ভূত দেখতে আমার মনে
ইচ্ছে জাগে দাদু,
কেমন করে ভূত দেখাবে
দেখাও তোমার যাদু।


ভূত আসবে আমাদের বাড়ি
খেতে দেবো কি?
চিন্তা আমার নেইতো দাদু
রাঁধছে আমার ঝি!


ভূত দেখতে ভীষণ ভালো
পেত্নী নাকি কালো,
ওগো দাদু যাদু করে
ভূত দেখাবে কি বলো?


ভূতের সাথে খেলবো খেলা
মনেতে আর সয়না,
ভূতের মাসি আদর করে
ডাকবে আমায় ময়না।


আমার মনে ইচ্ছে জাগে
ভূতের দেশে যাবো,
ভূতের দেশে ঘুরতে ঘুরতে
ফল ফলাদি খাবো।


দাও কথা আজ দাদু তুমি
ভূত দেখাবে কি বলো?
ভূত দেখতে যাদু করে
ভূতের দেশে চলো।


মায়ের স্বপ্ন
মনির চৌধুরী


রাজু অত্যান্ত চঞ্চল আর দুষ্ট প্রকৃতির ছেলে।সে এবার সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রসুলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে।রসুলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন ছাত্র-ছাত্রীরা যখন নতুন স্কুল,নতুন বই আর নতুন বন্ধু বান্ধবী পেয়ে মনের আনন্দে মেতে উঠে।কিংবা নতুন বইয়ের গন্ধ পেয়ে পাঠে দেয় মন এবং মজার ছন্দের ছড়া পেয়ে পড়ে সারাক্ষণ।তখন রাজুর কাছে বইয়ের পড়া আর নতুন স্কুলের ধরা বাঁধা মোটেও ভালো লাগে না।তার শুধু ইচ্ছে করে স্কুল ফাঁকি দিয়ে পাড়ার সকল বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করে বেড়ানো।আর প্রতিবেশীদের গাছের ফল-ফলাদি চুরি করে খাওয়া।কখনো বা বন্ধুদের সাথে প্রজাপতির পেছনে পেছনে ছুটে যাওয়া।মুক্ত আকাশে দখিনা বাতাসে মনের আনন্দে বিমোহিত হয়ে ঘুড়ি উড়ানো।বন জঙ্গলের গাছে গাছে পাখিদের বাসা ভেঙে বেড়ানো।একদিন রাজু বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করার সময় সাজু নামের এক বন্ধুর সাথে মারামারি করে তাকে মাথা ফাটিয়ে দেয়।এবং মুহুর্তের মধ্যে সে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।কিন্তু সেদিন সন্ধ্যা বেলা সাজুর মা এসে রাজুর মাকে বলে যায় রহিমা আপা,তোমার ছেলে রাজু আমরা ছেলে সাজুর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।তোমার ছেলেকে একটু শাসন করও।তা না হলে তোমার ছেলে রাজু দিন দিন বদমায়েশ হয়ে যাচ্ছে।আজকে আমরা ছেলের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।কালকে অন্য কারো মাথা ফাটিয়ে দেবে।এভাবে ছেলেটাকে মাথায় তুলে রেখো না।তুমি ওকে শাসন করও।তাহলে দেখবে রাজু এক দিন দুষ্টুমি ছেড়ে দেবে।তখন রাজুর মা সাজুর মাকে বলছে,জরিনা আপা এই জন্য আমরা ছেলে রাজু আজকে বাড়ি ফিরতে এত দেরি করছে।আচ্ছা ও আজকে বাড়িতে ফিরে আসুক তার পারে ওকে শাসন করছি।আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন হাড়ে হাড়ে টের পাবে।প্রতিদিন তার জন্য অনেক মানুষের কাছে আমাকে অপমান হতে হচ্ছে।তাকে আর এভাবে এরা দিয়ে ছেড়ে রাখা আমার মোটেও উচিত হচ্ছে না।তাকে এখন থেকে শাসন করতে হবে।বন্ধুদের সাথে মারমারি করে বেড়ানো আর প্রতিবেশীদের গাছ গাছালীর ফল-ফলাদী চুরি করে খেয়ে বেড়ানো তার নেশা হয়ে গেছে।রাজুকে নিয়ে আমার মনে অনেক বড় স্বপ্ন আছে।সে ভালো ভাবে লেখপড়া করে সুশিক্ষাই শিক্ষিত হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করবে।অসহায় গরিব দুঃখী মানুষের পাশে দাড়াবে।সমাজের অন্যায় অত্যাচার অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবে।সুদ,ঘুষ আর মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।এই প্রত্যাশা মনের মাঝে রেখে রাজুর মা জরিনা বেগমকে বিদায় জানিয়ে মাগরিবের নামাজের জন্য অজু করে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে এবং তিনি জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তে শুরু করে।সেই মূহুর্তে রাজু বাড়িতে ফিরে এসে দেখতে পেল তার মা নামাজ পড়েছে।তখন রাজু ঘরের ভিতরে প্রবেশ না করে ঘরের বারান্দায় দাড়িয়ে থাকে।