ইচ্ছা করে ফিরব আবার সেই সময়টাতে,
বাটুল হাতে ছুটেছি, ডানাভাঙ্গা পাখির পিছে পিছে।
গাছের ডালে অতি যত্নে গড়া পাখির বাসা,
বুঝতে কি পেরেছি তখন ডিমের ছিল নেশা।


নাটাই সুতায় বেধেছিলাম অনেক রঙের ঘুড়ি,
আকাশ ছোয়ার ইচ্ছা ছিল সীমানা কেমনে বুঝি।
আষাঢ়েতে বৃষ্টি ভেজা সেই ফুটবল ম্যাচ খেলা,
মায়ের বকুনি বুঝতে পারিনি গড়িয়ে গেছে বেলা।


পকেট ভরা কাঁচের গুলি শব্দ ঝনঝন,
হেরেছি আর জিতেছি তা মাপলে হবে মণ মণ।
হাতের সাথে হাত মিলিয়ে তৈরী হতো শিকল,
গোল্লাছুট খেলায় যখন আসত পাড়ার সকল।


পুকুর ঘাটে গাছটির মাথা ছিল অনেক উঁচু,
লাফ দিয়েছি, হয়নি কখনও মাথা নিচু।
ফাঁকি দিয়ে খেলতে হতো নাম দাড়িয়া বান্ধা,
দ্রুত দৌড়ে ঘুরে আবার নিজের ঘরে আসা।


শীতের রাতে খেজুর গাছে বাধা রসের হাড়ি,
চেষ্টা করেও গাছের মালিক ঠেকাতে পারেনি চুরি।
বিয়ারিং লাগানো কাঠের তৈরী তিন চাকার গাড়ি,
শক্ত ছিল মেরুদণ্ড দিয়েছি অনেক পথ পাড়ি।


ক্রিং ক্রিং বেল লাগানো বাইসাইকেল দুই চাকার,
সল্প আয়ের বাবার কাছে করেছি কত আবদার।
মাঝে মাঝে স্কুলেতে দিয়ে অনেক ফাঁকি,
মাছ ধরতে গিয়েছি দূরে শাস্তি হবে জানি।


বর্ষাকালে বৃষ্টির জলে ভরেছে পুকুর নালা,
প্রকৃতির সোভা দেখেছি, ভাসিয়ে কলাগাছের ভেলা।
দাগ পেরিয়ে ধরা পড়লে হতো সবাই কাবু,
আমাদেরই জাতীয় খেলা নাম তার হা-ডু-ডু।


স্কুলেতে কলম চুরি করেছি তা মানি,
মাষ্টার মশাই বুঝিয়েছেন, আর যেন না শুনি।
চাকা বিহীন গাড়ি ছিল অবাক করা কথা,
প্রকৃতির দ্বারা তৈরী করা সুপারি গাছের পাতা।


অন্যের পকেটে হাত দেওয়া মন্দ কাজ ভাই,
বাবার পকেট মারা কিন্তু দোষের কিছু নাই।
তখন ছিল আনা আনা নোটের দেখা বিরল,
হকার এলেই যেতাম নিয়ে চারআনা আর বোতল।


বাঁশের ডগায় তৈরী করা বন্দুকের সরু নল,
যুদ্ধ হতো দু-গ্রুপের প্রয়োগ করে রণকৌশল।
মাটি থেকে ঘুরন্ত লাটিম হাতে তুলে নিতাম,
কাজটা ছিল অনেক কঠিন খুব মজা পেতাম।


বরশী দিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছি অনেক জায়গা,
ধৈর্য্য ছিল মূল মন্ত্র নিরাশ হতাম না।
এখন দেখি অনেক চ্যানেল তখন বিটিভি,
উপস্থিত বুদ্ধি বাড়িয়েছে জানি ম্যাকগাইভার সিরিজটি।


যুদ্ধের কথা শুনলে সবার ভয়ে অন্তর কাঁপে,
মোরগ যুদ্ধ খেলার সময় মূখে হাসি থাকে।
ডান্ডা মেরে গুলি যখন দিতাম অনেক দূরে,
ডাংগুলির সেই গুলির ভয়ে সবাই যেতো ঘুরে।


কানামাছি ভোঁ ভোঁ যারে পাবি তারে ছো,
ছোয়া ছিল খুব কঠিন পালিয়ে সবাই যেতো।
ওপেন টু বাইস্কোপ ছড়া-গানটি গেয়ে খেলা,
নাম যার মনিমালা পেয়েছে মুক্তার মালা।


ক্রিকেট এখন সবার প্রিয় আমার বাংলাদেশে,
অনেক কষ্টে শিখেছিলাম লাগানো ব্যাটে বলে।
লুকিয়ে থাকা খুব কঠিন খুজে ঠিকই পেতো,
লুকোচুরি খেলায় পারিনি হতে অন্য সবার মতো।


মুঠো মুঠো চালে হতো ভাতের পাতিল ভর্তি,
চড়াইভাতির রান্না খেয়ে মন হয়েছে ফুর্তি।
পুতুলের সাথে পুতুলের বিয়ে দিয়েছে আমার বুবু,
সেই দাওয়াতে খেয়েছি মিছে ঘাস পাতা শুধু।


অনেক মজার বাইস্কোপ দেখেছি দূরবীন চোখে,
কৌতুহলী সেই ছেলেবেলা রয়েছে এখনও মনে।
দূরের পথে হেঁটে হেঁটে গিয়েছি বৈশাখী মেলায়,
বড় বড় ইমারত গড়েছে এখন সেসব জায়গায়।


গ্রামের সেই মেঠো পথ ছিল আঁকাবাঁকা,
বর্ষাকালে আটকে যেতো গরুর গাড়ির চাকা।
হুনহুনা হুনহুনা শব্দে যখন পালকি চলে যেতো,
ভিতর থেকে নববধূ ঘোমটা না সরাতো।


রাখাল ছেলে বাঁশি বাজিয়ে গরু চড়াতো মাঠে,
বাঁশি বাজানোর ইচ্ছা হতো সেই সুর শুনে।
অগ্রহায়নে ফসলের মাঠ সেজেছে সোনালী রঙে,
তাকেই ঘরে আনতে সবাই খেটেছে দিনে রাতে।
নতুন ধানে তৈরী করা মায়ের হাতের পিঠা,
সেদিন আর পাবো না মা গিয়েছে মারা।


ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে এসে গেল জল,
শত চেষ্টা করেও এখন হবে না কোন ফল।
এসব এখন সবই স্মৃতি ফেরার উপায় নাই,
সৃষ্টিকর্তার অকাট্য নিয়ম পথ খুজে না পাই।