পৃথিবীর বুকে শিশির ঝরা নিস্তব্ধ নিশি রাত যখন  অবসান প্রায়,
রাতের আকাশে রূপলী চাঁদের স্নিগ্ধ জোছনার চরাচর গুটিয়ে যায়।
মসজিদ থেকে ভেসে আসে মুয়াজ্জিনের সুমধুর  কণ্ঠের আজানের ধ্বনি,
আজানের ধ্বনি শুনে খোদার দরবারে প্রার্থনায় মগ্ন মুসলিম রমণী।


সুপ্রভাতে কিচিরমিচির মিষ্টি মধুর সুরে ডাকে রঙ বে রঙের পাখি,
পাখিদের ডাকে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখি।
ফুটপথে মায়াবী চেহারার পথচারী শিশু মলিন চাঁদর গায়ে জড়িয়ে,
কনকনে শীতে সুপ্রভাতে পথের ধারে খোলা আকাশের নিচে আছে ঘুমিয়ে।


শত শত মানব সকল চায়ের দোকানে চা পানে আড্ডা দিচ্ছে মজিয়ে,
পথ হারানো পথিক ঘন কুয়াশার মাঝে পথে ধরে আছে দাঁড়িয়ে।
শিশির বিন্দুতে ভিজে গেছে গাছ-গাছালি নিবিড় ঘন বনের পুষ্প কলি,
মধু আহরণে মিষ্টি মধুর গুঞ্জনে ফুলে ফুলে বিচারণ করছে অলি।


লাঙ্গল জোয়াল কাঁধে করে কৃষক ভাই ছুটে চলেছে তেপান্তরের মাঠে,
কিশোর কিশোরী সুপ্রভাতে শাপলা-শালুক তুলতে যাই পদ্ম দীঘির ঘাটে।
নদীর বুকে নীরবে ভেসে চলে মাঝি ভাইদের পাল তোলা ওই নাও,
ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে রূপসী বাংলার সবুজ-শ্যামল পল্লী গাও।


