যে পুরুষ আমার চাহনি চেয়েও পায়নি
তাকে জিজ্ঞেস করে দেখো,
কতটা উন্নাসিক অবহেলায়
তার প্রেম আমি অগ্রাহ্য করেছি।


কত শত কামনার ফুল ফুটে ঝরে গেছে।
দূর্ভেদ্য প্রাচীর ভেদ করে সুবাসের বহর নিয়ে আমার উঠোন অব্দি
পৌঁছতে পারেনি।
কত নিবেদন আমি হেলায় দিয়েছি
বিস্মৃতির অতলে
আমার না তাদের নাম মনে পড়ে,
না চেহারা।


তারপর তুমি এলে!
শরতের কাব্য শোনালে শ্রাবনের মোড়কে,
ভালোবেসে নাম দিলে, পাখি!
তোমায় প্রশ্রয় দিয়েছি,
তোমাতেই খুঁজেছি এক চিলতে ঘুমের আশ্রয়।
নিজেকে পাহারা দিতে গিয়ে
ঘুমোইনি কতদিন।
তুমি ঘুমপাড়ানি গানে,
আলিঙ্গনে, চুম্বনে নিয়ে গেলে স্বপ্নের দেশে।
চোখে কালো কাপড় বেঁধে
আমি কস্তুরি হরিণের মতো ছুটলাম
তুমি, তুমি, তুমি
তখন আমার মনে ,শরীরে, উঠানে, চৌকাঠে, গাছের বাকলে কিংবা হাতের তালুতে নরম মেহেদী আদরে
তুমি হয়ে গেলে দুরন্ত কাঠবিড়ালি।  


এত দুষ্টু-মিষ্টি একটা কাঠবিড়ালির প্রেমে
না পড়ে থাকা যায় বলো?
প্রথমে দিলাম তোমায় আমার ডায়েরির চাবি,
তারপর বেড়ে গেল
কত কত অমিমাংসিত দাবি!
তুমি হৃদয় নিলে, মস্তিষ্ক নিলে
নিলে আমার দিন, রাত, খেয়াল, বেখেয়াল,
দেয়াল, প্রাচীর,
নিলে এত দিনের পুষে রাখা সব ব্যক্তিগত আইনের ভীড়।
লুফে নিলে চোখের পলকে আমার আমি'র অবচেতন,
নিয়ে নিলে ধারালো আমিত্ব শামশির।


শরীরে তখন তোমার নামে রক্ত বয়,
শিরকের ভয় ভুলে
দিপারাত্র জপেছি তোমার নাম
মন্ত্রে বশীভূত এলোমেলো কিশোরীর মতো।
তুমি হয়ে গেলে আমার একনায়ক,
নিউরনে নিউরনে অই এক নাম,
একটা একান্ত সংসার।
সানাই বাজেনি কোথাও, হয়নি সাক্ষর।
তবু তোমার নামে লিখলাম জীবনের শেষ অক্ষর।
রক্তকণিকার প্রতি বিন্দুতে
তখন বউ বউ নতুন শাড়ির ঘ্রাণ,
তোমায় ছুঁতে ছুটে যাচ্ছিলাম
ভীষণ আপ্রাণ।


হঠাৎ এক ভোরে নেমে এলো
এক ভয়াবহ বজ্রপাত।
আলোকের তীব্রতায় দেখলাম
ফানুশের সুতো ধরে ঝাঁপ দিয়েছি মহাশূণ্যে।
সেদিন আমার প্রথম মৃত্যু।
এর পর যত দিন গেলো
তুমি ক্রমাগত আমার বুকে শাবল চালিয়ে গেলে!
কিন্তু দাফন হলো না।
রাতের পর রাত ব্যবচ্ছেদ হলো
বলিদান হলো সহস্র অভিমান।
শালিকের বুক চিড়ে কে কবে ময়নাতদন্ত করে বলো?
ময়না ছিলামই না কোনদিন!


আমি প্রতিদিন সারাটাদিন আমাকে মরতে দেখেছি
ঝুলতে দেখেছি সিলিংয়ে,
পুড়তে দেখছি জ্যান্ত চিতায়।
ডুবে গেছি প্যাচপেচে ধ্বসে যাওয়া কবরে।
তুমি ছিলে না।
একটার পর একটা চিঠি,
কত নদী বয়ে গেল দুই চোখ বেয়ে।
ছোঁবার আশায় কতবার হাত বাড়ালাম,
চুমুর অপেক্ষায় প্রতি ধাপে
বাস্তবতা না কি এক ছাইপাশ গোখরো পুষেছ(!)
প্রতিবার ছোবল দিয়ে আমাকে বিষাক্ত বিষাদ দিয়েছে।


অতঃপর যখন আমি জীবন্ত লাশ,
চাইলাম জীবন ভিক্ষে।
কী সুন্দর দাপ্তরিক গাম্ভীর্যে জানিয়ে দিলে
ভিখারিনীর ঝুলিতে তুমি
তোমার একাংশও দান করতে রাজি না।


একরাত সারারাত
আমি আগুনের আঁচে হাত পুড়িয়ে দগ্ধ হয়েছি
আর তুমি ছিলে বেভুল নিদ্রায়।
দেখো, তোমার প্রেমে মরা লাশ
অবশেষে মাটি পেয়েছে।
তোমার গাঁদার বাগানের
শেষ প্রান্তে গভীর কুয়াশায় আমি শায়িত।
জেনে রেখো, প্রতিটি গাঁদার জন্ম হয়
এক একটা অপরাজিতার মৃত্যুতে।