চারিদিকে শুধু সেলফি তোলে মানুষ
সকালে বিকেলে, রাতে আর দিনে
কেবল সেলফি ভেসে বেড়ায়-সেলফি আর সেলফি
ফেসবুকে-ইন্স্ট্রাগ্রামে, ওয়েবসাইটে, টাইমলাইনে
দাঙ্গা হাঙ্গামার সেলফি, মর্মান্তিক দৃশ্যের সেলফি
পপর্কণ হাতে সেলফি,
অতল সাগর থেকে মহাকাশ পর্যন্ত সেলফি
আনাড়ি ভঙ্গিতে সেলফি, একান্ত মুহূর্তের সেলফি
কপোত-কপোতীর খুঁনসুটি মারার সেলফি
চোখ উল্টে ফেলার সেলফি, জিভ বের করার সেলফি
আপনি কেমন আছেন তা বলে দেয়ার সেলফি
মুখের নীচ থেকে সেলফি, সবার সামনে সেলফি
মুগ্ধ দৃষ্টি, হাসিমাখা মুখে সেলফি
পাহাড়ি ঝর্ণার ওপরে ঝুলে ভয়ংকর ভঙ্গিতে সেলফি
আত্মঘাতি উৎসবের সেলফি
মৃতের সাথে দাঁত কেলিয়ে কান্নার সেলফি  
নাক কান ফুটো করার সেলফি
বাড়িতে রান্না করা লোভনীয় খাবারের সেলফি
রেস্টুরেন্টের নিয়ন আলোয় সাজানো
দেশ বিদেশের রকমারি খাবারের সেলফি
পরিবারের সবাই মিলে খাওয়ার সেলফি
বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরায় বসে খাওয়ার সেলফি  
খেলার মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারার সেলফি
প্রিয় দল জেতার উল্লাসে ফেটে পরার সেলফি
পরীক্ষায় পাশের একটা সেলফি
রাত জেগে কিছু করার সেলফি
কথা দেয়া-নেয়ার সেলফি
সময় কিভাবে কাঁটে তার সেলফি
কারো প্রতীক্ষায় রাত কাটানোর বিমর্ষতার কথা কেই জানে না
জানে না সেই প্রিয়মুখ- তাকে জানাতে একটা সেলফি।  
বৃষ্টি উপভোগের সেলফি
উদ্দাম উলঙ্গ পনার সেলফি
সমুদ্র বিলাসের সেলফি
একটা গান সাধার সেলফি—হারমোনয়িামের বিটের ভাঁজে
আলতো আঙুলে আঙুলে সারেগামাপা তোলার সেলফি
দুগ্ধপায়ি কোমল শিশুটি কিভাবে বেড়ে উঠল তার সেলফি
লঞ্চে, বাসে দূর্ঘটনার একটা সেলফি
সেলফি সবখানে, সবজায়গায়
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, মানুষের মননে- মগজে- অস্থিমজ্জায়
সেলফি দেখেই আজকাল মানুষ চেনা যায়
সেলফি বেশ মজার খোরাক হয়
শহর আগুনে পোড়ে – মানুষ সেলফি তোলে ।


তুমি—মাটি, জল ও বাতাসের সেলফি তোল
শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঝড়, ও শৈত্যের বেগ ছড়িয়ে পড়ার সেলফি  
শীতে জবুথবু অসহায়, হতদরিদ্র,
বৃদ্ধ, শিশু ও ফুটপাতের গরিব মানুষের সেলফি তোল ।
যে শিশুটি রাস্তার উপর শুয়ে খালি গায়ে শীতে কাতরাচ্ছে,
দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যে বয়োবৃদ্ধ ঘুমাতে পারছে না -তার একটা সেলফি তোল।
তুমি— সেই কৃষকের সেলফি তোলো
যার হস্তযুগলে প্রিয় আদরে পতিত জমি কর্ষিত হয়,  
তুমি— সেই মায়ের সেলফি তোলো
যিনি মাটির ভিতরে বীজ বপনের পর
পরিচ্ছন্ন শস্যের পরিচর্যা করেন দিনের পর দিন


তুমি— সেই মানসিক চাপে থাকা রমনীর সেলফি তোলো
যার স্তনে দুগ্ধ নেই সদ্যভুমিষ্টের মুখে তুলে দেয়ার ।
তুমি— কোনো পাহাড়ের সেলফি তোলো যে সমগ্র পৃথিবীকে দেখার,
আর আকাশ ছোঁয়ার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
তুমি সেলফি তোল সেই কিংবদন্তি ছেলেদের
যারা সংক্রমিত হবার ভয়ে মাকে বনে ফেলে এসেছিল
তুমি সেলফি তোল ডোম ও ব্রাহ্মণ কিংবা মোল্লা- মৌলভীদের
যারা মৃতদেহগুলো সৎকাররের ভয়ে
কবরস্থান, শ্মশান ছেড়ে পালিয়েছিল দুরে কোথাও
সৎকারবিহীন মৃতদেহ পড়ে থাকার সেলফি  তোল
মৃতদেহকে ঘিরে পড়ে থাকা
কাফন- কর্পুর-খাটিয়া- আগরবাতির সেলফি তোল
কিংবা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুল-বেলপাতাগুলির সেলফি তোল
তুমি সেলফি তোল নেতার পদ্ধ্বনিতে চারদিক থেকে জনতার ভিড় জমানোর,
বুড়িগঙ্গা শীতলক্ষা এমনকি সমুদ্রকে মারাত্মক দুষিত করার,
প্রচ্ছন্ন বেকার, কর্মহীন মানুষের ভেতরে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হওয়ার
কর্মহীন পরিবারের নিদারুন বেঁচে থাকার সেলফি তোল
অথবা দিশেহারা মানুষের না খেয়ে থাকার আর্তনাদের সেলফি
ক্ষমতার ভীত কাঁপিয়ে সংসদের দরজা ভেঙে ফেলতে উদ্যত হবার সেলফি
বুভুক্ষু মানুষের ভাতের থালা নিয়ে কামড়াকামড়ি করার সেলফি
তুমি সেলফি তোল যে শিশুর বাবার সামর্থ্য নেই
ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর
ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর হয়ে যে শিশুটি অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে তার
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খাবারের জন্য হাহাকারের সেলফি
ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা- শুকনা চিড়া-মুড়ি খেয়ে দিন পার করাদের সেলফি
মরা তিস্তা জেগে ওঠায় চোখে মুখে নতুন স্বপ্ন দেখা কৃষকের সেলফি ।