সাধারনঃ ওখানে কে,
নাগরিক তুমি কী নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা
আরে সোবহান আল্লাহ্
জনাবে আলা, আমির-উল-মুলক্
মাশাল্লাহ্, মাশাল্লাহ্।
কী খুশ নসীব,
তোমার দেখা মিলায়ে দিয়েছে আল্লাহ্
আলহামদুলিল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ্।
আজ এই প্রাতে,
এই পলাশীর আম্র কাননে
তোমার দেখা আবার।
মহাত্মা মান্যবর,
এজাজত চা্ই দু'টি কথা বলবার।
কী বললে নবাব বাহাদুর,
য্যোগ ব্যায়ামে রত ?
মসনদে আলা, একি স্বপ্ন নাকি সত্য ?
গোসতাকি মাফ,
নেই গোলাম, নেই ভৃত্য
এ কোন্ সাধনা তোমার
এ কেমন তোমার কৃত্য ?
কী বললে মহাধিপতি
দূরে যাব ?
না জনাব, মার্জণা কর অপরাধ।
এই নির্জণ, নিঃশব্দ প্রান্তরে
তোমার সান্নিধ্যের আবেশ আঁধারে
তোমার না বলা কিছু কথা,
তোমার না বলা বুকের ব্যাথা
শুনে যেতে চাই এই নিরব, নিথর প্রান্তরে।
নবাবেরঃ বড় নাখান্দা, নাদান চিজ
হুমকি এখনও রয়েছ তোমরা বেত্তমিজ।
আমার প্রেতাত্মার য্যোগ ব্যায়াম ভেংগে,
দূরাচার বেউকুফ, দুর্মুখ শয়তান আমারি
সংগে
আবার কেন এইখানে ?
পাপিষ্ট ক্লেদাত্মা দূরাচার
তোমাদের এহেন অনাচার
শতাব্দীর পথ ভেংগে ঘুরে আসে বার বার।
আজও যেন মোহাম্মদি বেগের তলোয়ার
ফুটো কোরে যায় আমার কলিজা,
শত সহস্রবার।
সাধারনঃ মাফি মাংগি মহারাজ,
নাগরিক কশম তোমার
আর ঐ রক্তে ভেজানো তোমার দরবার।
তোমার এ নিবিষ্ট য্যোগ ব্যায়াম ক্ষণে
যেন পলাশীর রণ ভঙ্গ রণে,
চেয়েছি দিতে শুধু একটু মাত্র ছেদ
কেবলই সময়ের একটু ব্যাবচ্ছেদ।
একটু সময়, একটু সুবচন
তোমার নিনাদ কন্ঠ থেকে যে আজ,
বড়ই প্রয়োজন।
অশ্বঃ হুশিয়ার সাবধান,
সেনাপতি আমির-উল-মুলক্ এখনি উঠবেন য্যোগ
ব্যায়াম ছেড়ে।
যে যেখানে আছ,
কুর্ণিশ ভংগিতে থাক।
দিয়ে গেলাম ফরমান,
নাহলে কাটা যাবে গর্দান।
সাধারনঃ রক্ষা কর মহারাজ !
নাগরিক আমি এক নীরেট পাপাত্মা পাপী।
আমার জীবন চলে যাবে এই প্রাতে,
হয়ত অশ্বারোহী সেনাদের হাতে।
তবুও আমিরে আলা,
তোমার সাথে দেখা হলো আজ
এ যে, মোর সৌভাগ্য সুমহান।
এমন খুশ্ নসীব, এমন বরাত
সবই যেন আল্লাহ্র দান।
তোমার য্যোগ ব্যায়ামের ব্যাঘাত ঘটাতে
চাইনি যে মহারাজ আমি।
আলবেদা, আলবেদা
হে মহান অধিপতি, হে মোদের রাজ্য
স্বামী।
নবাবঃ দাঁড়াও (গম্ভীর নিনাদ ডাক)।
কে তুমি ?
কী তব পরিচয় ?
সাধারনঃ বাংলার ক্ষুদে নরকীট
নাগরিক নগন্য এক বাংগালী খাদেম আমি।
কুল নেই, গোত্র নেই,
আছে শুধু বিড়ম্বনা আর পেরেশানি।
নবাবঃ ক্ষুদ্র নরাধম বটে !
