সাধারণত এত প্রত্যুষে জাগি না আমি
সাদামাখা কালো ভোর তখনও শোনেনি
কাকের ডাক।
দল বেধে শেফালি তলে আসেনি নিসর্গের
কিশোরীরা । আমার ঘুম ভেঙে যায়।
আমার ঘুম ভেঙে যায় এক দোয়েলের ডাকে
মাথার পাশে বারান্দায় পাড়ার নষ্ট যুবকের
মতো সে শিশ দেয়, আমাকে ডাকে।
আমি চমকে উঠি। আমাকে?
.
তাড়াহুড়া করে চশমা খুঁজতে গিয়ে হাত পড়ে
বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখা বন্দুকের নলে।
আমি আরও সাবধান হই। হয়তো আরও
কিছু দিন এভাবেই কাটাতে হবে।
আমি ফাঁসির আসামির মতো ঘোর নিয়ে
স্নান সারি,
মাথায় চিরুনি করে পরিপাটি হয়ে
চাদরমুরি দিয়ে তার মুখোমুখি হই।
শিহরিত জবার কেশরের মতো
ভোরের বাতাসে আমি তার মুখোমুখি!
অস্বীকার করি না এটিই আমার জীবনে
একমাত্র পরম প্রাপ্তি।
.
আমার সহযোদ্ধারা জানে, আমি এর জন্য
অপেক্ষা করেছি সুদীর্ঘ দুই যুগ।
কৈশোরে ঠিক এমনই স্বপ্নময় ভাবনা ভেবে
রোমাঞ্চিত হয়েছি অনেক।
এমনই একটি সকালের জন্য অনেক নিষ্পাপ
রাতের গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করেছি।
খোদ যৌবনের কণ্ঠনালী ছিঁড়ে নিজেকে
সঁপে দিয়েছি কফিনের মিছিলে ।
ততক্ষণে শিউলি তলে শুরু হয়েছে গুঞ্জন
মসজিদের গলিতে বেড়েছে মুসল্লিদের আনাগোনা।
বারান্দায় আমি তার মুখোমুখি...
একি সত্য নাকি পলক ফেললেই মিলে যাবে সব?
কে জানে!
.
এক সংজ্ঞাহীন স্বপ্ন, শংকা ও উৎকণ্ঠা
আমাকে পেয়ে বসে।
ক্যামেরার লেন্সের মতো আমি তার
দিকে অপলক চেয়ে থাকি, চোখ বুঁজি না।
কত কথা বলার ছিল,
তাকে শুনানোর জন্য মুখস্থ করেছিলাম
নির্মলেন্দু গুণের হুলিয়া কবিতা।
মঞ্চে কতবার আবৃত্তি করেছি,
আজ তার কিছুই মনে আসে না।
স্বপ্নের উপহ্রদে প্রসারিত নিটোল জলের
হিল্লোলে আমি যেন বিবশিত।
এক অলৌকিক আড়ষ্টতা আমাকে আচ্ছন্ন করে।
অকস্মাৎ একটি অনাহূত শব্দ
আমার বুক ভেদ করে, আমি পড়ে যাই।
সে কী ভেবেছে কে জানে, আমাকে জাগায়নি।
বলাকা বিমানের মতো নীরবে উড়ে গেছে।