আমার গাঁয়ের পাশের গাঁয়ে সুনন্দিতার বাস
পিতৃহারা অনাথ কন্যার দুঃখ বার মাস।।
আয়-রোজগারের নাই যে কেহ অন্ন যোগায় মুখে
দরিদ্রতার ব্যথার পাহাড় ভর করে তার বুকে।
বৃদ্ধ মাতার ছায়ায় চলে জীবনের সংগ্রাম
লোকের মুখে ছড়ায় গাঁয়ে সুনন্দিতার নাম।
সুনন্দিতার ভাবনা শুধু বৃদ্ধা মাকে নিয়ে
মায়ের ভাবনা - কেমন করে দিবে মেয়ের বিয়ে!
সুনন্দিতা পণ করেছে করবে না সে বিয়ে
কষ্ট যত হোকনা তবু থাকবে মাকেই নিয়ে।
চাষীর মেয়ে মাটির মানুষ নিজেই সাজে চাষী
মেয়ের সাথে লাঙ্গল টানে মাতা হরিদাসী।


ছেলের মতো বর্গা জমি করে চলে চাষ
ফসল ফলায় অন্ন জোগায় করে সুখের আশ।
স্বপ্ন দেখে রাত্রি জেগে দিনে বুনে বীজ
জীবনটা তার দুঃখের কাছে দিয়ে দিছে লীজ।
ভোরবেলাতে যায় সে ক্ষেতে করতে কৃষি কাজ
পড়শীরা কয় - দস্যি মেয়ে নাই তার কোনো লাজ!
ঘৃণার চোখে তাকায় সবে মুখ বুঝে সে সয়
পরনিন্দায় কান না দিয়ে অবিচল সে রয়।
বাড়ির পিছে ছোট্ট ডোবায় করে মাছের চাষ
ভাগ্য তাদের বারে বারে করে উপহাস!
বানের জলে মাছ ভেসে যায় ডুবে জমির ধান
ভাগ্যদেবী ছেড়ে গেলেও যায় না মাটির টান।


হাল ছাড়েনি সাহসিনী শত কষ্ট করে
আশার মশাল জ্বেলে রাখে স্বপ্ন চোখের পরে।
শত দুঃখেও নতুন করে আশায় বাঁধে বুক
আঁধার রাতের শেষে নিশ্চয় দেখবে আলোর মুখ।
অবশেষে ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হয়ে
তাদের জন্য ক্ষুধার অন্ন আনলো নিজে বয়ে।
খেতের ফসল, চাষের মাছে সমৃদ্ধ সংসার
পরিশ্রম আর উদ্যমতায় ফিরলো জীবন তার।
সংসারে তার নেই কোনো আর দুঃখের হাহাকার
অবশেষে আসলো বিজয় বীর বীরাঙ্গনার।
স্বামী হলো সংসার হলো পেলো সুখের ঠাঁই
সুনন্দিতার জীবনে আজ সুখের অন্ত নাই।


সুনন্দিতার সংসারে আজ সুখের ঝর্ণা ঝরে
নিন্দুকেরা আড়ে আড়ে চোখ টাটায়ে মরে।
পরিশ্রমে ভাগ্য ফিরে হলো প্রমাণ তার
বসে থেকে আর করো না অলস সময় পার।
এসো সবাই হাত দুটোকে লাগাই দেশের কাজে
দেশ গড়ি আর ভাগ্য গড়ি সাজি নতুন সাজে।
হতাশা আর বিষন্নতা তাড়াই চিরতরে
আশার আলো দেই জ্বালিয়ে বাংলার প্রতি ঘরে।
চেতনাতে জেগে আছে আজো জাতির পিতা
এসো আমরা সবাই সাজি সংগ্রামী সুনন্দিতা।
১৮-১০-২০১৮