‘পরী’ মেয়েটির নাম পরে জানিলাম
বারেক শুধায়ে তাহারে
পরীর মতোই রূপবতী সে
কী মধুর নাম আহারে !


বলি স্নান সারি ওহে ফুলপরী
অভিমান তব গেল ?
বাজেকথা রাখ ওই চেয়ে দেখ
খাবার দিয়েছি খাবে চল।


বিছিয়ে চাটাই বলে আরে মশাই
বকবকানি ছাড়ো
মাকে দিব দাওয়াই হাতে সময় নাই
এসো, তাড়াতাড়ি করো।


কতদিন হলো আমাকে বলো
কিবা অসুখ হয়েছে তার,
আহারে বেচারী গায়ে জ্বর ভারী
দেখাওনি কেন ডাক্তার?


গগন কবিরাজ দেখে গেছে আজ
দিয়ে গেছে দাওয়াই
তিনটে সিরাপ ভাতে করলার ঝোল
এসবই শুধু খাওয়াই।


ভাইরাস জ্বর গরম গতর
সেরে যাবে সাতদিনে
কদিন হলো- এক দুই তিন চার
আঙ্গুলে কহর গোনে।


এই পাহাড়ের কোলে ঘন জঙ্গলে
ডাক্তারই বা পাব কোথা
পেলেও বহুদূর কলমাকান্দা বা দুর্গাপুর
ভাবলেই ঘুরে যায় মাথা।


এ তল্লাটে যার জুড়ি মেলা ভার
সে এই গগন কবিরাজ
ঘোড়ায় চড়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে
মানুষের সেবা করাই তার কাজ।


কলেরা জন্ডিস বাত ডায়াবেটিস
ম‌্যালেরিয়া কালাজ্বর
সর্দি কাশি হাঁপানি শ্বাসী
গগনেরে যেন পায় ডর।


গগনের মতোই উদার গরীবের ডাক্তার
তিনিই ভরসা সাধারণ রোগে
সাদা মনের সোনার মানুষ
মানুষের বিপদে ছুটেন সাবার আগে।


বসে চোখাচোখি যেন চখাচখি
ভাত তুলে দেয় থালে
করে ফেলো সাবার শুকনো খাবার
এই ছিল তোমার কপালে।


টেংরা পুটি করে লোটোপুটি
আর জুমের পুঁইশাক
ঢেড় হয়েছে চলবে তাতেই
আর কিছু চাই না, থাক।


এতটা সকালে মাছ কোথা পেলে
হাটতো বসিবে সেই বিকেলে?
খুব ভোরে ওঠে গিয়েছি ঘাটে
ধরেছি আমি কনিজালে।


পাহাড়ি ছড়া জলে মাছে ভরা
প্রকৃতির অকৃপন দান
পাহাড়ের ঢালে নানান ফসল ফলে
এসবেই বাঁচে আমাদের প্রাণ।


বাহ সুস্বাদু ওরে মোর দাদু
রান্নাটা হয়েছে বেশ
বাংলা খাবার স্বাদ মজাদার
যে রাধে সে বাঁধিতেও জানে কেশ!


প্রশংসা শুনে হাসে মনে মনে
এ আর এমন কি হলো
মাংস পায়েশ তাও রাধি বেশ
এর চেয়ে অনেক ভালো।


লেখাপড়া করনি, কলেজে পড়নি?
হ্যাঁ, আইএ করেছি পাস
সংসারে টানাটানি জোটে না দানাপানি
এখানেই ইতি দিলাম ব্যাস।


করি চাষবাস খাটি বার মাস
চাকরী খুঁজি দারে দারে
নাই মামা কাকা নাই মোর টাকা
কে দিবে চাকরী মোরে?


আচ্ছা পরী- জিজ্ঞাসা করি
তুমি খাবে না মোর সাথে
বলে অনুরাগে অতিথি সেবা আগে
ঝোল ঢেলে দেয় পাতে।


করে ঝটপট ছুটে চটপট
হাতে লইল তালপাখা
বলে- ইস গরম যা পড়েছে না
ঘরে যায় না থাকা।


নেড়ে কচি হাত ভুলে জাতপাত
নাড়িতেছে হাত পাখা
মমতা জড়ানো গরম তাড়ানো
এইবুঝি মোর প্রাণ সখা।....(চলবে)