★পংক্তি বা লাইন ও চরণ★ঃ
----------#মজনুআহাদী


*****************************
পংক্তি আর চরণ নিয়ে প্রায় অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়েন। কেউ কেউ মনে করেন- পংক্তি আর চরণ একই বিষয়। আবার কেউ মনে করেন- পংক্তি আর চরণ দুটো আলাদা বিষয়। নিম্নে পংক্তি ও চরণের পার্থক্য সম্পর্কে অালোকপাতের চেষ্টা করছিঃ


★পংক্তি/লাইনঃ
এক লাইনে সাজানো শব্দগুলোকেই পঙক্তি বলা হয়। তাহলে কবিতায় আমরা যে লাইন সাজাই সেগুলোর প্রত্যেকটিকে আমরা পঙক্তি বলতে পারি। উদাহরণ দেখিঃ


"যত অনাচার অাছে এ সমাজে
করবোই তার দূর;"


এখানে আমরা দুটো কবিতার লাইন দেখতে পাচ্ছি।  তাহলে দুটো লাইন মানে,এখানে পংক্তি ২টা।
অর্থাৎ লাইনের সংখ্যা = পংক্তির সংখ্যা।


★চরণঃ
কবিতার যে অংশে একটি ভাব সম্পূর্ণ হয় তাকেই চরণ বলে। অর্থাৎ কবিতার প্রত্যেকটি বাক্যই হলো চরণ। কবিতার বাক্য সম্পর্কেও জানা দরকার। যেমনঃ


"জ্বালাবো সমাজে এক হয়ে সব সত্যের মহানূর!"


এটা একটি কবিতার বাক্য। অার কবিতার প্রত্যেকটি স্বার্থক বাক্যই একেকটি চরণ।
.
★দু'টোর মধ্যে মিল ও অমিলঃ
চরণের উদাহরণটা যদি আমরা দেখি তাহলে দেখতে পাচ্ছি: এটা এক লাইনে সাজানো হয়েছে।


"জ্বালাবো সমাজে এক হয়ে সব সত্যের মহানূর!"


যেহেতু,  
চরণের সংখ্যা =১, আবার, লাইনের সংখ্যা=১
সেহেতু পংক্তির সংখ্যা=১
সুতরাং বলতে পারি, এখানে চরণ আর পংক্তি একটাকেই নির্দেশ করছে। অর্থাৎ চরণ আর পংক্তি এখানে একই বিষয়।
.
কিন্তু চরণটাকে যদি ১ম উদাহরণের মতো ভেঙে সাজাই:


"জ্বালাবো সমাজে এক হয়ে সব
সত্যের মহানূর!"


এখানে লাইনের সংখ্যা = ২, তাই
পংক্তির সংখ্যা= ২
কিন্তু,  চরণ কিন্তু একটাই।


তাহলে বোঝা যাচ্ছে,  
>একটা চরণ যখন এক লাইনে সাজাব, তখন চরণ ও পংক্তির সংখ্যা ১ হবে।  অর্থাৎ চরণ আর পংক্তি একই বিষয়।


>কিন্তু একটা চরণকে ভেঙে যতগুলো লাইনে সাজাব ততগুলো হবে পংক্তি।  সেক্ষেত্রে চরণ আর পংক্তি একই বিষয় নয়। যেমনঃ


"জ্বালাবো সমাজে
এক হয়ে সব
সত্যের মহানূর!"


এখানে,
লাইনের সংখ্যা= পংক্তির সংখ্যা=৩
কিন্তু, চরণের সংখ্যা= ১
অর্থাৎ, চরণ আর পংক্তি সমান নয়।


*তবে কোনো কোনো ছন্দকার তাদের বইতে চরণ আর পংক্তি সমার্থক হিসেবে ধরেই কবিতার ছন্দ বর্ণনা করেছেন।  আগের যুগের কবিতাগুলোতে চরণ আর পংক্তিতে তেমন সমস্যাও হতো না।  কারণ বেশিরভাগ কবিতাতেই চরণ হিসেবেই পংক্তি সাজানো হতো। আর লাইনও ছিল বড় বড়। তখন অপ্রবহমান ছন্দ বা অন্ত্যমিলযুক্ত কবিতা বেশি লেখা হতো এবং বিরাম বা যতি চিহ্নের ব্যবহার যথাযথভাবে করা হতো।


আর প্রবাহমান ছন্দ বা অন্ত্যমিলবিহীন ছন্দের যুগে এসে বিরাম চিহ্নের ব্যবহার কমে যেতে শুরু করে। আর গদ্যছন্দে এসে আরও কমে যায়।  আর ভার্চুয়াল যুগে এখন কবিতার লাইন বা পংক্তি হয়ে গেছে অনেক ছোট ছোট। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, কবিরা পর্বানুসারে লাইন বা পংক্তি সাজাচ্ছেন।  সেক্ষেত্রে একটি চরণ একাধিক লাইন বা পংক্তিতেই বেশি বিন্যস্ত হচ্ছে। তাই এখন "পংক্তি" আর "চরণ" ব্যবহারিক দিয়ে আলাদা হয়ে পড়েছে।


তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে, চরণ আর পংক্তির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।