জগৎ বন্দনা
মঈন তাজ


মাঠে ঘাটে কাজ করে বলি তারে কামলা,
কোট টাই পড়ে যায় সরকারি  আমলা।
মেধা দিয়ে কাজ করে ওরা হলো জ্ঞানবান,
সকলের কাছে তাই পায় তাঁরা সম্মান।
সবাই তো কাজ করে ধরনটা ভিন্ন,
শ্রম দিলে আসে তবে শ্রমিকের অন্ন।
যেই ব্যাটা চুরি করে আছে তার বুদ্ধি,  
দূর্নীতি যেই করে নেই তার শুদ্ধি।
সৎ আর সততায় আছে মহা শান্তি,
অসৎ আর অন্যায়ে ফুরায় না ক্লান্তি।
সৎ আর অসৎ এর চলে মহা বাগড়া,
কোনো কালে ফুরাবেনা এই নিয়ে ঝগড়া।
চিরকাল থাকবেই উঁচু নিচু ভেদাভেদ,
এই নিয়ে লাভ নেই করে কোনো মনো খেদ।
সুখ আর দুঃখ, ভালো আর মন্দ,
কোনোদিন ফুরাবেনা এই নিয়ে দন্দ্ব।
লোভ আর লালসায় ডুবে থাকে যেই জন,
চিরদিন কদাকার, কলুষিত তার মন।
অন্যায় অবিচার করবে যে বিচারক,
জীবনে বা মরনে বাড়বে তাহার শোক।


অন্যকে কাঁদিয়ে সুখী হওয়া যায়না,
মানুষের হক মেরে কেউ সুখী হয়না।
পরধন হরণে হও যদি বড়লোক,
এই কথা জেনে রেখো বাড়বে তোমার শোক।
অন্যায় অপরাধে হও যদি লিপ্ত,
কোনোদিন আত্মা হবে নাতো তৃপ্ত।
মন থেকে মানুষকে করো যদি সম্মান,
জেনে রেখো মহা প্রভু বাড়াবে তোমার মান।
আত্মার তৃপ্তি তুমি যদি পেতে চাও,
মানুষকে ভালোবেসো অন্যায় ছেড়ে দাও।
কাজ করে যদি খাও নেই তাতে লজ্জা,
মানুষকে ঠকিয়ে করো নাকো সজ্জা।
কাজ করে যদি খাও ছোট কিবা বড় হোক,
বাঁকা চোখে কোনদিন দেখবেনা কোনো লোক।
অন্যায় কেসে যদি করো তুমি ওকালতি,
নিশ্চয় জেনে রেখো চলে গেছে সৎ মতি।
লাভ নেই লাভ নেই মানুষকে ফাঁসিয়ে,
নিপিড়ীত আঁখি জল নিয়ে যাবে ভাসিয়ে।
অবিচার করো যদি ক্ষমতার দাপটে,
একদিন রহিবে না কেউ তব সাপোর্টে।


অর্থের গরমে করো যদি অহমিকা,
জেনে রেখো সাদা থানে সব কিছু হবে ফিকা।
ইতিহাস পড়ে দেখো ছিলো যত জমিদারি,
হয়েছে বিলিন তারা নেই আর দাদাগিরি।
জেনে রেখো সব কিছু সময়ের হেরফের,
নশ্বর দুনিয়ায় নয় কিছু গর্বের।
কেউ যদি হাত পাতে আসে কভু তব দ্বারে।
গালি দিয়ে দ্বার দিয়ে ফিরাইও না কভু তারে।
অর্থের প্রাচুর্যে হইও নাকো অন্ধ,
দয়ার দরদী দ্বার করো নাকো বন্ধ।
পেট পুরে খেতে পাও ভাগ্য সুপ্রসন্ন,
যার পেটে ভাত নাই দাও তারে অন্ন।
ভাঙা ঘর ছেঁড়া থালা নেই যার সম্বল,
শীতে কাঁপে অসহায় তারে দাও কম্বল।
নামধারী জননেতা হইও নাকো লেবাসে,
মানব দরদী  হও ছড়াবে তা বাতাসে।


