এখন বর্ষাকাল
গন্তব্য ছিল খালামনির বাসা মাছিমনগর
বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে
আকাশেও মেঘ জমে আছে
সন্ধ্যার আগে না যেতে পারলে খালামনি ভীষণ রেগে যাবেন
অপেক্ষায় আছি রিকশার জন্য
হঠাতই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি
টানা ছয়দিন পর অবশেষে অভিমান ভাঙলো আকাশ
চিৎকার করে অঝরে কেঁদে চলেছে এবার
শরীর বাঁচাতে কোন রকমে ঠাইঁ নিলাম এক চায়ের দোকানের কোনে
মুহুর্তেই ভীড় জমে গেল সেখানে
বজ্রের হুংকারে আকাশ লুকাচ্ছে মাটিতে
শিউরে উঠলাম সবাই
নিস্তব্ধতায় আমিও জড়োসড়ো হয়ে আছি
হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ একজন আষ্ঠেপৃষ্ঠে আমার হাত ধরে আছে
খেয়াল করতেই দেখি কাকভেজা শরীরে মিষ্টি হলুদরঙের পোষাক পরে ওড়নাতে আধো মুখ ঢাকা একটি মেয়ে
দু'চোখ বন্ধ করে কি যেন বিড়বিড় করছে
ধারালো নখের আচড়ে আমার হাতে দাগ কেটে যাচ্ছে
তবুও তার উপর রাগ দেখানোর সাহস হলো না আমার
এই যে শুনছেন
কে আপনি
দয়া করে আমার হাতটা একটু ছাড়বেন
ব্যথা পাচ্ছি তো
আমি কোন খুটি নই, মানুষ
শুনছেন
অবাক হয়ে কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে রইলাম শুধু
আমার জায়গায় পৃথিবীর যেকোন পুরুষই হয়তো মেয়েটিকে দেখে তাই করতো
বিদ্যুতের আভায় কখনো হলুদ, কখনো হালকা লাল খেলা করছে তার অবয়ব জুড়ে
জড়তা কাটিয়ে আবারও আলতো সুরে জিজ্ঞেস করলাম
কি নাম আপনার
দ্বিতীয়বার আমার সুর শুনে আচমকাই হাতটি ছেড়ে হচকচিয়ে উঠলো সে
খানিকটা অপরাধবোধ নিয়ে বললো অহর্নি
নামটি ভীষণ চমৎকার
এবার কিছুটা আগ্রহ নিয়েই তাকালাম তার দিকে
চোখে হয়তো কাজল দিয়েছিল
তাই দেখেই বুঝি বৃষ্টির হিংসে হয়েছে
প্রতিশোধ নিতেই অসময়ে ঝাপিয়ে পরেছে পৃথিবীতে
তবে পুরোপুরি প্রতিশোধ নিতে পারেনি
ছাপ রয়েই গিয়েছে এখনো
চোখাচোখি হতেই লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলাম দুজনেই
কিছু একটা বলতে গিয়েও নির্বাক হয়ে গেলাম
মনটা হারিয়ে গেল বৃষ্টির ছন্দে
নিস্তব্ধতায় মাটির পানে চেয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ
মেয়েটির দিকে আর তাকানোর সাহস হচ্ছিলো না
যেমন সুন্দরী ঠিক তার উল্টো মূর্তি ধারণ
আমার বিশ্বাস আমার জায়গায় অন্য যে কোন পুরুষও বাকরুদ্ধ হয়ে যেত
বৃষ্টির ক্ষিপ্রতা একটু কমে আসতেই
মেয়েটি হারিয়ে গেল মানুষের ভীরে
আমার আর কিছু বলা হলো না
বলা হলো না মুহুর্তের ভাললাগার কিছু কথা
কিছু অনুভূতি
বলা হলো না অহর্নি আপনি ভীষণ সুন্দরী
তবে অনেক ভীতু
দেখুন না আমার হাতের হালটা করেছেন কি
আর একটু হলেই আমার হাত বেয়ে বৃষ্টির মতই রক্ত ঝরতে থাকতো
তবে যে আপনি এতোটা সুন্দরী তার এমন হিংস্রতা দেখে ব্যথার অনুভূতি ভুলে অবাকই হয়েছি বেশি
যেভাবে বৃষ্টির ফোটা আপনার চোখের কাজলের সাথে যুদ্ধ করছিল
তাতে এমন মূর্তিধারণ একদমই যাচ্ছিলো না আপনার সাথে
কি যেন নাম বললেন আপনার
ও হ্যা অহর্নি
না-না আপনি অহর্নি নন
আপনি কদমকুমারী
হ্যা সত্যি বলছি আপনি একদম কদমকুমারী
আপনি কদম ফুলের চেয়েও অধিক সুন্দরী
প্রবল বর্ষণ থেমে গেলে ভেজা কদম ফুলের গা থেকে যেমন বৃষ্টির ফোটা ঝরে পরে
ঠিক তেমনি বৃষ্টির ফোটা ঝরে পরছে আপনার অবয়ব বেয়ে
বৃষ্টিতে স্নান করা কদম ফুল উচ্ছ্বাস একদমই নস্যি আপনার কাছে
অনুভূতিগুলো অব্যক্তই রয়ে গেল মনেরান্যে
বলা হলো না কিছুই
রুদ্ধবাকে নীরবে শুধু চেয়েই দেখলাম তার চলে যাওয়া
আর হয়তো কখনোই দেখা হবে না তার সাথে
মুহুর্তের মধ্যেই মিশে গেল যান্ত্রিক জগতের ভীড়ে
অজ্ঞাত কোন প্রিয় মুখ
যদি একবার হারিয়ে যায়
তাকে আর কখনো ফিরে পাওয়া যায় না
নাগরিক জীবনের চাওয়া-পাওয়া, আবেগ-অনুভূতি হয়তো এমনই
জীবন চলার পথে হৃদয় পথের হ্রদে এভাবেই হঠাৎ হঠাৎ দেখা মেলে কত-শত অহর্নির সাথে
সময়ের স্রোতধারায় আবার হারিয়ে যায় মানুষের মাঝে
কিছু মানুষের মনে গেঁথে থাকে অব্যক্ত কিছু অনুভূতি
কিছু স্মৃতিময় রক্তিম ঘটনা প্রবাহ
ক্ষণিকের দেয়া কিছু নাম
সব ভুলে সামলে চলতে হয় নিজেকে
সামলে রাখা শিখতে হয় নিজের অনুভূতিকে।