কোন নম্বরে তোমাকে পাবো? তোমার কোনো ফোন নম্বর আমার জানা নেই। বাধ্য হয়ে চিঠি লিখি। তবে তোমার সাথে যোগাযোগের জন্য যোগ্য মাধ্যম হিসাবে ফোনের চেয়ে চিঠিই আমার অধিক পছন্দ। ফোনে কথার পৃষ্ঠে কথা বলা যায়, এটা ঠিক। কিন্তু কথার তাৎক্ষণিক প্রাণ ও আবেশ থাকলেও কথাপরবর্তী সময়ে উপভোগ করার মতো এর কোনো শরীর থাকে না, ঘামের গন্ধ থাকে না। কিন্তু প্রত্যেক চিঠির শব্দশরীরে সুগন্ধি পুষ্পের মতো পৃথক পৃথক জীবন থাকে, আবেগের সৌরভ থাকে।
.
মিথ্যে বলব না, তোমাকে লেখার ঠিকানাও আমার জানা নেই। তাতে কী? তোমাকে আমি এযাবৎ অনেক চিঠিই লিখেছি। সেসব চিঠির আলাদা আলাদা নামও দিয়েছি। যেমন-কোনো চিঠির নাম হাস্নাহেনা, কোনোটা সন্ধ্যামালতি, কোনোটা দোলনচাঁপা। আবার তোমার এই গেল জন্মদিনে সকালে ঘুম থেকে উঠে তোমাকে লেখা চিঠির নাম ঝুমকোজবা। আমার চিঠিবাগানে তোমাকে লেখা নীলকান্তমণির মতো দামি চিঠিগুলো অভিজাত ডিকেওয়াই ও কেলভিন ক্লেইনের সুগন্ধির ন্যায় অবিকল গন্ধ বিলায়। গ্রন্থের পাতার মতো জীবনের ভাঁজে ভাঁজে বিকশিত এ বাগান প্রাকৃত জাদুঘর হয়ে আমাদের সেকালের সকাল, বিকেল ও সন্ধ্যাগুলো সংরক্ষণ করে। এখনও সেই প্রাগৈতিহাসিক রাতের স্মৃতি ঘোর অন্ধকারেও হীরের মতো আলো ছড়ায়।
.
তুমিহীন চিঠিবাগানের আরাম কেদারায় শুয়ে শুয়ে আমি প্রায়শ একাকী সূর্যস্নান সারি। আর অভ্রনীল খোলা আকাশের নিচে লুকানো ডাকবাক্স খুলে আয়নার ন্যায় একেএকে চিঠিগুলো মেলে ধরি, সুগন্ধ নিই। তোমার জন্য এক নিষিদ্ধ প্রতীক্ষা অবাধ্য অক্সিজেনের মতো অজান্তেই আমার ফুসফুস দখল করে নেয়।