মনির চৌধুরী


রাফি মা-বাবার একমাত্র সন্তান।তার বয়স পাঁচ বছর। সে খুব শান্ত আর ভদ্র।পাড়ার সকল ছেলে মেয়ে তাকে খুব ভালোবাসে।রাফির বাবার নাম হাসমত আলী আর মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম।রাফির বাবা হাসমত আলী তিনি একটা সরকারী প্রতিষ্ঠানের কেরানী পদে চাকরী করেন।অপর দিকে রাফির মা মনোয়ারা বেগম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।স্বামী-স্ত্রী দু'জন সরকারী চাকরিজীবী।যার কারণে হাসমত আলী আর মনোয়ারা বেগম রাফিকে ঠিক মত যত্ন নিতে সময় পাই না।এই জন্য রাফিকে যত্ন নেওয়া এবং স্কুলে যাতায়াতের জন্য বাড়িতে একটা কাজের মেয়ে  রেখেছে।কাজের মেয়েটির নাম আফসানা খাতুন তার বয়স বারো বছর‌।সে খুব চঞ্চলতা এবং কাজে পটু।রাফিকে যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি এমনকি মনোয়ারা বেগমেকে রান্নার কাজে সহযোগিতা পর্যন্ত করে থাকে।রাফির নিয়মিত খাবার খাওয়ানো স্কুলে পৌছিয়ে দিয়ে আসা এবং স্কুল ছুটির পর রাফিকে বাড়িতে ফিরে আনার দায়িত্ব সে পালন করে থাকে।আফসানা রাফি দের বাড়ি থেকে একটু দূরে একটা বস্তিতে থাকে।তার বাড়িতে কেবল মাত্র অসুস্থ মা আছে তাছাড়া সকলে মৃত্যু বরণ করেছে। মায়ের অসুস্থতার কারণে আফসানাকে পরের বাড়িতে কাজ করে খেতে হয়।সে প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করে রাফি দের বাড়িতে কাজের জন্য আসে।মনোয়ারা বেগমও প্রতিদিন ফজরে আজান শুনে ঘুম থেকে জেগে ওঠে এবং স্বামী হাসমত আলীকে নামাজ পড়ার জন্য ডাকে দেয়।হাসমত আলী স্ত্রীর ডাক শুনে তাড়াহুড়া করে ঘুম থেকে জেগে ওঠে।তারপর তিনি ব্রাশ করে নামাজের জন্য ওজু করে।ওজু করে হাসমত আলি  জামাতের সহিত ফজরে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যাই।
পক্ষান্তরে,রাফির মা মনোয়ারা বেগম নিজেও ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায়ের জন্য ওজু করে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে জায়নামাজ বিছিয়ে আল্লাহ তায়ালার নিকট শির নত করে গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়ে ফজরে চার রাকাত নামায় আদায় করে।ফজরে চার রাকত নামাজ শেষ করে তিনি আল্লাহ তায়ালার দরবারে দু'হাত তুলে পরিবারের সকল সদস্যদের সার্বিক মঙ্গল কামনার জন্য প্রার্থনা করে।এবং তিনার পিতা মাতার আত্মার মাগফিরাতের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া চাই।সর্বশেষে তিনি পৃথিবীর সমগ্র মুসলিম জাতি জন্য  সার্বিক মঙ্গল কামনা জানিয়ে প্রাথনা শেষ করে। প্রার্থনা শেষ করে তিনি প্রথমে রাফির রুমে প্রবেশ করেন। রাফিকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার জন্য।কিন্তু তিনি রুমে প্রবেশ করা মাত্র দেখতে পেলেন কাজের মেয়ে আফসানা রাফিকে ঘুম থেকে তুলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করিয়ে দিচ্ছে।তখন মনোয়ারা বেগম মুচকি হাসি দিয়ে বলছে,আফসানা আম্মু তুমি রাফিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করিয়ে আমাকে সহযোগিতা করার জন্য রান্না ঘরে আসবে।তখন আফসানা মাথা নাড়িয়ে বলল,জ্বি খালামনি আমি রাফিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে এক্ষুনি  রান্না ঘরে চলে আসছি।আফসানা রান্না ঘরে গিয়ে মনোয়ারা বেগমকে সকালের নাস্তা তৈরির কাজে সহযোগিতা করল। নাস্তা তৈরি করা তখন শেষ হয়ে গেল।তখন মনোয়ারা বেগম আফসানাকে বলছে, আফসানা তুমি সকালের নাস্ত গুলো খাবার টেবিলে রেখে আসো‌। আফসানা মনোয়ারা বেগম এর কথা মত সকালের নাস্তা গুলো খাবার টেবিলে রেখে আসল।তারপরে দুপুরে খাবার এর  জন্য মনোয়ারা বেগমকে মাংস পোলাও রান্নার কাজে সহযোগিতা করল। মাংস পোলাও রান্নার শেষ করে মনোয়ারা বেগম দুপুরের লানচের জন্য স্বামীর টিফিন বক্সে এবং নিজের টিফিন বক্সে খাবার সাজিয়ে রেডি করে রাখলেন।প্রতিষ্ঠানে যাওয়া সময় খাবারের টিফিন বক্স মনে করে নিয়ে যাবেন।এদিকে রাফি আর হাসমত আলী সকালের নাস্ত খাওয়ার জন্য টেবিলে বসে অপেক্ষা করছে।সকলে এক সাথে মজা করে নাস্তা খাবে।কিন্তু মনোয়ারা বেগমের না আসা পর্যন্ত কেউ নাস্তা খাওয়া শুরু করল না। মনোয়ারা বেগমের নাস্তা খেতে আসতে দেরি হচ্ছে বলে রাফি তখন আফসানা কে বলছে,আফসানা আপু আম্মুকে তাড়াতাড়ি ডেকে আনো।আমার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে।আমি আর সহ্য করে পারছি না।