ঠক ঠক ঠক!
দরজাটা একটু খুলবে?
ঘরে নেবে আমায়?
আমায় চিনতে পাচ্ছো?
আমি স্বাধীনতা।
চেয়ে দেখ আমি আজ এসেছি তোমাদের দ্বারে দ্বারে
বরণ করবে কি আমায়?
কি হলো তোমাদের?
আমার বয়সতো বেশি না!
সবেমাত্র ৫১ ছুঁই ছুঁই।
আমার জীর্ণতা দেখে ভুল বুঝছো না তো?
সত্যিই বলছি আমি তোমাদের সেই স্বাধীনতা
লাখো বাঙ্গালির রক্তের দামে কেনা
শত প্রতিশ্রুতিমাখা সেই স্বাধীনতা।
কি, বিশ্বাস হচ্ছে না তো?
হবে কি করে, তোমরাই বলো
এমন বিবর্ণ আর মলিন হলে কেউ কি কাউকে চিনতে পারে?
আমি তো এমন বেসে আসিনি?
'অন্যায়ের বিরুদ্ধ চারণ হয়ে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠা
মরুভূমির বালির ন্যায় উত্তপ্ত রক্তকণা
অধিকার আদায়ে তরুণের কণ্ঠে বজ্রের হুংকার
সাম্যতায় সাজানো সাংগ্রামিক দৃঢ় মনোবল'
সব ছাপিয়ে তোমাদের ধরণী যে এখন শীতল প্রায়।
সত্যের দৈন্যতা সবার অন্তরে করছে বাস
শুনতে পাই না আর সে সব সাহসী কণ্ঠস্বর।
আছে কেবল মৃতপ্রায় বাঘিনীর স্বর বিহীন হুংকার।
নেই প্রতিবাদ মূখর দিন
কি করে দেখবে আমার দীপ্ততা?
ফেলে রেখেছো জীর্ণ কুটিরে
রাখনি হদিস কোন।
কালে কালে তোমাদের অযত্ন আর অবহেলায় আমি যে এখন জড়োসড়ো।
অথচ আমার মুকুট মাথায় পরে তোমরাই প্রতিজ্ঞা করেছিলে
সযতনে রাখবে আমায়
করবে ধারণ উঁচু-নিচু সবার অন্তরে
সমুন্নত রাখবে আমার মান।
কতই না উৎফুল্ল ছিলাম তোমাদের উচ্ছ্বাস দেখে
সে কি আদিখ্যেতা আমায় ঘিরে!
কোথা গেল আজ তোমাদের সব মন্ত্র?
কান্নার মায়াজাল!
মাত্র তো ক'টা বছর
এতেই থেমে গেল তোমাদের সব উম্মাদনা!
চক্ষু করলে চড়কগাছ
সমস্ত আবেগ, অনুভূতি আর বিবেক আড়াল করে
হয়ে গেলে মানুষরূপী বর্বর।
হায়েনার অভয়ারণ্য বানিয়ে দিলে শহীদের রক্তভেজা চারণভূমিকে।
সবার অবদান ভুলে করলে অন্যায়ের সাথে সন্ধি
হত্যাযজ্ঞ, ব্যাভিচার, শোষণ আর স্বেচ্ছাচারিতায় মুছে ফেলতে চলেছো আমার নিশান।
তাইতো অভিমানের শিলাখন্ড বুকে নিয়ে আজ ঘুরে বেড়াচ্ছি তোমাদের দ্বারে দ্বারে
করছি আহবান আরও একবার
ফিরায়ে লও মোরে
করো অন্তরে ধারণ
করো যতন
ফিরায়ে আনো আমার শুরুর সেই স্নিগ্ধতা
দাও নামের প্রাপ্য সম্মান।
নচেৎ, আবারও হারিয়ে যাবো অচেনা কোথাও
পরতে হবে পরাধীনতার শৃঙ্খল
নিমজ্জিত থাকবে দাসত্বের গহব্বরে
গাহিবে আমলারই জয়গান।