আর অপেক্ষা করতে থাকে তার মায়ের নামাজ শেষ না হাওয়া প্রজন্ত।কিছুক্ষণের মধ্যে জরিনা বেগমের মাগরিবের নামাজ শেষ হয়ে গেল।নামাজ শেষ জরিনা বেগম আল্লাহ তায়ালার কাছে সন্তানের জন্য দুহাত তুলে মোনাজাত করে।মোনাজাতের মধ্যে তিনি বলেন,হে আল্লাহ তায়ালা তুমি আমার সন্তানের হেদায়েত দান কর।সে যেন দুষ্টুমি ছেড়ে ভালোর পথে চলে আসে।আর ভবিষ্যতে সে যেন কল্যাণের পথে কাজ করে।গরিব দুঃখীদের পাশে দাঁড়াই।আল্লাহ তায়ালার কাছে সন্তানের সার্বিক মঙ্গল কমনা জানিয়ে জরিনা বেগম মোনাজাত শেষ করে।মোনাজাত শেষ করে তিনি বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখে রাজু দাঁড়িয়ে আছে।তখন তিনি রাজুকে দেখে বলছে,নবাবজাদা এতক্ষণ কোরায় ছিল?তোমার কারণে গ্রামের টিকে থাকা মুসকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।প্রতিদিন তো কারো না কারো সাথে ঝামেলা পাকিয়ে থুয়ে আসছো।আর তাদের পিতা-মাতা আমার কাছে নালিশ করতে আসে।তুই কি আর মোটেও কোন দিন পরিবর্তন হবিনি?তখন রাজু তার মায়ের জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে আর বলতে থাকে,মা আমি আর কোন দিন দুষ্টুমি করবো না।আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোমার মোনাজাত মনোযোগ দিয়ে শুনেছি।তুমি যখন আমার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে কান্নাকাটি করছিলে।আর তোমার দু'চোখের ফেলছিলে।তখন আমি মনে মনে নিয়ত করি।আমি আর কোন দিন কারো ক্ষতি করবো না।কারো মনে আঘাত দেব না।কারো গাছের ফল-ফলাদি চুরি করে খাব না।আমি মায়ের আদেশ মত চলব।আর কোন দিন স্কুল থেকে পালিয়ে আসবো না।রাজুর কথা শুনে রাজুর মা খুশিতে আত্মাহারা হয়ে যায়।তখন তিনি রাজুকে রাতে খাবার খেতে দেয়।রাজু মজা করে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।পরের দিন সকালে রাজু ঘুম থেকে জেগে ওঠে হাত মুখ ধুয়ে সকালের খাবার খেয়ে স্কুলের দিকে রওনা হয়।পথের মধ্যে অনেক বন্ধুদের সাথে রাজুর দেখা হলো।তখন তারা রাজুকে দেখে বলছে,কিরে রাজু তুই স্কুলে যাচ্ছি?তখন রাজু মাথা নাড়িয়ে ইশারায় বলল,হ্যা আমি স্কুলে যাচ্ছি।কিন্তু তাদের ভিতরে একজন বলছে,রাজু স্কুলে যাচ্ছে নাকি ও স্কুলে মারামারি করতে যাচ্ছে।তার কথা শুনে রাজুর কোন জবাব না দিয়ে নীরবে স্কুলে চলে গেল।রাজু স্কুলে প্রবেশ করা মাত্রই ক্লাসের
ঘন্টা বাজলো।তখন রাজু ক্লাসের মধ্যে প্রবেশ করে প্রথম বেঞ্চিতে বসলো।সে প্রত্যেকটা স্যারের ক্লাস মনোযোগ দিয়ে শেষ করলো।এভাবে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে দেখে স্কুলের ক্লাসের সকল ছাত্র-ছাত্রী অবাক হয়ে গেল।তারা নিজেদের ভিতরে আলোচনা করতে থাকে আর একজন অপর জনকে বলছে,রাজু যে একেবারে পরিবর্তন হয়ে গেছে।আগের মত কারো সাথে ঝামেলা করছে না।নীরবে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে।এভাবে দিন যায় মাস যায় রাজু মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে থাকে আর প্রতি বছর বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে।রাজুর ভালো পরীক্ষায় ফলাফল করতে দেখে স্কুলের সকল শিক্ষক তাকে খুব ভালোবাসে।এবং তাকে সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে।এভাবে রাজু শিক্ষকদের সহযোগিতা পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সহিত উত্তীর্ণ হয়।
এসএসসি পরীক্ষার মতো রাজু এইচএসসি ও
অনার্স পরীক্ষাতে ভালো ফলাফল করে।মায়ের আশীর্বাদ আর শিক্ষকের দোয়ায় রাজু কিছু দিনের মধ্যে সরকারী চাকরি পায়।সে সরকারি চাকরি পেয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য সে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে।এবং গরিব দুঃখী মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়।