গত রাতে ওরা এসেছিলো...
দরজায় ঠক,ঠক শব্দ।
কে?
আমরা।
আমরা কে?
কোন উত্তর নেই।


আমি বিচলিত হই... .....
লাফিয়ে উঠি বিছানা ছেড়ে।
টেবিলে রাখা জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে গিলি এক-শ্বাসে।
চশমাটা চোখে দিয়ে,
এক পায়ে জুতো আরেক পা খালি.. .. ..
আমি দরজার পাশে যাই।
দরজার ও পাশে দাঁড়ানো বাংলার বর্ণমালা-
রফিক, সালাম,বরকত ও জব্বার কে দেখতে পাই।


আমি দরজা খুলে দিই!
রাত তখন তিনটে।
বাইরে তাকিয়ে দেখি হাজারো বর্ণমালা বিমর্ষ মুখে দাঁড়িয়ে।
ওরা ঘরে ঢুকলো।
আমার লেখার টেবিলের পাশে যে কয়েকটা বেতের চেয়ার পাতা, তাতে ওরা বসলো।
আমি বিচলিত হিম শীতল চোখে তাকিয়ে আছি।


নীরবতা ভেঙে ওরা বলে উঠলো জানো -
৫২'র একুশে ফেব্রুয়ারি মিছিলটা ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আসতেই পুলিশ গুলি ছুঁড়ে।
আমাদের বুকে তাজা বুলেট বিঁধে যায়,
রক্তে রঞ্জিত হয় আমাদের শার্ট।
এতটুকু ও কষ্ট পাইনি আমরা।
মায়ের ছবিটা চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠে তখন।
মা কে মা বলে ডাকতে পারবো এই নিশ্চয়তায় এ জীবন লুটিয়ে দেই।
মা বলে ডাকতে ডাকতে পরম মমতায় বাংলা মায়ের কোলে আমরা সেদিন চিরতরে ঘুমিয়ে পড়ি।


আজ তোমরা ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের স্মৃতি স্তম্ভে ফুল দিয়ে দিবস পালন করো।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
ব্যাস এটুকুই কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ!


ওরা আমাকে জিজ্ঞেস করে , কতটুকু ভালোবাসো বাংলা মা কে?
আমি চিৎকার দিয়ে বলি___ সবটুকু দিয়ে।
ওরা ধমকের সুরে বলে ওঠে মিথ্যুক।


যদি ভালোবাসতে___
তাহলে বাংলা মা কেন বিবস্ত্র?
বাংলা মা কেন আজ ধর্ষিত?
বাংলা মায়ের ছেলেরা কেন ডাস্টবিনের খাবার কাড়াকাড়ি করে খায়?
কেন গৃহহীন মানুষ পড়ে থাকে রাস্তায়?
কেন বাংলা ভাষা আজ লুণ্ঠিত?
কেন,কেন,কেন?
জবাব দাও?


আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি সেদিন।


ওরা উঠে দাঁড়ায়, চলে যাবার আগে
কাঁধে হাত রেখে বলে___
তোমরা ভালোবাসতে শেখো নি।
রক্ত দিয়ে ভালোবাসতে হয়।
যেদিন রক্ত দিতে পারবে সেদিন বাংলা মা কে প্রকৃত ভালোবাসতে পারবে।
সেদিন মুখে বলতে হবেনা ভালোবাসি,
তোমাদের অন্তরই সাক্ষী দিবে ___
তোমরা প্রকৃত দেশপ্রেমিক।


আমি চশমাটা খুলে আকাশের পানে তাকাই,
নিজেকে নিজেই জিজ্ঞেস করি ___
আমি কি সত্যিই দেশপ্রেমিক!
উত্তর আসে, নাহ্।


আমি কখনই দেশপ্রেমিক হয়ে উঠতে পারিনি,
আমি ভালোবাসি নিজেকে, দেশকে নয়।
আমি নিজেকে ভালো রাখার শপথে,
মুখোশের আড়ালে অঞ্জলি দিই হাজারটা অভিনয়।
আমি আমাকে ভালোবাসি , বাংলা মা কে নয়।
অথচ বাংলা মায়ের কোলেই আমি খুঁজি,
আমার শেষ আশ্রয়।


আমি বড্ড স্বার্থপর,
আমরা বড্ড স্বার্থপর।