তিতে প্রশান্তির বারী ঢেলে দিলেন। তিনি লিখেন-


"স্থান দিয়েছ ওই হৃদয়ে, বন্ধু সদাশয়
মহানুভব ব্যক্তি তুমি প্রশস্ত হৃদয়।
    ফুলের মতোই তোমার হাসি
      জাগায় চিত্তে পুলক রাশি
এটাই যেন সর্বদা পাই তবেই বিশ্বজয়।"
.....................................................


এই বিশ্বজয়ী ভালোবাসার সম্মান জানাতে মধ্যরাতে কৃতজ্ঞতার সাথে লিখলাম-


প্রশস্তিতে মন ভরালে পুলকিত হৃদয়
আলোকিত মানুষ তুমি ভীষণ মায়াময়
তোমার জ্যোতির রেশে
গহীন রাতের শেষে
প্রভাকরের আলোয় যেমন আঁধার দূরে রয়।
............................................................


রাত প্রায় শেষ। তবুও কাটে না কবিতা সুন্দরীর সুধার আবেশ। অপর প্রান্তের সাড়া না পেয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে বেলা করে জাগি। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি লিখে রেখেছেন কবিতার অনুরাগী-


"সূর্যালোকে আলোকিত বিশ্ব চরাচর
অন্য তারা পারে না তাই রাতে আঁধার ঘর।
ভরাতে চাই আলোয় ভুবন
ধন্য তবেই মানবজীবন
ধরণি হোক স্বর্গ রাজ্য আনন্দ মুখর।"
.....................................................


খাস্তা লুচির নাস্তা চিবুতে চিবুতে জবাব দিলাম-


আলোর ধরা ঝর্ণা ধারা পুলকিত মন
শিরায় শিরায় ঢেউ খেলে যায় সুখের শিহরণ
বিভেদ পিছে ফেলে
সমতার দীপ জ্বেলে
মানুষ যেন মানুষ বোঝে আসুক এমন ক্ষণ।"
...........................................................


এখানেই আপতত আলোচনার যতি। তবে আমার বিশ্বাস এই লেখাটি তার নজরে আসলে আরও বের হবে কবিতার নাতিপুতি।


একটি কবিতার পেট চিরে দেড় দিনে এত কবিতা বের হওয়ার ইতিহাস আছে কিনা আমার জানা নাই। নমস্য কবি অজিত কুমার কর। তোমার আলোয় আলোকিত হোক বিশ্বচরাচর। জয় হোক কবিতার। জয় হোক বিশ্ব মানবতার। ধন্যবাদ ফেসবুক এবং বাংলা কবিতা ডট কম, যার মাধ্যমে এমন কবির সান্নিধ্য লাভের পথ করেছে সুগম।
১০-০১-২০২১