যে দেশের রাজনীতি এখনও তস্করের
অক্ষপুটে,
যেখানে গোলক ধাঁধাঁয় কেবলি প্রজারা
মাথা কুটে,
যেখানে বেনিয়াদের দল
এখনও বেড়ায় কেবল হেঁটে,
তাইত দেখি নিরণ্ণ নরাধমে
এখনও কাঁদে এই বাংলার ধামে।
তেল, গ্যাস, কয়লা কত কিসে দেশ ঠাসা
তবুও হাহাকার,
তবুও তোমাদের হতাশা,
তবুও এখনো ম্লেচ্ছ তোমাদের ভাষা।
সাধারণঃ সালাম মহারাজ,
নাগরিক এই জলদ গম্ভীর ভাষণ কোথা পাব
আজ।
এখানে এখন গ্যাসের চিতা জ্বলে,
এখানে এখন গ্যাস নিয়ে মানুষ হোলি
খেলে।
এখানে এখন বিদ্যুতের সংকট,
এখানে তবুও রাজনীতিকদের উল্লাস
প্রকট।
এখানে এখনও কয়লার রাজনীতি,
এখানে এখনও বারুদ ফোটে জনতার
প্রতি।
এখন এইখানে এই জনপদ,
মাদক আর সন্ত্রাসীদের জাহান্নামের ফাঁদ।
এখন এখানে মা আর বোনেদের ধর্ষণ
যন্ত্রনা,
সুদূর আকাশেও উঠে মরণ কান্না।
পলাশির এই মায়াবী প্রান্তর
তাই তো মহারাজ ডুকরে কেঁদে করে
হাহাকার।
নবাবঃ চমৎকার বলেছ খাদেম,
আরো কোথাও কি চলছে এসব হরদম ?
বীর-এ-তাজ, আমির-উল-মুলক্
সময় যে বয়ে যায়,
কি কোরে সব কিছু জানাব তোমায়।
তোমার য্যোগ ব্যায়াম হয়নি যে শেষ,
কি কোরে ইতি টানি এসব কথার রেশ।
বাদশা নামদার,
জান্নাতে ফেরদৌস নসীব হোক আপনার।
এখানে এখন কেউ গ্যাস পোড়ায়,
কেউ বা বাড়ী বানায়।
কেউ ব্যাংকে টাকা জমায়,
কেউ বন বেচে খায়।
কেউ সন্ত্রাসীদের নাচায়,
কেউ সন্ত্রাসীদের গড ফাদার হয়।
কেউ নগর ভবনে নাগরদোলা খায়,
কেউ ভুমি অফিসে ভূমি বেচে খায়।
নবাবঃ
(রেগে) খামোশ, চুপ রাও !
মীর যাফর, উমি চাঁদ, রজবল্লভ
আর মীর কাশেমের দল,
এখানে কি কোরে উদয় হলো বল্।
শতেরো শতকে যারা হয়েছে বিদায়,
কী কোরে তারা আবার একুশ শতকে
হয়েছে উদয় ?
কোথায় মীর মদন আর মোহন লাল,
এখনও দাঁড়িয়ে দূরে, এ কেমন ছল।
কোথায় নাংগা তলোয়ার,
কোথায় তোমাদের অমিত ত্যেজ।
বাংলা আমার ছারখার হলো,
এখনও কেন ভেদা ভেদ ?
মোহন
লালেরঃ জয় হোক মহারাজ !
আত্মা বিদেহী আত্মা, ভগ্ন মনোরথ
তবু কেন ডাক দিলে নবাব বাহাদুর
আজ ?
বাদশা নামদার, মোহন লাল
বান্দা যে তোমার সমুখে দন্ডায়মান।
বলুন মহারাজ, আজ্ঞা কি হয়
জীবন করি আবারও কোরবান।
নবাবঃ তাহলে তুমি থামাও এই সব দেশীয়
বেনিয়াদের,
বাঁচাও স্বদেশ ভূমি।
দূর কোরে দাও বাংলা থেকে,
যত পাপী আর জাহান্নামী।
মোহনঃ কিন্তু মহামতি নামদার !
লালের লর্ড ক্লাইভ নেই,
আত্মা নেই তার আত্মাও ধারে কাছে।
বলুন মহারাজ, আপনি বলুন
যুদ্ধটা তাহলে হবে কার সাথে ?
ইংরেজ কবে ছেড়েছে এ দেশ,
মীর যাফরের কংকালেরও নেই দেখা,
পাকিস্তানীদের না-পাকিও হয়েছে দূর
তাহলে যুদ্ধটা হবে কার সাথে,
বলুন আমায়, বলুন নবাব হুজুর?
মিরঃ বেশাক যুদ্ধ হবে !
মদনের কুর্ণিশ মহামতি নবাবে আলা বাদশা
আত্মা নামদার,
গোসতাকি মাফ হয়, আমারও প্রয়োজন
হল আসবার।
বেনিয়া গেছে এ দেশ হতে,
রেখে গেছে অনুচর।
মীর যাফরও গেছে,
কোরে গেছে বংশ বিস্তার।
মোহাম্মদি বেগ হেনেছে অস্ত্র
নিজ প্রভুর বুকে,
তারই আওলাদ আজ
অস্ত্র হাতে বাংলায় ছোটে।
ঘেষেটি বেগম দিয়ে গেছে তার
নীল নকশার জাল,
তেল,গ্যাস,কয়লা, পানি
এই দেশে আজ তাই বেহাল।
মোহন লাল ভাই তুমি আমি জনতা
সবাই আমরা একাকার আজ,
বেঈমান, দুর্ণীতিবাজ ঘুষখোর, মজুতদার
এদের সংগেই আজ হবে যুদ্ধ,
যোদ্ধারা সব পর সাজ।
নমস্কার নবাবে আলা,
সময় হয়েছে ওঠার
চলুন তবে আজ।