কবিতা লেখা আমার পেশা নয়, শখ।
শখের বশে লিখতে গিয়ে দেখতে পেলাম
জমে গেছে কবিতার জঞ্জাল।
ফেলে দিতে কষ্ট হলো।
মনে নতুন শখ এলো।
বইয়ের পাতায় গেঁথে দিয়ে
রেখে যাব আলমিরাতে।
দুই মলাটের ভাঁজে ঠিকানা পাবে
আমার চেতনার সন্তানেরা;
যাদের জন্মদেই কাঠখড় পুড়িয়ে
ঘুমিয়ে না ঘুমিয়ে।


মনে স্বপ্ন জাগে, নেচে ওঠি আবেগে
কড়কড়ে মলাটের নতুন বই হাতে নিয়ে
আমার আত্মজ ও আত্মজা পরম আদরে
বুকে ধরে চুমু খাবে বাবার স্মৃতি।
আছে যাদের কবিতা প্রীতি তারাও পড়বে যথারীতি।


নিজে বই ছাপাবো সামর্থ কই?
সঙ্গতিহীন শখ পূরণের দুরন্ত আবেগে
কেতাদুরস্ত এক প্রকাশকের দ্বারস্থ হই।
বইয়ের স্বর্গ বাংলা বাজার
প্রকাশনা সংস্থা কয়েক হাজার।
প্রকাশক রাজি প্রথম কথাতেই
আনন্দে ঘুরে মাথা,
রেশ না কাটতেই
শর্ত শুনে বাজ পড়ে মাথাতেই!
এগার ফর্মার বই (ষোল পৃষ্ঠায় ফর্মা)
তার প্রতিষ্ঠানের ব‌্যানারে করবে প্রকাশ
তবে-
তার নিকট থেকে ক্রয় করতে হবে আমাকেই।
দুইশ’ কপি বই, মূল‌্য ষাট হাজার
প্রতিকপি তিনশ’ টাকা
উষ্মা প্রকাশে বলে “চলেনারে ভাই
বড় মন্দা কবিতার বাজার।
আশি কপি দিতে হবে আমাকে মূল‌্যবীনে
এই পথে নতুন যে, তার বই কে কিনে?”
জবাব দিলাম, ভাই-
মাফ করে দেন আমি যাই।
একশ’ ছিয়াত্তর পৃষ্ঠার একখানি বই
লিখলাম রাতদিন জেগে, তার
দুইশ কপির বোঝা মাথায় নিয়ে
ফেরি করার মতো সামর্থবান কবি আমি নই।
তিনশ’ টাকায় যদি কিনি বেচবো কত?
ঝটপট জবাব “বুঝিনারে ভাই অতশত”।
বিষন্ন বদন সেজেছি মদন কবিতা লিখে
মনের শখ উবে যায় কর্পুরের মতো
অশ্রুবন‌্যা নেমে আসে চোখে।
নিজেকে শুধাই
মেধার কি কোন মূল‌্য নাই?
এ কেমন আচরণ বেনিয়ার দাস
এ কেমন শর্ত তোর, এমন শর্ত
বই প্রকাশ নাকি শুধুই নির্মম উপহাস!


৪-১২-২০১৬