জীবন যদি কোনো সরলরেখা হতো
সবচেয়ে সুখী হতেন আমার বাবা।
যার জীবনবোধ ছিল সহজ স্বাভাবিক
শুয়োপোকার জীবন।
সামর্থ্য ছিলনা বলে না স্বপ্ন দেখতেন না,
আমাদেরও তাই শেখা হয়ে উঠেনি স্বপ্নদেখা।
জীবন কখনো থেমে থাকেনি
থামার সংজ্ঞা জানা ছিল না বলে।
অর্থহীন অর্থের অভাবে দায়ভার ছিল না,
সংসার চলে গেছে অদৃশ্যের ঈশারায়।
আশাহীন সুদীর্ঘ পথ কেটেছে
গাছ, পাখি, নদী আর মেঘ-রদ্দুরের
ছন্নছাড়া লুকোচুরি দেখে;
জোনাকের সাথে ঝগড়া করে কেটেছে প্রতিটি রাত,
সূর্যের সাথে অভিমান করে কতদিন দেখা হয়নি
দিনের আলো, মাছেদের ঘাইমারা।
তাই রৌদ্ররে ভালোবাসিয়াছি আমি
বৃষ্টি হয়ে ঝরবো বলে।
আজ যা নেই, কাল তা হবে
এমন ভাবনা ছিল ভূ-মধ্যসাগরের ওপাড়ে।
কাল কি হবে সে ভাবনা নাড়া দিতো না
আজকের দুশ্চিন্তার দ্বারে;
অভাবের রেশ মিইয়ে যাওয়ার আগেই
আইসক্রিমওয়ালা দূর দিগন্তে হারিয়ে যেত,
একটাকায় চারটি নারকেলি আইসক্রিমের দিনেও।
ছত্তারের দোকানের দুইটাকার স্বর্গীয় স্বাদের
বনরুটি ছিল পরলৌকিক কোনো খাবার।
পাঁচটাকার খরচ বাঁচানোর পায়তাড়া হতো
পেন্সিলে লেখা খাতায় পুনঃপুনঃ বলপেনের আঁচড়ে।
কপালে সুখের বলিরেখার কল্যাণে
অসুখেরা ভীড় করেছিল জন্মের শত বছর পূর্বে।
জন্মেই দেখেছি উনুনে জ্বলছে দুঃস্বপ্নের শূণ্য হাড়ি।
একজামায় কেটেছে কতশত ঈদ
তার কয়টাই হিসেব রেখেছে মহাকাল!
জীবন ছুটেছে ক্ষুধার পিছনে,
ক্ষুধা করেছে গ্রাস জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শখগুলো।
মাথানত করে ভিক্ষুকের বেশে থাকতে থাকতে
স্পাইনাল কর্ড হয়েছে ধনুকের গ্রীবা
হৃদয় হয়েছে তীরন্দাজ শিকারী।
ভুলের জন্ম ছিল মানবজন্মের
ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে যে জীবন কীট-পতঙ্গের
তার আবার জয়গান কি!
কতটুকু বড় হলে মানুষ হওয়া বলে,
কত দামে কিনতে হয় লাগামহীন সুখের ঘোড়া?
আমি শেষবধি দেখে যেতে চাই ঈশ্বর,
যুদ্ধ জয়ের আগে মৃত্যু দিও না তুমি,
আমি হারতে আসিনি, হে ঈশ্বর !