বিজয় মানে আমার ভাইয়ের
রক্তে রাঙা মাটি,
বিজয় মনে স্বাধীন দেশের
শয়নের শীতলপাটি।


বিজয় মানে বাঙালিদের
জয় উল্লাসের রেশ,
বিজয় মানে লাল সবুজের
প্রিয় বাংলাদেশ।


বিজয় মানে দুখীনি মা'র
মুখের মিষ্টি হাসি,
বিজয় মানে মায়ের মত
দেশেকে ভালোবাসি।


বিজয় মানে কচিকাঁচার
হাস্যজ্জ্বল মুখ,
বিজয় মানে পরাধীন জাতির
স্বাধীনতার সুখ।


বিজয় মানে পুব আকাশের
আলোকিত রবি,
বিজয় মানে স্বাধীন দেশের
মানচিত্রের ছবি।


হাসু আর হালিমা দু'জন চাচাতো ভাই -বোন।হাসু চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আর হালিমা পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী।তারা দু'জন অত্যন্ত সহজ সরল। তাদের আচার ব্যবহার বন্ধুত্ব সুলভ।একদিন হাঁসু আর হালিমা স্কুল
ছুটির পর বাড়ি ফিরছিল হঠাৎ! তাদের রাস্তার পাশে একটি বাগানের দিকে লক্ষ্য গেল। সে-ই মুহূর্তে তারা দেখতে পেল পাড়ার কিছু ছেলেরা ঝোপের আড়ালে মারামারি করছে।তখন হাসু একটা ছেলেকে জিজ্ঞাসা করল,তোমরা মারামারি করছো কেনো?কি হয়েছে তোমাদের মধ্যে?সেই ছেলেটি তখন হাসুকে বললো,আমরা মারামারি করছি না হাসু।আমার তো মুক্তিফোজ আর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেজে স্বাধীনতা দিবসের জন্য মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী অনুশীলনী করছি।আগামীকাল আমাদের স্কুলে স্বাধীনতা দিবসের খেলাধুলার আর সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান হবে।এই জন্য আমরা আজকে আগে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী অনুশীলনী করছি।তখন হাসু আর হালিমার বুঝতে বাকী রইল না।হালিমা তখন হাসুকে বলছে,আগামীকাল তো ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস।প্রতি বছরই ২৬শে মার্চের দিন আমাদের স্কুলেও তো বিভিন্ন রকমের সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়।কত আনন্দ উল্লাসে মুখরিত হয়ে উঠে আমাদের স্কুলের আঙ্গিনা।কত মজা হয় স্বাধীনতা দিবসের দিন। নানান রকমের খেলাধুলা দেখে মন ভরে যায়।হালিমা যখন স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কথা বলতে বলতে বাড়ির কাছাকাছি চলে এলো তখন হাসু বলছে,হালিমা আপু আমরা তো প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে দাদুর কাছে অনেক মজার রূপকথার গল্প শুনে থাকি।আজকে কিন্তু ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ নিকষ কালো রাতের মর্মান্তিক কাহিনী দাদুর কাছে শুনতে হবে।আমাদের দাদু তো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল।তাহলে দাদু তো মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঘটনা জানেন। হালিমা তখন হাসুকে বলছে,আগে বাড়িতে চল আজকে আমাদের বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।আম্মু আমাদের কে বকাবকি কবরে।তারা দু'জন কয়েক মিনিটের মধ্যে বাড়িতে প্রবেশ করল।বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্রই হালিমার আম্মু তাদের দু'জনকে দেখে বলছে,স্কুল থেকে ফিরে আসতে তোমাদের এত দেরি  হলো কেনো?তোমরা তো কোন দিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে আসতে এত দেরি কর না।তখন হালিমা বলছে,আম্মু আগামীকাল স্বাধীনতা দিবস আজকে আমাদের স্কুলে স্বাধীনতা দিবসের খেলাধুলার অনুশীলনী হচ্ছিল,তাই আমি আর হাসু দেখছিলাম।এই জন্য আমাদের স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে আসতে এত দেরি হয়ে গেল।তখন হালিমার আম্মু তাদের দু'জনকে স্কুলের ব্যাগ টেবিলে রেখে তাড়াতাড়ি গোসল করে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলল।তারা দু'জন তাড়াহুড়া করে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে আসে।হালিমার আম্মু তাদের দু'জনকে খাবার খেতে দিলো।তারা দু'জন খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নেয়ার জন্য শয়ন কক্ষে গেল। হালিমা টেলিভিশন অন করে মজা কার্টুন দেখতে লাগল কিন্তু হাসুর ঘুমের জন্য দু'চোখ বুজে যাচ্ছিলো।