আফসানা চেয়ার থেকে যে উঠে দাঁড়ালো সেই মুহূর্তে মনোয়ারা বেগম হাজির হয়ে গেলেন। এবং রাফির পাশের চেয়ারে বসলেন।তখন সকলে প্রতিদিনের নেয় নাস্ত খেতে শুরু করল।নাস্তা খেতে খেতে রাফি আম্মুকে বলছে আম্মু অনেক দিন হল আমার কোথাও বেড়াতে যাইনি।কিন্তু এবার রমজানের ছুটিতে আমাদের কে নানুর বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে।তখন রাফির আম্মু মৃদু হাসি দিয়ে বলছে, আচ্ছা বাবা তোমাদেরকে এবার রমজানের ছুটিতে আমার মা-বাবার বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাবো।তখন আম্মুর কথা শুনে রাফি মনটা আনন্দে গদগদ করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সকলের নাস্তা খাওয়া শেষ হয়ে গেল। এবং হাত ধুয়ে একটু বিশ্রাম নেয়ার জন্য হাসমত আলী আর মনোয়ারা বেগম রুমের ভিতরে গেল। অপর দিকে আফসানা টেবিল পরিষ্কার করে রাফিকে নিয়ে রাফির রুমে গেল।তারা দু'জন একটু টেলিভিশন চ্যানেলে মিনা রাজুর কার্টুন দেখতে লাগল। তারপর সোয়া নয়টার দিকে রাফিকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া জন্য পোশাক পড়িয়ে দিল এবং বই খাতা ব্যাগের ভিতরে আসে কিনা ভালো মত দেখে নিল।ওদিকে রাফির,আব্বু,আম্মু দু'জনে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে রাফি আর আফসানাকে ডাকলো। আম্মুর বাক শুনে মূহুর্তের মধ্যে রাফি আর আফসানা চলে এলো।এবার সকলে যে যার মত নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের দিকে রওনা হলো।সাড়ে নয়টায় দিকে আফসানা আর রাফি স্কুলে পৌছালো।রাফিকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আফসানা বাড়িতে ফিরে এলো। আফসানা হাত মুখ ধুয়ে রুমে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিলো।তারপর রাফির স্কুল যখন ছুটি হওয়ার সময় হলো তখন আফসানা ঘুম থেকে উঠে রাফি কে নিয়ে আসতে গেল।তখন আফসানা দেখতে পেলো রাফি স্কুলে গেটে কাছে দাঁড়িয়ে আছে।আফসানা রাফি কে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে ফিরে এলো। আফসানা রাফিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দুপুরের খাবার খেয়ে দিল।রাফি দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নেয়ার জন্য ঘুমাল।তখন বিকেল সাড়ে চারটা বাজে তখন রাফির আব্বু আম্মু বাড়িতে ফিরে এলো এবং তিনারা দু'জন ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নিল। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো মসজিদের মাইকে থেকে ভেসে আসে মুয়াজ্জিনের সুমধুর কন্ঠের আজানের ধ্বনি। আজানের ধ্বনি শুনে হাসমত আলী ঘুম থেকে উঠে পড়ল এবং ওজু করে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে গেল।অপরদিকে মনোয়ারা বেগম হাত মুখ ধুয়ে ওজু করে রুমের ভিতরে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করে নিলো।তারপর সকলে খাবার টেবিলে বসে রাতের খাবার খেতে বসলো।রাতের খাবার খেয়ে সবারই এক সাথে টেলিভিশনে ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে লাগল।যখন দশটা বাজল তখন টেলিভিশন বন্ধ করে সকলকে রাতে ঘুমিয়ে পড়ল। নিস্তব্ধ নিশি রাত যখন অবসান প্রায় পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে সকাল হল।পাখিদের কিচিরমিচির ডাক শুনে মনোয়ারা বেগমের ঘুম ভেঙ্গে গেল।তখন তিনি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ওজু করে ফজরের নামাজ আদায় করে নিলো। তারপর তিনি রাফি কে ঘুম থেকে তুলে দিল।আর বললো আব্বু আজকে আমার বাজারে ঈদের নতুন পোশাক-আশাক কিনে তোমার নানুর বাড়িতে বেড়াতে যাব।তখন রাফি তাড়াহুড়া করে ঘুম থেকে উঠে পড়ল এবং ফ্রেশ হয়ে নিল। কিন্তু আজকে আফসানা আসতে একটু দেরি হলো।কারণ তার মা খুব অসুস্থ মায়ের সেবা করার মত কেউ নেই।সব কিছু তাকেই করতে হয়।আফসানা তার মাকে রেখে আটার দিকে রাফিদের বাড়িতে আসে।ততক্ষণে রাফি ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা খেয়ে নানুর বাড়ি যাওয়ার জন্য নতুন পোশাক পড়ার জন্য রুমে গেল। আফসানা তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিল।কিছু ক্ষণের মধ্যে হাসমত আলী একটা গাড়ি ডেকে নিয়ে আসল।সবাই নতুন পোশাক পড়ে গাড়ি চড়লো।গাড়ির ডাইভার গাড়ি স্টার্টাড দিয়ে রাফির নানুর বাড়ির দিকে রওনা দিল। কিছু ক্ষণের মধ্যে রাফি তার নানুর বাড়িতে পৌঁছে গেল। অনেক দিন পর নানুকে দেখে রাফি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।