মারপিট করে যদি তারে বলি হামলা,
কোর্টে গিয়ে অভিযোগ বলি তারে মামলা।
কলমের খোঁচা মেরে করে কেউ  ইনকাম,
সারাদিন খেটেখুটে যায় কারো দেহ ঘাম।
সারাদিন শ্রম দিয়ে পায় টাকা অল্প,
এই হলো শ্রমিকের জীবনের গল্প।
ভাগ্যের ডালা নিয়ে এলো কেউ জগতে,
দুর্ভাগা হয়ে কেউ ঘুরে শুধু রাজ পথে।
কেউ যদি শ্রম দিয়ে ভাগ্যটা বদলায়,
জগতের শয়তান তার পিছে লেগে যায়।
কারো আছে মামা খালু ভাগ্য প্রসন্ন,
দুনিয়ায় চিরকাল তারা হলো ধন্য।
নাই যার কোনো কিছু সেই হোলো নিঃস্ব,
তারে শুধু লাথি ঝাঁটা মারে সারা বিশ্ব।
জগতের খেলা চলে নিয়ে শুধু স্বার্থ,
কেউ পায় সফলতা কেউ হয় ব্যর্থ।
কারো সব চেষ্টা চলে যায় বিফলে,
জীবনের সফলতা চাই তবু সকলে।
চিরদিন মনে তার থেকে যায় খটকা,
নিয়মের বেড়া জালে থাকে যারা আটকা।
আইনের মারপ্যাচে থেকো সদা সাবধান,
টাকা দিলে সব কিছু হয়ে যায় সমাধান।
অজ্ঞাত মামলায় নির্দোষ লোক বাঁধি,
আইনের ফাঁক গলে বের হয় অপরাধী।


কভু কেউ নিওনাকো মিথ্যার আশ্রয়,
মিথ্যা যে মহাপাপ জেনে রেখো নিশ্চয়।
মরে যাবো নিশ্চিত থাকবেনা এই প্রাণ,
সকলেই পাবে জানি কর্মের প্রতিদান।
যারা ছিলো বিশ্বাসী তাঁরা পাবে মুক্তি,
সেই দিন চলবেনা কারো খোঁড়া যুক্তি।
ভেবে দেখো এইবার কোন্ পথে যেতে হবে?
কোন্ পথে গেলে পারে মুক্তির দিশা পাবে।
জেনে বুঝে কখনোই করো নাকো পাপ কাজ,
লাঞ্ছিত হতে হবে জেনে রেখো এই আজ।
দুনিয়া বা আখেরাতে পাবে তুমি এর সাজা,
পৃথিবীতে নামধারী যত বড় হও রাজা।
মন থেকে মুছে দাও হিংসার দাবানল,
কারো প্রতি রইবেনা আগ্রাসী রোষানল।
কলমের খোঁচা মেরে করে যারা চুরি ধারী,
মানুষের কাছে তারা চিরকাল অবিচারী।
যুগে যুগে করে যারা অন্যায় যুদ্ধ,
পৃথিবীকে তারা কভু করে নাকো শুদ্ধ।
কলুষিত করে তারা সমস্ত দুনিয়া,
হিংসা ও বিদ্বেষ যায় তারা বুনিয়া।


শান্তি ও সৌহার্দ্য করে তারা ছারখার,
অকারণে করে যারা রক্তের কারবার।
দুনিয়াতে করে যারা অশান্তি সৃষ্টি,
তার পানে খোদা তায়ালা দেবে নাকো দৃষ্টি।
শ্রম আর সাধনা হয়ে যাবে পন্ড,
সঙ্গীর দোষে যদি হয়ে যাও ভন্ড।
জীবনের তৃপ্তি যদি তুমি পেতে চাও,
সুদ ঘুষ ভ্যবিচার সব কিছু ছেড়ে দাও।
মাঝে মাঝে করো বসে আত্মার আলোচনা,
থাকবেনা মনে তবে গীবতের বন্দনা।
ইবাদাত হলো ভাই আত্মার খাদ্য,
ইবাদাতে পাবে তুমি তৃপ্তির বাদ্য।
আত্মাকে যদি দাও প্রতিদিন পুষ্টি,
নিশ্চয় পাবে তুমি জীবনের তুষ্টি।
ফুলে ফলে ভরে যাবে ছাড়াবে তা সৌরভ,
ইহকালে পরকালে হবে মহা গৌরব।
জগতের বন্দনা কত আমি করি আর,
মায়াজালে মোড়া ভাই মিছে এই সংসার
আমি শুধু এই কথা কবিতায় বলে যায়,
জীবনকে কভু কেউ দিওনাকো গোল্লায়।


যশোর
৩১/০৭/২১