তখন হাসু বলছে,হালিমা আপু আমার খুব ঘুম পাচ্ছে তুমি টেলিভিশন দেখা আমি একটু ঘুমালাম।আর তুমি কিন্তু বিকাল চারটায় দিকে আমাকে ডেকে দিবে।বিকালে পাড়ার সকল বন্ধুদের সাথে খেলাধুলার করব।এই বলে হাসু মুহুর্তের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ল।হালিমাও টেলিভিশন দেখেতে দেখতে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে।পাশের রুমে হালিমার আব্বু,হাসেম মিয়া খবরের কাগজ পড়ছিল।তিনি হাসুর ঘুম থেকে তুলে দেওয়া কথাটি শুনতে পেলেন।তখন হাসেম মিয়া হাসুর ঘুম থেকে তুলে দেওয়া কথাটি স্মরণে রাখে মনোযোগ দিয়ে খবরের কাগজ পড়তে থাকে।খবরের কাগজ পড়তে পড়তে যখন বিকেল গড়িয়ে এলো।তখন হালিমার আব্বু তাদের দু'জনকে বিকালে অবসর সময়ে পাড়ার সকল ছেলে মেয়েদের সাথে খেলাধুলার করার জন্য তাদের দু'জনকে ঘুম থেকে তুলে দিল।হাসু আর হালিমা ফ্রেশ হয়ে বিকালে অবসর সময়ে পাড়ার সকল ছেলে মেয়েদের সাথে মনের আনন্দে খেলাধুলা করে আর কখনও বা তারা প্রজাপতির পিছু পিছু ছুটে যায় অনেক দূরে।যখন বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো হাসু আর হালিমা দু'জনে বাড়ি ফিরে এলো।তারা দু'জন হাত মুখ ধুয়ে সন্ধ্যার সময় স্কুলের পাঠ্য বই নিয়ে পড়ার টেবিলে পড়তে বসে।কয়েক ঘণ্টা পড়ালেখা করার পর।হাসু আর হালিমা রাতের খাবার খেতে গেল।খাবার খাওয়া শেষ করে তারা দু'জন চুপি চুপি দাদুর কাছে গেল।প্রথমে হাসু দাদুকে বলছে,দাদু তুমি তো প্রতিদিন আমাদেরকে অনেক মজার রূপকথার গল্প শুনিয়ে থাকো।কিন্তু আজকে পঁচিশে মার্চ নিকষ কাল রাতের গল্প শোনাতে হবে।হাসুর কথা শুনে দাদু আঁতকে ওঠে, মুহূর্তের মধ্যে দাদুর মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। দাদুর দু'চোখে অশ্রু টলমল করে।এক নিমিষে যেন দাদুর মুখের মিষ্টি হাসি বিলীন হয়ে যায়।হাসু তখন দাদুকে বলছে,দাদু তোমার মনটা খারাপ হয়ে গেল কেন?পঁচিশে মার্চ নিকষ কালো রাত কি ভীষণ বেদনাদায়ক রাত?এই রাতে আমাদের দেশে কি হয়ে ছিল?দাদু তখন হাসুকে বলছে,দাদুভাই ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ নিকষ কালো রাত ছিল মর্মান্তিক বেদনাদায়ক রাত।এই রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙালীর উপর নির্মম অত্যাচার আর অমানুষিক নির্যাতন চালায়।অনাবরত গোলা গুলি করতে থাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।সেদিন বৃদ্ধ থেকে মায়ের কোলের দুগ্ধ শিশু পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে কেউ রেহাই পায়নি।তারা শত শত তরুণ-তরুণীদের হাত পা বেঁধে ধরে নিয়ে যায় ক্যাম্পে ভিতরে।দীর্ঘ নয় মাস ধরে অমানুষিক নির্যাতন চালায় নিরীহ মাজলুম অসহায় তরুণ তরুণীদের উপর।সেদিন রাতের আকাশে ফানুস নয় গোলা বারুদের ফুলকি উড়ছিল।চারিদিকে নিরীহ মানুষের আর্তনাদ,হাহাকার আর স্বজন হারানো মানুষের আহাজারিতে বাংলার আকাশ যেন বিষণ্ণতায় ভারী হয়ে যায়।নরপশুদের অগ্নিসংযোগে নিরীহ বাঙ্গালীদের ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।রাজপথে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনায় পড়ে থাকে প্রিয়জনদের মৃত দেহে।অনেক শিশু বঞ্চিত হয় পিতা-মাতার পরম স্নেহ-ভালোবাসা থেকে।পাকিস্তানি দালালরা ঘরবাড়ি লুটপাট করতে থাকে। তাদের অত্যাচারে অসহায় মানুষের ঘরবাড়ি ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইন্ডিয়ায়।সেদিন রাতে গোলাবারুদের শব্দ আর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের ভয়ে আমার বুকের ভিতর দুরু দুরু করছিল।আমি আস্তে আস্তে দরজা খুলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে চেয়ে দেখি।প্রতিবেশী রহিম ভাইয়ের বাড়ি দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।সেই মুহূর্ত আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম।এই বুঝি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমার বাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেয়।কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস,রহিম ভাইয়ের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুহূর্তে মধ্যে সেখান থেকে চলে গেল।কিছু ক্ষণ পর বেদনা ভরা মন নিয়ে রহিম ভাই আমার কাছে ছুটে এলো।সে কান্না ভরা কন্ঠে বলতে লাগল করিম ভাই,পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আজ আমার সব কেড়ে নিয়েছে।নির্মম ভাবে হত্যা করেছে স্ত্রী,পুত্র ভাই-বোনদের।আমি আজ নিঃস্ব হয়ে গেলাম।আমি এখন কাদের নিয়ে বাঁচব আর কাদের কাছেই বা থাকব।আমার শেষ সম্বল টুকু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা কেড়ে নিল।আমি তখন রহিম ভাইকে সান্তনা দিয়ে বললাম,রহিম ভাই তোমার কিসের চিন্তা আমরা তো আছি।তুমি আমাদের কাছে থাকবে।আমি রহিম ভাইকে নিয়ে আমার শয়ন কক্ষে গেলাম এবং তাকে বললাম,রহিম ভাই রাতের খাবার খেয়েছ নাকি?রহিম ভাই তখন মাথা নাড়িয়ে বলল হ্যাঁ খেয়েছি।আমি রহিম ভাইয়ের ঘুমানোর বিছানাপত্র ঠিক করে দিলাম।রহিম ভাই বেদনা ভরা মন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।তারপর আমিও ঘুমানোর জন্য বিছানা ঠিক করলাম।কিন্তু চারিদিকে নিরীহ মানুষের হাহাকার আর আর্তনাদ শুনে আমার দু'চোখে ঘুম আসছিল না।আমি সারারাত বেদনা ভরা মন নিয়ে জেগে থাকলাম।নিস্তব্ধ নিশি রাত যখন অবসান প্রায়,পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে সকাল হল।তখন রহিম ভাই আরামে ঘুমাচ্ছিল।আমি রহিম ভাইকে ঘুম থেকে জেগে তুললাম।রহিম ভাই তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে উঠে পড়ল। আমি রহিম ভাইকে বললাম,চলো আমাদেরকে ফ্রেশ হতে হবে। আমার দু'জনে দরজা খুলে বাইরের দিকে আসলাম।বাইরে আসা মাত্রই আমি আর রহিম ভাই চেয়ে দেখি মাটিতে পড়ে আছে শত শত প্রিয়জনদের লাশ।প্রিয়জনদের লাশ দেখে রহিম ভাই চমকে উঠে।তার দু'চোখে অনবরত অশ্রু ঝরে! প্রিয়জনদের জন্য মায়া কান্নায় ভেঙে পড়ে।তখন আমি রহিম ভাইকে সান্তনা দিয়ে বলছি,রহিম ভাই আমাদেরকে প্রিয়জনদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে হবে।আমরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করব।তোদের দাদী সকালের খাবার খাওয়া জন্য আমাদের দুজনকে ডাক দেয়।আমরা দু'জন হাত মুখ ধুয়ে সকালের খাবার খেয়ে নিই। তারপর কিছু প্রয়োজনীয় পোশাক-আশাক টোপলাই বেঁধে নিয়ে তোদের দাদী,ফুফু আব্বুদের রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে দিকে রওনা হলাম।সেই সময় বর্তমান সময়ের মত গাড়ি চলাচল করতো না।পায়ে হেঁটে বহুপথ পাড়ি দিতে হত।আমি আর রহিম ভাই পায়ে হেঁটে ক্যাম্পের দিকে যেতে থাকলাম।পথের মধ্যে অনেক বন্ধুদের সাথে দেখা হল।তারাও আমাদের মত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার জন্য মুক্তিযুদ্ধাদের দলে যোগ দেবে।কিছুক্ষণের মধ্যে আমি আর রহিম ভাই মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে পৌছে গেলাম।আমি সেখানে গিয়ে দেখি অনেক যুবক পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে‌।একজন অপরিচিত লোক এসে আমার আর রহিম ভাইকে মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার কাছে নিয়ে গেল।কমান্ডার সাহেব আমাদেরকে দেখে বলছে,তোমাদের নাম কি?তোমরা কোথা থেকে এসেছো?আমরা দু'জন কমান্ডারের কাছে পরিচয় দিলাম।তিনি একজন ব্যক্তিকে আমাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললেন।আমরা দুজন সেই ব্যক্তির পিছে পিছে ক্যাম্পে দিকে গেলাম।তিনি আমাদেরকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলেন।আমরা দুজন ফ্রেশ হয়ে আসলাম।তিনি আমাদেরকে দুপুরে খাবার খেতে দিলেন।আমার  দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। বিকালের দিকে একজন এসে আমাদেরকে প্রশিক্ষণের মাঠে নিয়ে গেল। প্রশিক্ষণের মাঠে গিয়ে দেখি।কমান্ডার সাহেব প্রশিক্ষণ শুরু করে দিয়েছে। আমরা প্রশিক্ষণ মাঠে যাওয়া মাত্রই কমান্ডার সাহেব,আমার আর রহিম ভাইয়ের হাতে অস্ত্র তুলে দিল।অস্ত্র হাতে পেয়ে ভয়ে যেন আমার বুকটা দুরু দুরু করছিল।পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীদের সাথে কিভাবে যুদ্ধ করতে হবে কমান্ডার সাহেব আমাদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন।যাহোক কিছুদিন প্রশিক্ষণ নেয়ার পর মনের ভেতর সাহস ফিরে পেলাম।প্রশিক্ষণ শেষে কমান্ডার সাহেব আমাদেরকে আট নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করার জন্য মোতায়েন করলেন।আমাদের দলে অধিকাংশ মুক্তি সেনারা যুবক ছিলেন।যার কারণে আমি তাদেরকে ঠিক মত চিনতে পারেনি।হঠাৎ! আমরা শুনতে পেলাম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের যুদ্ধ করার জন্য আমাদের দিকে ছুটে আসছে।তখন আট নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক আমাদেরকে যুদ্ধ করার জন্য নিজেদের  স্থান ঠিক করে নিতে বললেন।আমি আর রহিম ভাই একটি ঝোপের আড়ালে অবস্থান করলাম। আর ওনারা সেনারা তাদের নিজের নিজের জায়গা ঠিক করে নিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা আমাদের কাছাকাছি আসা মাত্রই।আমাদের দলের অধিনায়ক আমাদেরকে যুদ্ধ করার জন্য আদেশ দিলেন।দলের সকল মুক্তিসেনারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিল।চারিদিকে গোলা বারুদের আওয়াজ আর আকাশে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীদের যুদ্ধের বিমানের ভয়ংকর শব্দ শুনে আমার মনে ভিতরে ভয় ভয় করছিল।কিন্তু রহিম ভাই আমাকে বলছে,করিম ভাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের প্রিয়জনদের হত্যা করেছে ওদের দেখে আমাদের ভয় করলে চলবে না।তখন আমার মনের ভিতরে একটু সাহস ফিরে এলো।আমি সাহসিকতার সাথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের সাথে মোকাবেলা করতে থাকি।আমার সাহসী মোকাবেলা আর রণকৌশলে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীদের শত শত ট্যাংক ধ্বংস হতে থাকে।মৃত্যু বরণ করে হাজার হাজার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।সেদিন বন জঙ্গলের মাটিতে পড়ে থাকে হাজার হাজার মানুষের অর্থ গলিত মৃত দেহে।বাতাসে মৃত দেহের গন্ধ উড়ে।কত মায়ের কোলে অবুঝ শিশু চিরতরে ঘুমিয়ে গেছে।পিতা-মাতার লাশের পাশে শত শত অবুঝ শিশু নিরবে কাঁদে।দিন যায় মাস যায় এভাবে দীর্ঘ নয় মাস বন জঙ্গলের ঝোপ ঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে আমার মোকাবেলা করতে থাকি। আমাদের রণকৌশলে একের পরে এক পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীদের ক্যাম্প আমাদের দখলে চলে আসে।কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস হঠাৎ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এক সৈনিকের রাইফেলের গুলি রহিম ভাইয়ের ডান পায়ে এসে আঘাত করে। রহিম ভাই সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মুহুর্তের মধ্যে রহিম ভাই সেদিন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আমাদের দলের স্বেচ্ছা কর্মীরা তাকে ক্যাম্পে নিয়ে যায় চিকিৎসা দেওয়ার জন্য।আমি রহিম ভাইকে বিদায় জানিয়ে আবার আমি যুদ্ধ শুরু করে দিই।এভাবে আমাদের সাথে দীর্ঘ দিন যুদ্ধ চলতে থাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর। যুদ্ধ যখন প্রায় শেষের দিকে তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা মুক্তিযুদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে।তারা আমাদের দেশে ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকে।আমাদের দলের ভিতরে একজনের কাছে রেডিও ছিল।তার রেডিওতে আমার শুনতে পেলাম চারিদিকে বিজয় উল্লাসে বাঙালিরা মেতেছে ওঠেছে।পূর্ব পাকিস্তানের মুক্ত আকাশে আতশবাজীতে মুখরিত হয়ে ওঠেছে।দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধোর শেষে বিজয় উল্লাসের আনন্দ নিয়ে আমি আর রহিম ভাই গ্রামে ফিরে আসি।